আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে শাহবাগ আপনারা বন্ধ করেছেন, এখানে মিছিল–মিটিং করা যাবে না, সেখানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের দল এনসিপির লোকেরা মিছিল মিটিং করে কীভাবে? শাহবাগে হঠাৎ করে এ নাটক কেন? গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি একথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ এ সভার আয়োজন করে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা লক্ষ করেছি, এই দেশে অনেক বিদেশীর আগমন ঘটেছে, সন্দেহভাজন বিদেশীদের আগমন ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন মিশন নিয়ে আসতেছে। আজকে ফেসবুকে আপনারা সার্চ দিলে পাবেন এক ভদ্রলোক বলছিলেন, এখন বলতে পারছি না। তবে আমার ধারণা এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই অপকর্মগুলো করছে। এই মুহূর্তে আমি এই সরকারকে অন্তত নিরপেক্ষ ভাবতে পারছি না। তারা কোন উদ্দেশ্যে কার পারপাস সার্ভ করছে। এই সরকার কোনো অবস্থাতেই গণবান্ধব কিংবা দেশপ্রেমিক সরকার নয়, আমি পরিষ্কার ভাষায় এটা বলতে চাই। আমার দেশ, দেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেনো?

মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকারকে প্রমাণ করতে হবে তারা দেশপ্রেমিক সরকার আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়ে। আমার প্রশ্নগুলোর সঠিক জবাব পাওয়ার পরে আমাকে যে শাস্তি যেখান থেকে দেয়া হয় সেটা আমি মাথা পেতে নেবো। এখন কিন্তু আমরা খুব ভালো অবস্থানে নাই।

পিন্টুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মির্জা আব্বাস বলেন, পিন্টুকে যেভাবে স্মরণ করা হচ্ছে, এটা আমার জন্য, আমার দলের জন্য, সবার জন্য একটা লজ্জাজনক ব্যাপার। এই পিন্টু এবং এই পিন্টুদের কার্যক্রমের জন্যই আজকে বিএনপির এই অবস্থানে এসেছে। বিএনপি একদিনেই আকাশ থেকে নামে নাই কিংবা একদিনেই বড় হয়ে যায়নি। তিলে তিলে এই বিএনপি বড় হয়েছে। কারাগারে নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে হত্যা করা হযেছে উল্লেখ তার বিচার দাবি করেন মির্জা আব্বাস।

দেশে সার্কাস হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি রাজনৈতিক অবস্থানে, আমরা কয়েকদিন যাবৎ দেখতে পারছি, বাংলাদেশে একটা সার্কাস জাতীয় কিছু একটা হচ্ছে। নাটক জাতীয় কিছু একটা হচ্ছে, আমার কাছে মনে হচ্ছে। আমি আবার কথাগুলো আটকিয়ে রাখতে পারি না, আমার একটা বাজে অভ্যাস।

আগে আমরা দেখতাম যে, শেখ হাসিনা কিছু করার আগে কোথাও একটা অপকর্ম ঘটাতো আমরা বুঝতাম সে কিছু একটা ঘটাবে। একদিকে আমাদের দৃষ্টি নিয়ে যেতো আর কাজ এদিক দিয়ে করতো। এখন সেরকমই হচ্ছে।

মির্জা আব্বাস বলেন, দেখেন আবদুল হামিদ চলে গেলেন কি সুন্দর। হামিদ সাহেব কোন দিক দিয়ে চলে গেলেন? ভিআইপি দিয়ে।পত্র-পত্র্রিকায় দেখলাম উনি নাকি গেঞ্জি পড়ে, লুঙ্গি পড়ে, মাস্ক লাগিয়ে গিয়েছে। লুঙ্গি পড়ুক, গেঞ্জি পড়ুক, ভিআিইপিতে ঢুকলেন কিভাবে? যদি একান্ত পরিচিত না হয় কিংবা ভিআইপি লোক না হয়। সেই ভিআইপি সুবিধা নিয়ে এয়ারপোর্ট দিয়ে উনি পার হয়ে গেলেন আর আমার সরকার বলে কিছু জানি না। ৬২২ জন আওয়ামী লীগের লোক পার হয়ে গেলো এই সরকার বলে আমরা কিছু জানি না। জানেন কি? আপনারা কি জানেন এই জানাটা খ্বু দরকার, কিছুই জানেন না।

