পাথর লুটপাটের ঘটনায় নেতৃবৃন্দকে জড়ানো জামায়াতে ইসলামী ও নেতৃবৃন্দের চরিত্র হরণের ষড়যন্ত্রের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। অতীতেও জামায়াতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নস্যাত হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রও নস্যাত হবে। পাথর লুটে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে নিয়ে অপপ্রচার চলছে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট জেলা ও মহানগর জামায়াত নেতৃবৃন্দ। পাথর লুট দুরে থাক কোন অন্যায় ও অপকর্মের সাথে জামায়াতের দুরতম কোন সম্পর্ক নেই বলেও জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত কথা বলেন। জেলা ও মহানগর জামায়াতের যৌথ উদ্যোগে নগরীর বন্দরবাজার কুদরত উল্লাহ মার্কেটস্থ মহানগর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট অঞ্চল টীম সদস্য হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, জেলা সেক্রেটারী মোঃ জয়নাল আবেদীন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারী জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও জেলা সহকারী সেক্রেটারী নজরুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে মহানগর আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সবুজ ভূখন্ডে ইনসাফভিত্তিক একটি মানবিক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আর্তমানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। মানবতার কল্যাণ সাধন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই জামায়াতের মূল লক্ষ্য। কোন অন্যায় ও অপকর্মের সাথে জামায়াতের কোন সম্পর্ক নেই। বরং সবধরণের লুটপাট, অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে জামায়াত সবসময় স্বোচ্চার ভুমিকা পালন করে আসছে। সম্প্রতি সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট সাদাপাথরসহ বিভিন্ন স্পট থেকে পাথর লুটপাটের বিরুদ্ধে জামায়াত জোরালো ভুমিকা পালন করে আসছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই পাথর লুটের সাথে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে জড়িয়ে চরিত্র হরণের অপচেষ্টা চলছে। পাথর লুটের ব্যাপারে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরতেই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। কষ্ট করে উপস্থিত হওয়ায় সবাইকে মুবারকবাদ জানান তিনি।
মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করছি, সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে দুদকের বরাত দিয়ে সাদাপাথর লুটের সাথে আমার (সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম) ও জেলা সেক্রেটারী মোঃ জয়নাল আবেদীনের নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হয়েছে। ঐ দৈনিকের কাল্পনিক রিপোর্টটি বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় অনলাইন পত্রিকা কপি পেষ্ট করে প্রচারের ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি ও নিন্দা জানাচ্ছি। পাথর লুটের সাথে জামায়াত নেতৃবৃন্দ দুরে থাক সাধারণ কোন কর্মী-সমর্থকেরও ন্যুনতম কোন সম্পর্ক নেই। সরকারী ব্যবস্থাপনায় ও বৈধ পন্থায় পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবীতে সিলেটের পরিবহন মালিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের একটি কর্মসূচীতে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে জামায়াত নেতারাও বক্তব্য রাখেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ঐ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক রিপোর্ট প্রকাশ ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ ঐ বক্তব্যের সাথে পাথর লুটের দুরতম কোন সম্পর্ক নেই। ইতোমধ্যে এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সিলেট জামায়াতের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। যা বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। ঐ বিবৃতিতে লুটপাটে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সিলেট তথা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া ঐ মিথ্যা রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর জামায়াতের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে মহানগর জামায়াত আমীর বলেন, দুদকের বরাতে প্রকাশিত একটি দৈনিকের সংবাদে আমাকে এবং জেলা জামাায়ত সেক্রেটারী জয়নাল আবেদীনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হয়েছে। দুদকের রিপোর্টে জামায়াত নেতাদের নাম আছে এর কোন সত্যতা কোন গণমাধ্যম পায়নি, কেবল ঐ পত্রিকাটিই পেয়েছে। এর আগে পাথর লুটকারীদের নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গোয়েন্দা রিপোর্টের বরাত দিয়ে এবং অনুসন্ধানী একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এসব সংবাদে কোথায়ও জামায়াতের কোন নেতাকর্মীর নাম পাওয়া যায়নি। শুধু একটি দৈনিকের ঐ ফরমায়েসী রিপোর্টে জামায়াত নেতাদের নাম জড়ানোর ঘটনায় আমরা বিস্মিত। যা পাথর চুরিতে জড়িত প্রকৃত আসামীদের আড়ালের অপচেষ্টা ও একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমরা মনে করি। এই ধরণের কাল্পনিক ভুয়া সংবাদের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই ধরণের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে পাথর লুটে জড়িত প্রকৃত আসামীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি। একইসাথে কোন নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে অযথা হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে সক্রিয় সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান তিনি।
মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, দুদক আদৌ এই ধরণের কোন রিপোর্ট দিয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে আমরা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে যে তালিকার বরাত দিয়ে সমকাল রির্পোট করেছে তার কোনো অস্তিত্ব আমরা দুদকে খুঁেজ পাইনি। ইহা সম্পুর্ণ বিভ্রান্তিমুলক বলে আমরা মনে করি। এছাড়া দুদক যদি তাদের রিপোর্টে জামায়াত নেতাদের নাম উল্লেখ করে থাকে তাহলে অবশ্যই দুদককে এর প্রমাণ দিতে হবে। অন্যথায় অপপ্রচারের জন্য দুদক ও কাল্পনিক ভুয়া রিপোর্ট প্রকাশকারী গণমাধ্যমসমূহকে জাতির নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। এ ব্যাপারে জামায়াত এক বিন্দু ছাড় দিবেনা। আদর্শিক মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে অতীতেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং অপপ্রচার চালানো হয়েছে। ইতিহাস স্বাক্ষী সকল ষড়যন্ত্র নস্যাত হয়েছে। এবারও পাথর লুটে জামায়াতকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এটাও ব্যর্থ হবে। ইনশাআল্লাহ। গণমাধ্যম বরাবরই প্রকৃত সত্য উদঘাটনে জাতির দর্পন হিসেবে বলিষ্ট ভুমিকা পালন করেছে। এবারও এই পাথর কাণ্ডে প্রকৃত সত্য উদঘাটনে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করবে বলে আমরা আশাবাদী।