মাহমুদুল হক বাহাদুর, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ নম্বর পার্বত্য বান্দরবান আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে জেলার রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যেই সংগঠনে গতিশীলতা বৃদ্ধি শুরু করেছে।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর বান্দরবান আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণার পর অ্যাডভোকেট আবুল কালাম সামাজিক, সেবামূলক, শিক্ষা, অবকাঠামো এবং দুর্যোগে সহায়তাসহ নানামুখী কর্মকা-ের মাধ্যমে মাঠে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকে তিনি জেলার সাতটি উপজেলা বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও দুইটি পৌরসভাসহ পুরো জেলায় গণসংযোগ ও বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
অ্যাডভোকেট আবুল কালাম সংসদ নির্বাচনে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তিনি বান্দরবান জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি ও জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে তিনি বান্দরবান জনগণের কাছে একজন সজ্জন ও জনকল্যাণমুখী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
তিনি বলেন, “আমি নেতা হতে চাই না, সেবক হতে চাই। পাহাড়ি ও বাঙালি মানুষের সুখে দুখের সারথী হতে চাই। পাহাড়ে বসবাসরত সকল সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ই আমার লক্ষ্য। জনগণ সুযোগ দিলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পানীয় জল, পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করব।”
অন্যান্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি
বিএনপির জেলা আহ্বায়ক সাসিং প্রু ও সদস্য সচিব জাবেদ রেজার নেতৃত্বে বিএনপির দুটি গ্রুপ ভিন্ন অবস্থান নিচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পরও দুই পক্ষ এক মঞ্চে কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারেনি।
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন: জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে ইসলামী দলগুলোর নির্বাচনী জোট চূড়ান্ত হলে জামায়াত মনোনীত আবুল কালামকেই চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে রাখা হতে পারে।
গণসংহতি আন্দোলন: প্রভাষক রিপন চক্রবর্তী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন। তিনি বান্দরবানের মানুষের অধিকার, ভূমি সমস্যা সমাধান এবং শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে কাজ করতে চান।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি): জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক খালেদ মোশাররফ মাসুদ প্রার্থী। নতুন দল হওয়ায় এখনও পুরো জেলায় যথেষ্ট সক্রিয় নয়।
জেএসএস: কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক কেএস মং নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বান্দরবান জেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি উপজেলায় মোট ভোটার ৩,০৭,৯৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৫৮,১৬৭ ও মহিলা ১,৪৯,৭৮৬ জন।
উপজেলা ভিত্তিক ভোটার সংখ্যা:
বান্দরবান সদর: পুরুষ ৩৭,৭৫৬, মহিলা ৩৪,৪০০।
রোয়াংছড়ি: পুরুষ ১১,৪১০, মহিলা ১১,০৭৬।
রুমা: পুরুষ ১১,৯১৮, মহিলা ১১,২৭০।
থানচি: পুরুষ ৯,৭৯২, মহিলা ৮,৯৮৪।
লামা: পুরুষ ৪৫,৩৪৯, মহিলা ৪২,৪৭১।
আলীকদম: পুরুষ ১৮,০৩৬, মহিলা ১৭,৬৩৯।
নাইক্ষ্যংছড়ি: পুরুষ ২৩,৯০৬, মহিলা ২৩,৯৪৬।
জেলায় মোট ১৮৩টি ভোট কেন্দ্র এবং ৭১৫টি ভোট কক্ষ রয়েছে, যার মধ্যে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ।
নির্বাচনী বিশ্লেষণ
বান্দরবান আসনের নির্বাচনী সমীকরণ সহজ নয়। এখানে ১১টি পাহাড়ি ও ৩টি বাঙালি জনগোষ্ঠীর ভোট নির্ভর করছে আঞ্চলিক নেতাদের ও স্থানীয় সংগঠনগুলোর প্রভাবের ওপর।
মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াতের আবুল কালাম ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে, তবে বিএনপির বিভাজনের কারণে জামায়াতের প্রার্থী সুবিধা পেতে পারেন। উপজাতি প্রার্থীর থাকার ফলে পাহাড়ি ভোট আংশিকভাবে ভাগ হতে পারে, তবে জামায়াতের শক্তিশালী ভোট ব্যাংক নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। অন্যান্য ছোট প্রার্থী ও দলগুলো যেমন এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসএস এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, তাদের প্রভাব সীমিত থাকায়, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেন্দ্রীভূত থাকবে জামায়াত এবং বিএনপি মধ্যে।
সমস্ত প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে, বান্দরবান-৩০০ আসন একটি উত্তপ্ত, জটিল ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী কেন্দ্র হিসেবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।