দেশে কি কি ঘটতে যাচ্ছে তার সবই জানেন উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, আরও জানি কি কি ঘটতেছে। নইলে শাহবাগের এই নাটক কেনো হঠাৎ করে। যে শাহবাগ আপনারা বন্ধ করেছেন.. যে শাহবাগের এই সমস্ত এলাকাতে মিছিল-মিটিং করা যাবে না সেখানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, সরকারের দল এনসিপির লোকেরা ওখানে মিছিল-মিটিং করে কিভাবে? আর কোন দাবিতে মিছিল-মিটিং করলো। কি দাবি? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে। তো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে না করছে কে ভাই? কে না করছে? বিএনপি না করছে? খুব চেষ্টা করছে চালানোর জন্য বিএনপি নাকি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে চায়। আমাদের ঠেকায় পড়ে গেছে, বড় ঠেকায় পড়ে গেছে।

তিনি বলেন, জীবন থেকে আমাদের ১৭টি বছর আমাদের কেড়ে নিয়ে গেছে, পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি, স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে, আমাদের পরিবার-পরিজন কেউ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে নাই। এখানে যারা আছে একজন কর্মীও তার বাড়িতে ১৭ বছর ঘুমাতে পারে নাই শান্তিতে আর সেই আওয়ামী লীগকে আমরা আবার প্রতিপালন করব, আবার পুনর্বাসন করব? এটা হলো যারা বিএনপিকে জেলাস করে অর্থাৎ দেখতে পারে না, পছন্দ করে না, যারা অজনপ্রিয় একটি দল, একটি গোষ্ঠী, এরা বিএনপিকে কালার করার চেষ্টা করছে। এই সম্পর্কে আমাদের মহাসচিব স্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন, আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান স্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন। আমি গত ২৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পরিষ্কার ভাষায় বক্তব্য রেখেছিলাম। আজকে যারা বলে বিএনপি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে চায় তারা দেশ ও জাতির শত্রু।

ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি দল একমাত্র আছে যারা বাংলাদেশে বিদেশী শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, যেকোনো বিদেশী প্রভুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য। আর কোনো দল নাই। যদি থাকতো তা হলে আওয়াজ উঠাতো, সচিবালয়ের ভেতরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি করে? যাদের এখন জেলখানায় থাকার কথা তারা এখন সচিবালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করছে। ওরা আওয়ামী লীগের আমলে সচিব ছিলো এখনও সচিব। অথচ আমাদের সময় যারা সচিব ছিলো যারা রিটায়ারমেন্টে যায় নাই তাদের সব বাতিল করে দিয়ে দিয়েছে।

প্রশাসনে কি হচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, প্রশাসনে বিভিন্ন এলাকায় পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি কর্মকর্তাদের বাতিল করে সেখানে কমপক্ষে জামায়াতের লোকজনকে দিতে হবে, জামায়াত না হলে আওয়ামী লীগ দিতে হবে। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, থানা-পুলিশ-কোর্ট-কাচারি, সচিবালয়ের ভেতরে এই কর্মকান্ডগুলো শুরু হয়ে গেছে, বিএনপিকে রাখা যাবে না। এই যে বিএনপি নিধন আন্দোলন শুরু হয়েছে তারই একটি বিষয় হলো ৬২২ জন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগারদের পালিয়ে যেতে দেয়া, খুনির আসামী আবদুল হামিদকে পালিয়ে যেতে দেয়া, এটা হলো একটি বিষয়। এই সরকারের মধ্যে অবস্থানরত অনেক উপদেষ্টা অবস্থানরত অনেক উপদেষ্টা যারা বাংলাদেশের নাগরিকই নন। তারা এই দেশ পরিচালনা করতেছেন। এসব থেকে নজর ফিরিয়ে নিতে সরকার নানা কিছু ইস্যু করছে।

