দড়জায় কড়া নাড়ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এ নির্বাচন ঘিরে মানুষের মধ্যে একটু ভিন্নরকম আগ্রহ কাজ করছে। এবারের নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ বেশি। এরই মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে ২৪ ঘন্টা যেতে না যেতেই গতকাল মঙ্গলবার মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে দলীয় প্রার্থী কামাল জামান মোল্লারর প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়েছে। অনিবার্য কারণে ওই আসনে তার প্রার্থিতা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি। নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি দলটির পক্ষ থেকে। এছাড়া প্রার্থী ঘোষনার পরপরই এক পক্ষ বিজয় মিছিল করছে, আর বঞ্চিতরা বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ করছে। দেশের বেশ কিছু স্থানে এ ধরনের গটনা ঘটেছে।

প্রার্থীতা নিয়ে রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, পুরনোদের উপরই আস্থা বেশি বিএনপির। যাদের ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই প্রবীণ। যেভাবে তারুণ্য নির্ভর ও ত্যাগীদের কথা শোনা গিয়েছিল, প্রার্থীতা ঘোষণায় তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যারা মাইনাস টু ফর্মুলা ও বিএনপিকে ভাঙ্গার সাথে সরাসরি জড়িত। এনিয়েও তৃণমুলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে কয়েক মাস ধরে কাজ করে বিএনপি। এজন্য তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে তিনশ আসনে অন্তত পাঁচটি মাঠ জরিপ চালানো হয়। এরপর তিনি সাংগঠনিক টিমেরও মতামত নেন। যেখানে গ্রুপিং বা সংকট বেশি মনে হয়েছে, সেখানে নিজে অথবা স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করার চেষ্টা করেন। সর্বশেষ গত ২৬ ও ২৭ অক্টোবর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সারা দেশে তিনশ আসনের এক হাজারের অধিক সম্ভাব্য প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এসব বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন। যাকে দল মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান।

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৬৩টি আসন ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। এর মধ্যে রাজধানীর প্রবেশদ্বার খ্যাত ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনের কোনো প্রার্থীর নাম নেই। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, নাম ঘোষণা না করা আসনগুলো মিত্র দলগুলোর জন্য রাখা হতে পারে। যদিও এখনো মনোনয়নের আশা ছাড়েননি বিএনপির নেতারা। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।

ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় নেই অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম। তালিকায় স্থান পাননি দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বিএনপির সক্রিয় নেতা রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সদর) আসন থেকে মনোনয়নের আশায় ছিলেন কনকচাঁপা। কিন্তু সোমবার ঘোষিত তালিকায় তার নাম আসেনি। ওই আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা আপাতত স্থগিত রেখেছে দল। প্রতিক্রিয়ায় নিজের ফেসবুকে তিনি লেখেন, এই পৃথিবীর কোনো ফায়সালাতেই আমি কিছু ভাবি না। আল্লাহ ভালো বুঝবেন আমার জন্য কী ভালো হবে। তার চেয়ে ভালো বোঝে এমন কে আছেন এই জগতে! অতএব, আলহামদুলিল্লাহ। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন কনকচাঁপা।

প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় নেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং বেগম সেলিমা রহমানের নাম। তালিকায় নেই ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জমান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপনও। নেই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল, সদ্য মনোনীত যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবীরের নামও। নেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমিনুর রশীদ ইয়াসিনের নাম। বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনায় ছিলেন একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য রুমিন ফারহানার নাম। তবে মনোনয়ন তালিকায় এবার তার নাম দেখা যায়নি। ঢাকা ১০ আসন থেকে বিগত সময়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম। এই আসনে একবার প্রার্থী হয়েছিলেন আরেক নেতা রবিউল ইসলাম রবি। তাদের দুই জনের নামও নেই ঘোষিত তালিকায়। মাগুরার একটি আসন থেকে এবার দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন আলোচিত নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। তবে তিনিও বাদ পড়েছেন এই তালিকা থেকে।

