পাঠ্যক্রম, শিক্ষানীতি, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, উচ্চশিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা, দক্ষতা, মূল্যায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং বিবিধ বিষয়ে মোট ৩০ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরে ছাত্রশিবিরের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এই প্রস্তাবনা পেশ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন— “অভ্যুত্থানের এক বছর অতিক্রম করে আমরা দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছি। জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে ফ্যাসিবাদী সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ, কল্যাণমুখী ও সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে পুনর্গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শিক্ষা সংস্কারের বিষয়ে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি বা ঘোষণা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি বরাবরের মতোই উপেক্ষিত হচ্ছে, যা হতাশাজনক। ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে শিক্ষা সংস্কারের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেশ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। আপনাদের আন্তরিক উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি
১৯৪৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আধিপত্যবাদ, জুলুম ও ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে যারা জীবন দিয়েছেন, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানে যারা জীবন ও রক্ত দিয়ে আমাদের নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন, তাদের সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁদের ত্যাগকে কবুল করুন। আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদে দ্রুত সুস্থতা দান করুন। আমীন।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্টালগ্ন থেকে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির এক মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে । ছাত্রশিবির বিশ্বাস করে একটি আদর্শ জাতি গঠনে সুশিক্ষার বিকল্প নেই। তাই ছাত্রশিবিরের মৌলিক পাঁচ দফা কর্মসূচীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দফা হলো -ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্রসমস্যা।
উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ১৯০ বছরের দীর্ঘ আজাদীর লড়াইয়ের বিজয় এসেছিল ১৯৪৭ সালে। এটি শুধু ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তিই নয়, বরং জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ও ‘নাগরিক’ স্বীকৃতির সূচনাও ছিল। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর শাসকদের অদূরদর্শিতা, ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি মূল্যায়ন করতে না পারা এবং রাজনৈতিক বৈষম্যের ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে গভীর বিভাজন সৃষ্টি করে। ৫২ থেকে শুরু করে অবশেষে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি নতুন পতাকা ও স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ।
কিন্তু এই স্বাধীনতা কেবল আক্ষরিক অর্থে দলিল দস্তাবেজেই সীমাব্ধ থেকেছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রম করেও এ জনপদের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন থেকে এখনো বঞ্চিত। বার বার ক্ষমতার পালাবদলেও মানুষের ভাগ্যের মৌলিক কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধে চরম অবক্ষয়, গণতান্ত্রিক কাঠামোর ধ্বংস এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে তোলে। প্রতিষ্ঠিত হয় একদলীয় শাসন, দমন-পীড়ন, গুম, দুর্নীতি, ভোটাধিকার হরণ এবং অর্থ পাচারের সংস্কৃতি। রাষ্ট্রব্যবস্থা ফ্যাসিবাদী রূপ ধারণ করে—মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নির্বাসিত হয়। এই শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান—৩৬ জুলাই, যা ‘জুলাই বিপ্লব’ হিসেবে বাংলাদেশের নতুন জাতিরাষ্ট্র বিনির্মাণের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরোও বলেন— “ঔপনিবেশিক মনোভাব, পাশ্চাত্য সভ্যতার আগ্রাসন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রভাব এ দেশের নিজস্ব শিক্ষা কাঠামো তৈরিতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭২ সালে ড. কুদরত- ই -খুদা শিক্ষা কমিশন স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ( সাম্য, মানবিক মর্যদা ও সামাজিক সুবিচার) উপেক্ষা করে একটি ধর্মনিরেপেক্ষ শিক্ষানীতি প্রণয়ণ করে, যা ছিল দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা-চেতনা, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক জীবনবোধের পরিপন্থী। এরপর ১৯৭৮ সালের শিক্ষা উপদেষ্টা পরিষদ, ১৯৮৩ সালের শিক্ষা পুনর্গঠন কমিটি, ১৯৮৭ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশন-১১, ১৯৯৪ সালের কারিকুলাম টাস্কফোর্স, ২০০১ সালের শিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটি শিক্ষা সংস্কারে কাজ করেছে বটে; কিন্তু তাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ ও সুবিধা রক্ষায় বিভিন্ন সময় পরিবর্তন করা হয়েছে।
পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার ২০১০ সালে একটি একপাক্ষিক ও দুরভিসন্ধিমূলক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে, যার পূর্ণ বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০২২ সালে। উক্ত শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষার মূলৎপাটন করার নীল নকশা গৃহিত হয়। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তারা ইসলামি শিক্ষাকে বিকৃত করে তদস্থলে শিরক ও বিদআদের মতো ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলোকে পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করে।
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতনের পর ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণ আকাঙ্খার ভিত্তিতে একটি কার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে সকলের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সরকার তা না করে উল্টো ফ্যাসিবাদের তৈরি ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার ঘোষনা দেয়, যা জনগণকে ভীষণভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তোলে। ফলে তীব্র জনরোষের মুখে সরকার এই ধিকৃত শিক্ষাক্রমকে স্থগিত ঘোষণা করে এবং অতি বিতর্কিত অংশগুলো বাদ দিয়ে একটি অস্থায়ী পাঠ্যসূচি প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কাঙ্খিত জাতিগঠনের জন্য একটি পরিপূর্ণ পাঠ্যক্রম প্রণয়ন অত্যবশ্যকীয় এবং এটি অগ্রাধিকারমূলক জাতীয় কর্মসূচির অন্তর্ভূক্ত।
মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিকে পাশ কাটিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় চার মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু নতুন এই চারনীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অধিকংশ মানুষের মূল্যবোধের পক্ষে ও সকল নাগরিকের উপযোগী সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করা জরুরি, যার মাধ্যমে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধকে জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ইসলামি আদর্শই হলো একমাত্র সমাধান। কারণ ইসলামি আদর্শই সকল মানুষকে সমানভাবে অন্তর্ভূক্ত করতে পারে, সকলের মর্যাদা সমুন্নত রাখার শিক্ষা দেয় এবং জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে দিক্ষিত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।
তাই একটি কাঙ্ক্ষিত ও বিশ্বমমানের জাতি গঠনে জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখায় ও সাহিত্যে ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রাধান্য স্থাপন করতে হবে। এভাবে বস্তুগত জ্ঞানের সাথে নৈতিক শক্তির সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রত্যাশিত পরিবর্তন ও সংস্কার সাধন সম্ভব।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হওয়া উচিত নৈতিকতা সমৃদ্ধ, সমতাভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও সৃজনশীল, যা শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ ও কর্মদক্ষতা বিকশিত করবে। এছাড়া শহর-গ্রাম, ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য বৈষম্যহীন ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করাই হবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। এর জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রের সদিচ্ছা, সঠিক কর্মপরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত বরাদ্দদান। অথচ বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে বরাদ্দের পরিমান আন্তর্জাতিক মানদন্ডের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী একটি দেশের শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত জিডিপির নূন্যতম ৬ শতাংশ; কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ২ শতাংশেরও কম। এশিয়ার অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে আমাদের শিক্ষা খাতের করুণ অবস্থা আরো ন্যাক্কারজনকভাবে ফুটে ওঠে। সিঙ্গাপুরে শিক্ষাখাতের ব্যয় জাতীয় বাজেটের প্রায় ১০%, মালয়েশিয়ায় ১৭–২০%, ভারতে সরকারি ব্যয়ের ১৩–১৭% (জাতীয় বাজেটে প্রায় ২.৫%), এবং চীন ১০–১৩%। আর বাংলাদেশে ২০২৫–২৬ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ মাত্র জাতীয় বাজেটের মাত্র ১.৮–২%, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিচারে অতি নগন্য।
দেশের তরুণ ছাত্র ও যুবসমাজের প্রতিনিধিত্বকারী দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বিভিন্ন সময়ে সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও বুকলেট প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরেছে। বার বার স্মরণ করে দিয়েছে- দিশেহারা একটি জাতিকে কাঙ্খিক মানে গড়ে তোলার জন্য এর শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি কী, কেমন ও কীভাবে হওয়া জরুরী? আমরা জানি, শিক্ষাকাঠামোতে তিনটি অংশীজন ওতপ্রোতভাবে জড়িত- শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এই তিন শ্রেণির মৌলিক প্রত্যাশার জায়গা এক ও অভিন্ন। সেটি হলো- গুণগত শিক্ষা।
সেই কাঙ্ক্ষিত গুণগত শিক্ষার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং ফ্যাসিবাদের উদর থেকে জন্ম নেওয়া শিক্ষাব্যব্স্থাকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে পুনর্গঠনের জন্য শিক্ষানীতি, পাঠ্যক্রম, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, মূল্যায়ন পদ্ধতি ও শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ বিবিধ বিষয়কে সামনে রেখে আমরা ৩০ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হলো।”