সেন্টমার্টিন-সাজেক-বাঘাইছড়ি কেনো যেতে পারবে না জানতে চেয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা কি উপনেবেসিক শাসনে আছি? আমার মনে হয় যে, আমরা দেশের মানুষের শাসনে নাই। সেন্টমার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়িৃ এই সমস্ত এলাকা আমাদের যাওয়াটা দুরুহ হয়ে গেছে। আমি কেনো ইচ্ছা করলে সেন্ট মার্টিন যেতে পারি না, আামি কেনো ইচ্ছা করলে সাজেক যেতে পারব না, আমি কেনো ইচ্ছা করলে বাঘাইছড়ি যেতে পারবো না.. আমি এটা সরকার থেকে জানতে চাই। আমরা কি কোনো পরাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করি। সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি যেতে পাসপোর্ট ভিসা লাগবে। আমি এই সরকারের কাছে স্পষ্ট উত্তর জানতে চাই। আমি এটাও বুঝি না, আমার এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) ভাইয়েরা যারা বলতে চান, দ্বিতীয় স্বাধীনতা তারা এ নিয়ে কথা বলছেন না কেনো?

মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, একটা জায়গায় নাকি করিডোর দেয়া হবে। কিসের করিডোর? মানবিক করিডোর। আরে ভাই, বিশ্বের কোনো ডিকসেনারিতে মানবিক করিডোরর নামে কোনো শব্দ আছে কি, কোথা থেকে এসব আবিষ্কার করেন? আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো করিডোর কিংবা প্যাসেজ দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই জনগণের মতামত ছাড়া। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি করবে? আমাদের খুব ভালো অভিজ্ঞতা আছে বিশ্বের কোনো দেশ এই করিডোর দিয়ে শান্তিতে নাই। আজকে গাজা শান্তিতে নাই, লিবিয়া শান্তিতে নাই, মিশর শান্তিতে নাই, আফগানিস্তান শান্তিতে ন্ইা।

করিডোর নিয়ে অন্য দলগুলোর কথা নেই কেনো প্রশ্ন রেখে মির্জা আব্বাস বলেন, করিডোর দিয়ে অন্য দলগুলো কথা বলছেন না কেনো? কি কারণে? জামায়াতে ইসলামী কথা বলে না কেনো? বিভিন্ন পীর সাহেবরা আছেন উনারা কথা বলেন না কেনো? আবার বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলার সময়ে সবাই এক হয়ে যান, এটা কেমন কথা হলো? অর্থাৎ বিএনপিকে শেষ করতে পারলেই বাংলাদেশটাকে আবারও লুটেপুটে খাওয়া যাবে আওয়ামী লীগের মতো। ইনশাল্লাহ, বিএনপিকে কোনো সরকার বহু চেষ্টায়ও শেষ করতে পারে নাই।

মির্জা আব্বাস বলেন, এই কথা বললে, অমুক দেশ রাগ করবে, আমি এই কথা বললে তমুক দেশ রাগ করবে এটা ভাবার আমার প্রয়োজন নাই। আমি দেশপ্রেমিক আমি আমার দেশের কথা বলব, আমি আমার দেশের স্বার্থের কথা বলব, আমি দেশের জনগণের কথা বলব। আমি অন্য কারো কথা বলতে বা ভাবতে রাজি নই। অন্য কারো রক্ত চক্ষুতে আমি ভীত নই।

সংগঠনের সভাপতি সাইদ হাসান মিন্টুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা শাহ মো. নেসারুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।