মনোনয়ন না পাওয়া প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা বলেন, ৬৩ আসন ‘উইথ হোল্ড’ আছে। আমারটাও ‘অন হোল্ডই’ আছে। দল ‘উইনেবল’ প্রার্থী খুঁজে দেখছে, সেই বিবেচনায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিক্ষোভ সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের এই আবেগকে সম্মান করতে হবে। এই নেতাকর্মীদের জন্যই একেকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নাম্বার, দুই নাম্বার, তিন নাম্বারে চলে আসেন। এত নেতাকর্মীর ভালোবাসা, নেতাকর্মীদের ত্যাগ, নেতাকর্মীদের শ্রম, নেতাকর্মীদের ঘামেই কিন্তু আমরা এত দূর আসি যে আমরা মনোনয়নটা প্রত্যাশা করতে পারি। সুতরাং তাদের তো নিশ্চয়ই মনটা খারাপ হবে। সেটাও আমাদের সম্মান করতে হবে। নারী প্রার্থীর সংখ্যা নিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, যদি বিএনপি নারী মনোনয়ন ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে রাজি হয়, তাহলে চূড়ান্ত তালিকায় আরো নারী যুক্ত হওয়া সম্ভব।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যে ৬৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি, এর একটা বড় অংশ মিত্র দল ও জোটগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা জানিয়েছেন, মিত্র দলগুলোর বাইরেও জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি এবং ইসলামপন্থী কিছু দলের সঙ্গে তাদের আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে আলোচনা চলছে। এসব দলের জন্য আসন আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে বিএনপিকে। এছাড়াও অনেক আসনে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকজন করে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এবং এসব এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও মীমাংসা করা যাচ্ছে না। এসব কারণে ওই আসনগুলো খালি রাখা হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক জানিয়েছেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা। এর মধ্যে সোমবার সন্ধার পর মাদারীপুর শিবচরের ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেছেন সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলুর কর্মী-সমর্থকরা। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে। মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শুনেছি আমার সমর্থকরা বিক্ষোভ করছেন। আমি শহরের বাইরে আছি। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তার বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। কুমিল্লা-৬ (সদর, সদর দক্ষিণ ও সিটি করপোরেশন) আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দল। এই আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে প্রার্থী না করায় তার সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছে। মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে দলের একাংশের নেতাকর্মীরা। রাত ৮টায় গাংনী উপজেলা শহরে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদের অনুসারীরা। প্রার্থী হিসেবে এ আসনে আমজাদ হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

মাগুরা-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। এই আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নকে প্রার্থী না করায় দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। সোমবার রাত ১০টার দিকে তারা মাগুরা-যশোর মহাসড়কের আড়পাড়া এলাকায় বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে সড়কে বিক্ষোভ করে। সাতক্ষীরা-২ আসনে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রউফকে বিএনপি মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে ও ত্যাগী নেতা আব্দুল আলিমকে মনোনয়নের দাবিতে সাতক্ষীরায় মশাল মিছিল করেছে বিএনপির একাংশ। একইভাবে সাতক্ষীরা-৩ আসনে গরীবের বন্ধু নামে পরিচিত ডা. শহিদুল আলমকে বিএনপি মনোনয়ন না দিয়ে সাবেক সাংসদ কাজী আলাউদ্দীনকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে কালিগজ্ঞে বিএনপির একাংশ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন না পাওয়ায় ঢাকাগামী আন্তঃনগর হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মনোনয়ন বঞ্চিত আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের সমর্থকরা।

লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনের মধ্যে দুইটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। এদুটি আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন বিথীকা বিনতে হোসাইন, যিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্ত্রী। আরেকজন দলের সহ শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজাম। এর আগেও তিনি এই আসনের দুবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। প্রার্থী ঘোষণার পর আশরাফ উদ্দিন নিজানের নাম প্রার্থী তালিকায় না থাকায় রামগতি-কমলনগরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে যদি এই আসনে আশরাফ উদ্দিন নিজামকে মনোনয়ন নাও দেয়, তা-ও তিনি এই আসনে লড়বেন। ইতোমধ্যে তিনি মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। এ বিষয়ে আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন, একচ্যুয়ালি এ বিষয়ে আমার দল আমাকেই নির্বাচন করার জন্য মনস্থির করে রেখেছে।