সংস্কার প্রস্তাবনা–০১ : অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষা কমিশন গঠন
সংস্কার প্রস্তাবনা–০২ : জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তকরণ
সংস্কার প্রস্তাবনা–০৩ : ইসলামী মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সমন্বয়ে আধুনিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন
সংস্কার প্রস্তাবনা—০৪ : বহুমাত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ
সংস্কার প্রস্তাবনা–০৫ : বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শিক্ষায় (STEM) অগ্রাধিকার প্রদান
সংস্কার প্রস্তাবনা–০৬ : ভাষা শিক্ষা সংক্রান্ত
সংস্কার প্রস্তাবনা–০৭ : সামরিক ও শারীরিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ
সংস্কার প্রস্তাবনা–০৮ : শিক্ষা বাজেট অগ্রাধিকার
সংস্কার প্রস্তাবনা–০৯ : শিশুদের জন্য আনন্দায়ক স্কুলিং পদক্ষেপ
সংস্কার প্রস্তাবনা–১০ : উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক শিক্ষা আইন প্রণয়ন
সংস্কার প্রস্তাবনা–১১ : স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন গঠন
সংস্কার প্রস্তাবনা–১২ : নারী শিক্ষার প্রসারে উপর্যুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ
সংস্কার প্রস্তাবনা–১৩ : শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
সংস্কার প্রস্তাবনা–১৪ : শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসন নিশ্চিত ও ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ
সংস্কার প্রস্তাবনা–১৫ : মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ
সংস্কার প্রস্তাবনা–১৬ : শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষাঙ্গন বাস্তবায়ন
সংস্কার প্রস্তাবনা–১৭ : যোগ্য ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ গঠন
সংস্কার প্রস্তাবনা–১৮ : গবেষণামুখী উচ্চশিক্ষা
সংস্কার প্রস্তাবনা–১৯: মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা সংক্রান্ত
সংস্কার প্রস্তাবনা–২০ : কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি
সংস্কার প্রস্তাবনা–২১ : মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার
সংস্কার প্রস্তাবনা–২২ : শিক্ষক প্রশিক্ষণ কাঠামোর আধুনিকায়ন
সংস্কার প্রস্তাবনা–২৩ : শিক্ষক মূল্যায়নের কার্যকর পদ্ধতি প্রবর্তন
সংস্কার প্রস্তাবনা–২৪ : চাকরিতে সমান সুযোগ ও ন্যায়ভিত্তিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ
সংস্কার প্রস্তাবনা–২৫ : ছাত্ররাজনীতির যথাযথ চর্চা ও নিয়মিত ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন
সংস্কার প্রস্তাবনা–২৬ : বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ
সংস্কার প্রস্তাবনা–২৭ : পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মূলধারার শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তকরণ
সংস্কার প্রস্তাবনা–২৮ : কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বেকারত্ব হ্রাস
সংস্কার প্রস্তাবনা–২৯ : উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়ন ও সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ
সংস্কার প্রস্তাবনা–৩০ : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবক-অংশগ্রহণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড - একটি জাতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে তার শিক্ষা ব্যবস্থা যুগোপযোগী ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হওয়া চাই। স্বাধীনতার পর থেকে টেকসই যুগোপযোগী শিক্ষা নীতিমালা ও কারিকুলাম প্রণয়ন ছিল একটি মৌলিক কাজ। ক্ষমতার পালা বদলে সেই মৌলিক কাজটি করার সুযোগ এসেছিল বহুবার। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তিগুলো নিজেদের আদর্শ ও ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে শিক্ষা নীতিমালায় রাষ্ট্রের মৌলিক চাহিদা মেটাতে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর গণমানুষের মাঝে আবারও আশার সঞ্চার হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী মানুষের চাহিদা, আশা-আকাঙ্খা ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের তাগিদে ৩০ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছে। ছাত্রশিবির আশা করে, এই ৩০ দফা সংস্কার প্রস্তাব গৃহীত হলে শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক ত্রুটি দূর হবে; যা সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরীতে ভূমিকা রাখবে, ই্নশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, শিক্ষানীতি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অন্যতম প্রধান নিয়ামক। ৩০ দফা শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবকে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে দ্রুত শিক্ষা সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রকাশিত ঘোষণাপত্রে শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সদন প্রণোয়ন ও আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে। অন্যথায় জুলাই অভ্যুত্থানে সহস্রাধিক শহীদ ও আহত মানুষের আত্মত্যাগের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত হবে না এবং অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সৎ ও যোগ্য প্রজন্ম তৈরি করে সবার বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।