জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো তাড়া আছে জুলাই সনদ স্বাক্ষরে। এই তাড়ার ভিত্তিতে সবার অংশগ্রহণের বিষয়ে চিন্তা না করে সনদ স্বাক্ষর হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই সনদ ঘোষণার দিনে প্রশাসনকে ব্যবহার করে শহীদ পরিবারের সদস্য ও জুলাই যোদ্ধাদের পেটানো, আঘাত ও রক্তাক্ত করা হয়েছে, এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য লজ্জার। কাজটি করা হয়েছে শুধুমাত্র কয়েকটা স্বাক্ষরের জন্য। সেদিনের অপ্রত্যাশিত ঘটনার দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও আয়োজকরা এড়াতে পারে না।
রোববার দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমিতে এনসিপি দিনাজপুর জেলা শাখার সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। দিনাজপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী ফয়সল করিম সোহেবের সভাপতিত্বে সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ডা. আব্দুর আহাদসহ দিনাজপুরের ১৩ উপজেলার এনসিপি নেতা-কর্মীরা।
সারজিস আলম বলেন, যে নির্বাচন কমিশন একটা রাজনৈতিক দলকে তাদের প্রাপ্য মার্কাটা দেওয়ার সৎ সাহস দেখাতে পারে না- তাদের অধীনে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে হতে পারে না। শাপলা প্রতীক নিয়েই এনসিপি নির্বাচন করবে, আর এটাতে অন্যায় করা হলে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের শাপলা প্রতীকের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে দেখাক যে, কোন আইনের ভিত্তিতে শাপলা প্রতীক একটি রাজনৈতিক দলকে বা এনসিপিকে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। আমাদের যারা আইনজ্ঞ আছেন, আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন, আইন পড়ান বা তৈরি করেন- এমন মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে কোনও বাধা নেই বলে তারা জানিয়েছেন। এই ভিত্তি থেকে আমরা শাপলা প্রতীক চেয়েছি। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, আজকে উনি এই কথা কোন মুখে বলেন। শাপলা প্রতীক তো আমরা আজকে আবেদন করিনি। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যেদিন নিবন্ধন করেছিলাম, সেদিনই শাপলা প্রতীক চেয়েছিলাম। তাহলে বিগত কয়েক মাসে এটা তিনি কেন মার্কার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেননি।
এক প্রশ্নের এনসিপির নেতা সারজিস বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল রাস্তাঘাটে নেমে হাহাকার করতো, কর্মসূচি দিয়ে হাহাকার করতো। অনেক অফিসের সামনে ১০ জন লোক দাঁড়ানোর মতো ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জনগণ তখনই রাস্তায় নেমেছে, যাদের ওপর জনগণ আস্তা রেখেছে। এখন যদি সেই আস্থার প্রতিদান কেউ, কোনো ব্যক্তি, কোনো রাজনৈতিক দল না দেয়- জনগণ তাদের মতো করে আগামীতে যখন সুযোগ হবে এর প্রতিফলন দেখাবে। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলি, আপনারা ইতিহাস থেকে দয়া করে শিক্ষা নেন। জুলাই সনদ আপনারাও চান, আমরাও চাই। আপনারা যদি জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো নামকাওয়াস্তে একটা পেপার চান- আমরা নামমাত্র জুলাই ঘোষনাপত্র চাই না বরং জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চাই। আমরা সরকারের কাছে নিশ্চয়তা চেয়েছি, এখানে যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে রেখেছে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে। আমরা মনে করি, ওই গুরুত্বপূর্ণ ৭টি বিষয় ৭০টি অন্য সংস্কারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওই জায়গাটায় পলিসি কী হবে? যদি সনদটা গণভোটে পাস হয় তাহলে ওই জায়গা থেকে ওই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো হবে কি না এই ক্লিয়ারেন্স অন্তর্বর্তী সরকারকে দিতে হবে। যদি হয়, আমাদের তো স্বাক্ষর করতে সমস্যা নাই। আমরা কেন সনদে স্বাক্ষরে বাধা হয়ে দাঁড়াবো? কিন্তু আপনারা স্পষ্ট দেখেছেন, আমরা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছি, এই ক্লিয়ারেন্সগুলো যদি দেওয়া হয় তাহলে এনসিপির জুলাই সনদ স্বাক্ষরে কোনও বাধা থাকবে না।