সূত্র মতে, প্রার্থী ঘোষণার আগে বিএনপির পক্ষ থেকে নারীদের অগ্রাধকার ও নবীন-প্রবীনের সমন্বয়ে এবার মনোনয়ন দেয়া হবে। কিন্তু নির্বাচনের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে নবীন ও নারীদের সংখ্যা হাতেগোনা। মূলত প্রবীণেই আস্থা রেখেছে দলটি। ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে ১১৪ জনই নতুন। যদিও তাদের অনেকেই পারিবারিক রাজনীতি থেকে এসেছেন।

সূত্র মতে, নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী হিসেবে শতাধিক আসনে তরুণরা দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রার্থী করার ক্ষেত্রে দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তরুণদের মূল্যায়নের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘোষিত তালিকায় তার তেমন প্রতিফলন দেখা যায়নি। তরুণদের মধ্য থেকে মাত্র ১৩ জনকে বেছে নিয়েছে বিএনপি। তাদের মধ্যে যশোর-৬ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। বরিশাল-৪ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ভোলা-৪ আসনে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ফরিদপুর-৪ আসনে কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, গোপালগঞ্জ-১ আসনে সেলিমুজ্জামান সেলিম, চট্টগ্রাম-৫ আসনে মীর হেলাল, চট্টগ্রাম-৭ আসনে প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ঢাকা-৪ আসনে তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা-৬ আসনে ইশরাক হোসেন, ঢাকা-১৬ আসনে আমিনুল হক, নওগাঁ-৩ আসনে ফজলে হুদা বাবুল, কুষ্টিয়া-২ আসনে রাগীব রউফ চৌধুরী ও কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে শরীফুল আলম। নারী প্রার্থী মাত্র ১০ জন। এরা হলেন দলের চেযারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টু (ঝালকাঠি-২), সানজিদা ইসলাম তুলি (ঢাকা-১৪), শামা ওবায়েদ (ফরিদপুর-২), নায়াবা ইউসূফ আহমেদ (ফরিদপুর-৩), ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা (সিলেট-২), আফরোজা খান রিতা (মানিকগঞ্জ-৩), ফারজানা শারমিন (নাটোর-১), সানসিলা জেবরিন (শেরপুর-১) ও সাবিরা সুলতানা (যশোর-২)।

ঘোষিত তালিকায় দেখা গেছে, দলের জ্যেষ্ঠ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় অংশই প্রার্থী হচ্ছেন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। তারেক রহমান প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বগুড়া-৬ আসন থেকে। অন্যদিকে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল প্রার্থী হবেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৪ সদস্যের মধ্যে আরও ৯ জন প্রার্থী হচ্ছেন। দলের ২১ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে প্রার্থী হচ্ছেন সাতজন। চেয়ারপার্সনের ৮১ জন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে দলের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন ২২ জন।

এদিকে প্রথমবারে মনোনয়ন পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ফরিদপুর-৪ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের শহিদুল ইসলাম খান বাবুল। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির অনেক সিনিয়র পরিশিলীত নেতা, সহযোদ্ধা ও ছোট ভাই রয়েছেন। সবাইকে অনুরোধ করব, দেশের এ সংকটকালে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মনোনয়নকে কেন্দ্র করে উৎসাহী হয়ে কেউ আনন্দ মিছিল করবেন না। আবেগ, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করবেন না। মিষ্টি বিতরণ করবেন না। এটা বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ঢাকা-৬ আসন থেকে বিএনপির হয়ে জাতীয় নির্বাচনে লড়বেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। ঢাকা-৬ আসন থেকে আমাকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য। তিনি লেখেন, পুরান ঢাকায় ধানের শীষের জোয়ার সৃষ্টি করে এই আসনটি দলকে উপহার দেওয়া এবং যেখানে প্রয়োজন বিএনপির অন্যান্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে তাদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে প্রার্থী হিসেবে রাখা দলটির একটি ‘নির্বাচনি কৌশল’ এবং তাদের ধারণা নির্বাচনে জিতলে সরকার গঠনের বিষয়টিতে তারেক রহমানই নেতৃত্ব দিবেন। এছাড়া দলের মধ্যে কোন্দল ঠেকাতে তরুনদের পরিবর্তে পুরনোদের প্রাধাণ্য দেয়া হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে যেভাবে নারী, তরুণ ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছিল, ঘোষিত তালিকায় তার প্রতিফলন ঘটেনি। তারা বলছেন, পুরোনো অনেকেই রয়েছেন, যারা ওয়ান ইলভেনের সময় দলের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে বলেও তারা মনে করেন।