প্রসপার আফগানিস্তানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের (উলামা) একটি প্রতিনিধিদল তাদের আনুষ্ঠানিক সফরের অংশ হিসেবে আজ (২১ সেপ্টেম্বর) কাবুলে আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করেন।

সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল—আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের নেতৃত্ব এবং জনসাধারণের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক, বোঝাপড়া এবং ধর্মীয় সংলাপকে আরও দৃঢ় করা।

প্রতিনিধিদলকে আজ যে দুটি প্রধান সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বাগত জানানো হয়েছে, সেগুলো হল—সৎকর্মের প্রচার ও অসৎকর্মের প্রতিরোধ মন্ত্রণালয়, এবং জ্বালানি ও পানি মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয়েই আফগান কর্মকর্তারা প্রতিনিধিদলের সফরকে স্বাগত জানান এবং তাদের ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থা এবং আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র গঠনের রূপরেখা উপস্থাপন করেন।

সৎকর্মের প্রচার ও অসৎকর্মের প্রতিরোধ মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয় রাষ্ট্রের নৈতিক ও শিক্ষামূলক দায়িত্ব নিয়ে। প্রতিনিধিদল উল্লেখ করেন যে, এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও গঠন বিশ্বব্যাপী এক ব্যতিক্রম এবং ইসলামি সমাজে নৈতিকতা রক্ষার একটি প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টান্ত।

“আমি আপনাদের এখানে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত,” বলেন উপমন্ত্রী সাঈদ আহমদ শহীদ খেল। “সব ধরনের প্রচারণা সত্ত্বেও আপনারা নিজ চোখে আমাদের কাজ দেখতে এসেছেন—এটি আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। আমরা আশা করি বাংলাদেশের মাশায়েখগণ ভবিষ্যতেও আমাদের সাথে দেখা করতে আসবেন। আমরা বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষকে স্বাগত জানাই—তারা যেন নিজেরাই আমাদের সমাজের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করতে পারেন। কারণ আমাদের সম্পর্কে শুনে ধারণা পাওয়া আর সরাসরি সাক্ষাৎ করা এক নয়।”

“এই মন্ত্রণালয় সত্যিকার অর্থেই অনন্য। এমন কোনও সরকার নেই যারা সমাজে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সম্পূর্ণ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে। আমরা চাই মুসলিম বিশ্ব ইসলামের ইনসাফকে বাস্তব চিত্রে দেখতে পাক।”

পরে দিন শেষে জ্বালানি ও পানি মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক করেন মন্ত্রী আবদুল লতিফ মনসুর। তিনি আফগানিস্তানের বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অবকাঠামোগত অগ্রগতির বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং সরকারের গবেষণাভিত্তিক উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেন।

“আমি সত্যিই খুশি যে আপনাদেরকে এমন একটি অফিসে স্বাগত জানাতে পারছি, যেটি নিয়ে অনেকে বিশ্বাস করতেন যে মোল্লারা এটা চালাতে পারবে না,” বলেন মন্ত্রী আবদুল লতিফ মনসুর। “আপনারা নিজ চোখে দেখতে পারছেন, আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা গবেষণার মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছি এবং বাংলাদেশের প্রিয় উলামাদের সাথে তা শেয়ার করতে পেরে আনন্দিত, যারা সরাসরি এসে দেখছেন—বাইরের বিরোধীদের কথার ওপর নির্ভর না করে।”

“আমরা পাঁচটি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু করেছি এবং ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। আফগানিস্তানের সক্ষমতা রয়েছে ৩০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের, যদিও আমাদের বর্তমান প্রয়োজন মাত্র ১৫,০০০ মেগাওয়াট। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ আমরা ইনশাআল্লাহ রপ্তানি করতে পারব। এটি প্রমাণ করবে যে নতুন আফগানিস্তান তার উন্নয়নের চিত্র বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সাথে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।”

“পুনরায় আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আমি সত্যিই আনন্দিত যে আমাদের দুই দেশ কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে পারে।”

সফরের শেষে প্রতিনিধিদল আফগান কর্মকর্তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা ও স্বচ্ছতা প্রকাশের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং দুই দেশের ধর্মীয়, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে ভবিষ্যতে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ হলেন- মাওলানা আব্দুল হামিদ (প্রতিনিধি দলের আমির), মাওলানা আব্দুল হক, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মুফতি মাহবুবুল্লাহ কাসেমী, মুফতি মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ।