বিচার ব্যবস্থাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অধস্তন আদালতকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের বৈঠকের দ্বিতীয় পর্যায়ের দশম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এমন তথ্য দিয়েছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
তিনি বলেন, ‘অধস্তন আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ—অর্থাৎ অধস্তন আদালতকে জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে জামায়াত। আমরা তাদের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছি। কারণ হচ্ছে, আজকে যে ঐকমত্য কমিশন, আজকে যে অন্তর্বর্তী সরকার, আজকে যে বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থান—৫ আগস্টের পরিবর্তনের যে জনআকাঙ্ক্ষা, সেটিকে কেন্দ্র করে। আমরা জনস্বার্থে আদালতকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে চাই।’
কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘একজন উপজেলায় বসবাসকারী নাগরিক যদি বিচারপ্রার্থী হন, তাকে যোগাযোগের বিরাট জটিল অবস্থা অতিক্রম করে জেলায় যেতে হয়। ফলে এখানে অর্থনৈতিক একটি বিষয় আছে। দূরত্ব ও সময়ও একটি বিষয়। সেখানে গিয়ে জেলা পর্যায়ে আইনজীবী ঠিক করে বিচার পাওয়া—এই যে মানসিক দুর্ভোগ—থাকা-খাওয়া—সবমিলিয়ে একটা কষ্টকর অবস্থা তার হয়।’
‘বিশেষ করে, বিচারপ্রার্থী যদি একটু আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হন, তার জন্য আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতি চলে আসে। এ জন্য আমরা বলেছি যে জনগণের কষ্ট লাঘব করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিচারকে সহজীকরণের জন্য এবং মামলার চাপ কমানোর জন্য আমরা এটিকে সমর্থন করেছি। এটি যেন উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ৪৯৫টি উপজেলা আছে। আবার বেশ কিছু বর্তমানে সংবিধানের ভিতরেই আছে, বিচারের জন্য কিছু চৌকি স্থাপন করা আছে। এখানে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, পর্যায়ক্রমে যাতে সব উপজেলায় বিচার-আদালত নিয়ে যাওয়া হয় আর চৌকিগুলোকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তর করা হয়।’
‘আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, জনস্বার্থে বিচার ব্যবস্থাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। এখানে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে যে বিচার ব্যবস্থা যদি অধস্তনে চলে যায়, তাহলে দুর্নীতি বাড়বে, আমাদের দেশে যে দালাল চক্র আছে, তারা বিচারপ্রক্রিয়ায় জড়িত লোকদের সাথে যোগসাজশ করে অথবা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করবে। আলোচনায় এই কথাটা উঠে এসেছে।’
কিন্তু মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে না ফেলে চিকিৎসা নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যদি মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে, জনসচেতনতা বাড়ে, মানুষকে শিক্ষিত করা গেলে এই জিনিসগুলো দূর করা যাবে। আর দুর্নীতি কোথায় নেই? জেলা পর্যায়ের বিচারে কি দুর্নীতি হয় না। হাইকোর্টের বিচারপতির সই জাল করে রায় বের করার নিউজ তো আপনারাই করেছেন।’
আলোচনায় গ্রাম আদালতের বিষয়টিও উঠে এসেছে জানিয়ে জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি বলেন, ‘গ্রাম আদালতে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সেটিকে আরও কার্যকর করার কথাও আমরা বলেছি। যেমন, এখানে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। সেই জায়গায়, এখতিয়ার যদি একটু বাড়ানো যায়।’
‘সেখানে সালিশ করার মতো লোকের অভাব রয়েছে। তাদের যদি প্রশিক্ষণের মধ্যে আনা যায়, সবদিক থেকে আরও এখতিয়ার ও পাওয়ার ফাংশন দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে অনেক বিষয় ইউনিয়ন পর্যায়ের গ্রাম আদালতে এসে শেষ হয়ে যেতে পারে। বিচার আদালতের দ্রুত নিষ্পত্তির একটি মাধ্যম হতে পারে এটি,’ যোগ করেন আযাদ।