শহীদ ইসলাম বাবর, সাতকানিয়া : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আজ ১৯ জুলাই শনিবার বিকাল ২টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে “জাতীয় সমাবেশ ২০২৫”। উক্ত সমাবেশে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার অন্তর্গত আটটি উপজেলা থেকে কমপক্ষে ৩০ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতেই বিশাল গাড়ির বহর নিয়ে নেতা কর্মীরা ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর এডভোকেট আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “বোয়ালখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও কর্ণফুলী উপজেলাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রতিটি ইউনিট থেকে নেতাকর্মীরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। তিনি আরও জানান, যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ যানবাহন ভাড়া করা হয়েছে এবং সকল ধরণের সাংগঠনিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। গতকাল শুক্রবার রাত আনুমানিক আটটা থেকেই নেতাকর্মীরা গাড়িতে করে রওনা দিবেন। এছাড়াও অনেক নেতাকর্মী রেলযোগে সমাবেশে যোগদান করবেন। তিনি বলেন, “দেশের মানুষ একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে। জামায়াতের এ জাতীয় সমাবেশ সেই দাবি আদায়ের আন্দোলনে এক নতুন অধ্যায় তৈরি করবে।”

উল্লেখ্য, এই জাতীয় সমাবেশে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে- লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, গায়েবি মামলা ও সাজা বাতিল, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণসহ নির্বাচন ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণ এই সমাবেশকে স্মরণীয় করে তুলবে।

বগুড়ার ২০ হাজার নেতাকর্মী

বগুড়া অফিস: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ উপলক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় বগুড়াতেও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন- বগুড়ার প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। নেতাকর্মীদের যাতায়াতের জন্য এরই মধ্যে ঢাকা রুটে চলাচলকারী ২৮১টি চেয়ার কোচ রিজার্ভ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতেই সেগুলো রাজধানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। এছাড়া ৩০টিরও বেশি হাইয়েস মাইক্রোবাস এবং প্রাইভেট কারে চড়ে অনেক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। এমনকি পাবলিক বাসেও অনেকে ঢাকার পথে যাত্রা করেছেন বলে জানাগেছে।

জামায়াতে ইসলামী বগুড়া জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলাম রাজু জানান, বগুড়া জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে ১৮০টি চেয়ার কোচ ভাড়া করা হয়েছে। প্রতিটি বাসে ৫০ জন করে নেতাকর্মী থাকবেন। বেশ কয়েকটি হাইয়েস মাইক্রোবাসও ভাড়া করা হয়েছে। এর বাইরেও অনেক নেতাকর্মী ঢাকার সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। বগুড়া শহর জামায়াতের আমীর ও বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল জানান, ঢাকার সমাবেশ থেকে আমীরে জামায়াত দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আগামীর বাংলাদেশ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিবেন। এজন্য জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা সারাদেশ থেকে এই সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। বগুড়া শহর শাখার পক্ষ থেকে ১০১টি চেয়ার কোচ রিজার্ভ করা হয়েছে। হাইয়েচ মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছে ১৫টি। এর বাইরেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই ঢাকার পথে যাত্রা করেছেন। নেতাকর্মীদের নিজেদের টাকায় এসব গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইতোমধ্যেই সমাবেশে যোগ দিতে জামায়াত-শিবিরের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী রাজধানীতে পৌঁছেছেন। অনেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশস্থলে গিয়ে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। সমাবেশ জামায়াতে ইসলামীর আগামী দিনের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে এমনটাই মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

চৌদ্দগ্রাম জামায়াতের ১০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকা অভিমুখী

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) সংবাদদাতা : লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, জুলাই গণ-অভ্যুথানের সংঘটিত গণহত্যার বিচার ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাসহ সাত দফা দাবিতে আজ শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ আয়োজন করেছে জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ঢাকার উদ্দেশ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার তেরো ইউনিয়নের দশ হাজার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী যাত্রা করেছে। শুক্রবার বিকেলে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মু. বেলাল হোসাইন।

জানা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে জামায়াত ৭ দফা দাবি জানিয়ে আসছিল। দাবিগুলো হলো- নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা, নির্বাচনের আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, জুলাই আহতদের চিকিৎসা, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ। দাবিগুলো বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ, বিশ্বব্যাপী ম্যাসেজ দিতে ও জনগণের কাছে পৌঁছাতে জামায়াত ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশের ডাক দেয়। সমাবেশ সফল করতে সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ও পৌরসভা জামায়াত ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার লাগানো হয়েছে উপজেলার সর্বত্র। এছাড়া সমাবেশে উপস্থিত হতে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাওয়াতী কাজ চলমান রেখেছে নেতাকর্মীরা।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর মাহফুজুর রহমান ও সেক্রেটারি মু. বেলাল হোসাইন শুক্রবার বিকেলে বলেন, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ডা. তাহেরের নির্দেশে ঢাকায় সমাবেশের উদ্দেশ্যে ১২০টি হাইয়েস মাইক্রোবাস ও ৮০টি বাস ছাড়াও ব্যক্তিগত প্রাইভেটারে করে নেতাকর্মীরা যাচ্ছে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার থেকে অনেকে সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য আত্মীয় স্বজনের বাসায় অবস্থান করছেন।