চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারীদের প্রবল সমালোচনা করেছেন নৌ পরিবহণ উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, “কিছু করলেই বলেন-চলে গেল, চলে গেল! কী চলে গেল? গত ১৭ বছর যখন বন্দর লুটপাট হয়েছে, তখন তো কাউকে কথা বলতে দেখিনি।”

গতকাল সোমবার সকালে পতেঙ্গার লালদিয়া চরে কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণকাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়ার চর ও বে-টার্মিনাল বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারায় দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করছে। ডিসেম্বরেই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনসহ বামপন্থী দলগুলো ধারাবাহিক আন্দোলন করছে। সম্প্রতি বন্দর এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশও নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ।

এই প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বন্দরকে আধুনিক করতেই হবে। আমাদের সক্ষমতা যেখানে সীমিত, সেখানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিতে হবে। যারা আন্দোলন করছেন, তাদের বলব—গত ১৭ বছর নীরব ছিলেন কেন? এখন কেন ‘চলে গেল’ বলে চিৎকার?”

তিনি আরও বলেন, “কেউ কিছু করলেই চলে গেল বলে হৈচৈ করেন। অথচ যখন এক মাথা থেকে আরেক মাথা তুলে দেওয়ার মতো কাজ হয়েছে, তখন কোনো কথা বলেননি। আসলে কিছুই চলে যায়নি; বরং দক্ষতা বাড়লেই আপনি-আমরা আগামী দিনে বন্দরকে নতুন রূপে দেখতে পাব।”

চীন সফরে গিয়ে আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা দেখে বিস্ময়ের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “মাত্র পাঁচজন মানুষ পুরো বন্দর পরিচালনা করছে—বাকিটা প্রযুক্তিনির্ভর। চাইলে আপনারাই দেখে আসতে পারেন। আমরা কি প্রযুক্তির এই দুনিয়ায় থাকতে চাই, নাকি পুরোনো ধ্যানধারণায় আটকে থাকব?”

পতেঙ্গার লালদিয়া চরে ৩২ একর জায়গাজুড়ে নতুন কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৪ একর এলাকায় ইয়ার্ড নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, যা বন্দরের ধারণক্ষমতা ১০ হাজার একক কনটেইনার বাড়াবে বলে জানান তিনি।

বন্দরের নতুন ট্যারিফ নিয়ে প্রশ্ন করলে উপদেষ্টা বলেন, “সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি আদালতে থাকায় এ নিয়ে মন্তব্যে যাচ্ছি না। আদালতে ট্যারিফ বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে।”

পরে তিনি বে-টার্মিনাল এলাকার পরিবহন টার্মিনাল, ইস্ট কলোনি এলাকার তালতলায় নির্মিত কনটেইনার ইয়ার্ড, বন্দর এক্স-ওয়াই শেড এবং কাস্টমস অকশন শেড পরিদর্শন করেন। এ সময় বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।