দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সব ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা, দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা কোনো কিছুতেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের যেন কিছু হচ্ছে না। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের হুঁশিয়ারি, সাংগঠনিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের অপকর্ম অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে দেশজুড়ে জনমনে ক্ষোভ ও হতাশার কারণে প্রচণ্ড চাপে পড়েছে বিএনপি। সর্বশেষ মিটফোর্ড এলাকায় বিএনপির নেতা কর্মীদের হাতে ভাঙারি ব্যবসায়ীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড সমালোচনার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পরিসরে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা এসব ঘটনার মধ্যে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেরও গন্ধ পাচ্ছেন। তারা এসব ঘটনাকে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলার ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে এসব অপরাধীকে দমনে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছেন কোনো কোনো নেতা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজীবন বহিষ্কারসহ কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও লাগাম টানা যাচ্ছে না বিএনপির এক শ্রেণির নেতাকর্মীদের। এই নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, দখল এমনকি খুনের মতো গুরুতর অভিযোগে বিব্রত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। আগামী নির্বাচনে এসব ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা নেতাদের। এ অবস্থায় দলের তৃণমূল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। জানা গেছে, শুদ্ধি অভিযানে পাঁচ অগাস্টের পর দলে আসা সুবিধাভোগী নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করা হবে। পাশাপাশি যারা দলের সর্বোচ্চ সতর্কতা উপেক্ষা করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন, তাদের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল খ্যাত জেলাগুলোতে এই সাংগঠনিক অভিযানে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সূত্র মতে, ব্যবসার ভাগ দিতে রাজি না হওয়ায় গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের সড়কে স্থানীয় ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুইদিন পর গত শুক্রবার এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। নিহত সোহাগ যুবদলের কর্মী এবং হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরাও বিএনপির লোক বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সাথে সাথে বিএনপির পক্ষ থেকে জড়িতদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিস্কারও করা হয়েছে। একইসাথে নির্মম এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করা হয় দলের পক্ষ থেকে।
সূত্র মতে, মিডফোর্টের হত্যাকাণ্ডটির লোমহর্ষক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড়ে টালমাটাল বিএনপি। বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি ও দলটির শীর্ষ নেতাদের নামেও বিষোদ্গার করে মিছিল হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার পর্যন্ত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পাঁচজনকে আজীবন বহিষ্কার করা হলেও ‘বিশেষ গোষ্ঠী’ নির্বাচন বিলম্বের ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না। তিনি বলেছেন, প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। কিন্তু একটি সুযোগসন্ধানী বিশেষ গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সিলেক্টিভ প্রতিবাদ করে বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং তীব্র কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য - বিবৃতি দেওয়া শুরু করেছে।
শনিবার এক কর্মসূচিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল, আমরা স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করেছি। কিন্তু আমরা বিজয় অর্জন করলেও ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বারবার বলেছি, অন্যায়কারী যেই হোক আমরা প্রশ্রয় দেব না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে? এই সরকারের কাছে আমাদের সবার প্রশ্ন, তারা কেন প্রশ্রয় দিচ্ছে, আশ্রয় দিচ্ছে?
সূত্র মতে, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বারবার সতর্কীকরণ এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরেও দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে দলটি ব্যর্থ হচ্ছে। সারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধে জড়িত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আগামী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে, দলটি এখন বিভিন্ন পদ থেকে দুর্বৃত্তদের অপসারণের জন্য “শুদ্ধি অভিযান” শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর মতে, গত ১১ মাসে সারা দেশে ৩৪৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ৮৭ জন নিহত এবং তিন হাজার ৯২৯ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো সংঘটিত ৩২৩টি ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। যার ফলে কমপক্ষে ৭৭ জন বিএনপির কর্মী নিহত এবং তিন হাজার ৬৫৩ জন আহত হয়েছেন।
চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিএনপির ধারাবাহিক কাজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব শাখা জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিএনপির ধারাবাহিক কাজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টেরিম সরকারকে এখনই বিএনপির হাত থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া উচিত। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশে আবার নব্য ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে।
জানা গেছে, প্রতিনিয়ত একাধিক নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিস্কার করছে বিএনপি। পরিস্থিতি সামলাতে দল একটি মনিটরিং সেলও খুলেছে। জানা গেছে, তিন হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে তাতেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে গ্রুপিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে। দ্বন্ধ থামাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও হামলার শিকার হচ্ছেন। ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ তা থামাতে গেলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ৬ এপ্রিল শেরপুরের ঝিনাইগাতী বাজারে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের তত্ত্বাবধানে জুয়ার আসরে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয় পুলিশ। গত ১৮ মার্চ জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় একটি চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপির তিন কর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদেরকে ছাড়িয়ে নিতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন থানায় হামলা করে। ১২ মার্চ বরিশালের মুলাদি থানায় ডাকাতির মামলায় আটক পাঁচজনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ি তার লোকজন নিয়ে থানা ঘেরাও করে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির অভিযোগ বাড়তে থাকে। গত ১০ মার্চ পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাট এলাকায় এমটিসি টাওয়ার নামের বিপণিবিতানের দখল নিয়ে যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘাতের ঘটনা ঘটে। ৮ মার্চ ঢাকা কলেজের সামনে ফুটপাতের ব্যবসা দখল নিয়ে হকারদের মারধোর করার অভিযোগ ওঠে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে। ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ‘বন্ধন পরিবহন’ বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ৷ গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি ও সবজি মার্কেট দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। ১২ মে দলের নামে অফিস খুলে চাঁদাবাজির অভিযোগে নাটোরের সিংড়া থেকে পুলিশ আটক করে স্থানীয় বিএনপি নেতা হাজী কুদ্দুস আখন্দকে। তিনি উপজেলা মৎসজীবী দলের সাবেক সভাপতি। ২৮ মে কুঁড়িগ্রাম সদর উপজেলায় গরুর হাটে চাঁদবাজির অভিযোগে আটক হন বিএনপি নেতা। ২৯ এপ্রিল নাটোরে ধানের ট্রাকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আটক হন বিএনপি ও যুবদলের তিন নেতা। ১৩ এপ্রিল পাবনার ইশ্বরদীতে অটোরিকশার স্ট্যান্ড দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এমসি বাজারে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম মাইকে ঘোষণা দিয়ে বাজার দখল করে চাঁদা দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেন৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণার ভিডিও ভাইরাল হলে তাকে যুবদল থেকে বহিস্কার করা হয়। ১১ আগস্ট বরিশাল শহরে তিনটি সরকারি পুকুর দখল করে তা বালু দিয়ে ভরাট করার উদ্যোগের অভিযোগে বিএনপির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের দলীয় সদস্যপদ স্থগিত হয়।
জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত বেড়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে টেন্ডার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার প্রতিযোগিতা নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। মার্চের শেষে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত হন। ১৮ মার্চ রাজশাহীর তানোরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত গানিউল হক নামের একজন কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৮ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় টিসিবির পণ্যের কার্ড বিতরণ নিয়ে সদর উপজেলা ও দর্শনা থানার তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির দুই গ্রপের সংঘর্ষে ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নিহত হন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। গত কয়েক মাসে এমন সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন জেলায়।
দলটির এসব সংঘাত সংঘর্ষের চিত্র উঠে এসেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানেও। তাদের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) বিএনপির নিজেদের মধ্যে সংঘাতে সারাদেশে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজার ২০১ জন। এই সময়ে তাদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ১০৫টি। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ১০টি৷ এতে চারজন নিহত এবং ৭২ জন আহত হয়েছেন। ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ছয়টি। এতে ৫৭ জন আহত হয়েছেন। স্বেচ্ছাসেক দলের একটি অভ্যন্তরীণ সংঘাতে দুইজন আহত হয়েছেন। শ্রমিক দলের দুইটি অভ্যন্তরীণ সংঘাতে একজন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বিএনপি ও যুবদলের মধ্যে আটটি সংঘর্ষে দুইজন নিহত এবং ৭৭ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি ও কৃষক দলের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। কৃষক দল ও স্বেচ্ছাসেক দলের মধ্যে একটি সংঘর্ষে দুইজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের মধ্যে দুইটি সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। স্বচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের মধ্যে দুইটি সংঘর্ষে ২৯ জন আহত এবং দুইজন নিহত হয়েছেন। বিএনপি ও ছাত্রদলের মধ্যে চারটি সংঘর্ষে একজন নিহত এবং ৩৮ জন আহত হয়েছেন৷ যুবদল ও ছাত্রদলের মধ্যে সাতটি সংঘাতে দুইজন নিহত এবং ৮১ জন আহত হয়েছেন। স্বচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের মধ্যে দুইটি সংঘাতে ৩১ জন আহত এবং একজন নিহত হয়েছেন।
বাগেরহাটের বিএনপি নেতা ও কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, তৃণমূলে দখল চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আর স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্যের বিষয় তো আছে৷ আছে নানা গ্রুপিং। সামনে নির্বাচনে মনোনয়ন পেতেও অনেকে আধিপত্য বিস্তার করছেন বলে তিনি জানান।
বিএনপির দপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তিন হাজার ৪০০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির এক হাজার ৮০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। ৮০০ জনকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিত, কমপক্ষে ৭০০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ, ১৫০ জনকে সতর্ক এবং ১৭০ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদল এখন পর্যন্ত চার শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও ৬০০’র বেশি নেতা-কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। স্বচ্ছাসেবক দলের কমপক্ষে ১০০ জনকে বহিষ্কার ও ১৫০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুবদলের দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমাদের অবস্থান হলো এইসব ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। যারা এইসব অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আরো নেয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে তাদের আর দলে ফেরত নেয়া হবে না।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান এই পরিস্থিতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে যে দখল, চাঁদাবাজি ছিলো তারই হাত বদল হচ্ছে। বিএনপি যেহেতু বড় রাজনৈতিক সংগঠন তাই তার নেতা-কর্মীরাও এতে বেশি যুক্ত হচ্ছে। তার মতে এই পরিস্থিতির জন্য বিএনপির রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও ব্যর্থতা আছে। তারা তাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেন, দেশে যে চাঁদাবাজি, দখলদারি চলছে তার জন্য প্রধানত বিএনপি সংশ্লিষ্টরাই বেশি দায়ী। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য পুলিশের ব্যর্থতাকেও বড় করে দেখছেন তিনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিতর্কিত করতেই একটি দলের ইন্ধনে বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এতেই বোঝা যায়, এরা কী চায়।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গণমাধ্যমে বলেছেন, বিএনপি নয়, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই হবে। সুনির্দিষ্টভাবে চাঁদাবাজ এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জামায়াত বলছে, সাধারণ মানুষ চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। মাঠের দল হিসেবে জামায়াত জনগণের জন্য চাঁদাবাজমুক্ত দেশ চায়। এ কথাটিই নির্বাচনের মাঠে বলবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ মানুষ কষ্টে আছে। এনসিপি চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নামবে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দলের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, দখল এবং নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করছে তারা। বিশেষ করে ‘হাইব্রিড’ ও ‘নব্য বিএনপি’ পরিচয়ে যেসব ব্যক্তি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কোন্দল সৃষ্টি করছে এবং দলে বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। দলের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, যেসব নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ড জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।