দেশের জনগণের মধ্যে সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যত দ্রুত দেশকে নির্বাচনের ট্র্যাকে উঠানো যাবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর নিউরো সায়েন্স হসপিটালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদকে দেখার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে যখন দেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে তখন একটি মহল এটার বিরোধিতা করে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি যদি কেউ থাকে সেটা হচ্ছে বিএনপি এবং সবচেয়ে বেশি লড়াই যদি করে গণতন্ত্রের জন্য সেটা বিএনপি। বাংলাদেশে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বিএনপি নিয়ে এসেছে বহুদলীয় গণতন্ত্রে এবং পরবর্তীকালে সংসদীয় গণতন্ত্রে। সুতারাং এই বিষয়ে প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নেই। একটি জিনিস কী? দেশটাকে সকলে মিলে বাঁচাতে হবে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে সঠিক ট্র্যাকে উঠানো এবং যত দ্রুত সেটাকে উঠানো যাবে ততই মঙ্গল।

মির্জা ফখরুল বলেন, যারা মনে করে যে, নির্বাচন প্রয়োজন নেই আমার মনে হয়, তারা আবার চিন্তা করবেন। নির্বাচন প্রয়োজন জনগণের জনগণের জন্য। একটা নির্বাচিত সরকার দরকার যে সরকার জনগণের সম্পর্ক থাকবে। সেই কারণেই আমরা বলছি যে সংস্কারগুলো সেই সংস্কারে আমরা অংশ নিচ্ছি। প্রত্যেকটি সংস্কারের দাবি আমরাই তুলেছি। সুতরাং সংস্কার এবং নির্বাচন এর মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিকতা নেইৃ দুইটা একসাথে চলবে।

সকাল সাড়ে ১১টায় আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্স এন্ড হসপিটালে চিকিৎধীন অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব। তিনি চিকিৎসকদের সাথে তার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। দীর্ঘদিন ধরে অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস নিউরো সমস্যায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এরপর একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদকে দেখতে যান মির্জা ফখরুল এবং তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতন-হত্যা-গুম-খুনের সবচেয়ে বড় ভিক্টিম আমাদের দল বিএনপি। আমি নিজেও ১১২টা মামলা এবং ১৩ বার জেলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমরা সবসময়ে মনে করি যে সমস্ত রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে থাকবে, যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করবে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ কাজ করেছে তাদের প্রতিটি ব্যক্তির শাস্তি হওয়া প্রয়োজন, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত এবং শাস্তি হওয়া উচিত। তিনি বলেন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা তিনি এককভাবে আমি মনে করি দ্যা রেসপোসিবল ফর দ্যা কিলিং অব দ্যা থাউজেন্টস অব পিপল। তার বিচার শুরু হয়েছে আমরা আশাবাদী তার এবং তার সঙ্গে যারা গণহত্যার সঙ্গে এবং এই ফ্যাসিস্ট আক্রমনের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকেরেই বিচার হবে।

এদিকে লালনগীতি শিল্পী ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে মহাখালীর ইউনির্ভাসেল মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালে(আয়শা মোমোরিয়াল হসপিটাল) চিকিৎসাধীন শিল্পী ফরিদা পারভীনকে দেখার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, লালন সঙ্গীতে ফরিদা পারভীন অদ্বিতীয় এবং গোটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে লালন সঙ্গীতের প্রিয় শিল্পী তিনি। দীর্ঘকাল ধরে তিনি সঙ্গীত জগতে যে তার একচ্ছত্র প্রভাব সেটা তিনি অক্ষুন্ন রেখেছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমার আহ্বান সরকারের কাছে, এরকম একজন গুণী শিল্পী যিনি বিশ্বে সমাদৃত তার চিকিৎসার জন্য তাদের স্পেশাল বোর্ড গঠন করা উচিত এবং অবিলম্বে আমি আহ্বান জানাব যে, বোর্ড গঠন করে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা বিদেশে দরকার হলে তার ব্যবস্থা করতে হবে, এটা জাতি চায়। এই কাজটা আমি অনুরোধ করব, আহ্বান জানাব যে, প্রধান উপদেষ্টাকে যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নেবেন তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা করা সম্ভব হয়।

গত ৫ জুলাই শনিবার সকালে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানোর পর এই শিল্পীকে আইসিইউতে রাখা হয়। ৭০ বছর বয়সী এই শিল্পী শুধু কিডনি সমস্যা নয়, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে।

বিএনপি মহাসচিব শিল্পীর শয্যার পাশে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে চিকিৎসকদের কাছ থেকে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং করণীয় জানতে চান।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, মহাসচিব এই বরণ্যে শিল্পীর সর্বোচ্চ চিকিতসার জন্য সরকারের দুই উপদেষ্টা সাথে হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তিনি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন এবং শিল্পীর চিকিৎসার জন্য তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব শিল্পী পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশেষ সহযোগিতা তাদেরকে প্রদান করেন।

এই সময়ে বিএনপির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন উজ্জল, সহ সংস্কৃতিক সম্পাদক সাঈদ সোহরাব, জাসাসের সভাপতি হেলাল খান, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।