বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদ নির্বাচন চাই। সেই সাথে এটাও বলছি যে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করার দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা ৮টি রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি নিজ দলের এ অবস্থানের কথা জানান দেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৩৫তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা আসম আবদুর রব অসুস্থ থাকায় দলের সহসভাপতি এবং আসম আবদুর রবের সহধর্মিনী তানিয়া রব তার পক্ষে বক্তব্য রাখেন। জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রবের আশু রোগমুক্তি কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি খুব পরিষ্কার বলতে চাই, আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতে চাই। আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই ঘোষণার সঙ্গে একমত হয়ে আমরা নির্বাচন চাই। সেই নির্বাচনকে আজকে বানচাল করার জন্য, সেই নির্বাচনকে বিলম্বিত করবার জন্য একটা মহল উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোন সুযোগ এখন আর নাই। নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে সে কথা আমরা পরিষ্কার করে বলেছি। সেখানে দুটি কারণ থাকবে; একটি ভোট গণভোটের জন্য, আরেকটি ভোট হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। সুতরাং এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত কারো থাকবে বলে আমি অন্তত মনে করি না।

গণভোটের দাবিতে আন্দোলরত দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যারা এই নিয়ে গোলমাল করছেন, রাস্তায় নেমেছেন। তাদেরকে অনুরোধ করব দয়া করে জনগণকে অনেক বিভ্রান্ত করেছেন, অতীতে অনেক করেছেন সেগুলো আমি বলতে চাই না। একসময় এই দেশের সকল মানুষের চাহিদা ছিল পাকিস্তান স্বাধীন হবে, আপনারা সেটার বিরোধিতা করেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। আজকে দয়া করে জনগণ যে নির্বাচন চায় সেই নির্বাচনের বিরোধিতা করবেন না। এই দেশের মানুষ কখনো বিট্রেয়ারের যারা বিট্রে করে তাদেরকে ক্ষমা করে না, তারা ক্ষমা পায় না।

তিনি বলেন, সুতরাং আপনারা (আন্দোলরত দলগুলো) ওখান থেকে সরে আসুন। নির্বাচন করুন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের মতামত প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই আমরা সকলে চাই, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। এই সংকট থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারি সেদিকেই আমাদের যাওয়া দরকার, আমাদেরকে যেতে হবে।

বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকার করবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অবশ্যই আমাদের মিত্রদেরকে নিয়ে যাদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছি, একসাথে কাজ করেছি তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই আমরা সরকার গঠন করতে চাই এবং খুব পরিষ্কার কথা আমরা বলেছি আমরা একটা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই নির্বাচনের পরে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। আসুন সবাই আমরা এই একসাথে এ নির্বাচনকে উপলক্ষ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই এবং নির্বাচনকে অত্যন্ত সুন্দর সুষ্ঠভাবে করে আমাদের জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার গঠন করি।

বিএনপির বিরুদ্ধে সংস্কার বিরোধী অভিযোগ খন্ডন করে দলটির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ যত সংস্কার সব বিএনপির হাত দিয়ে। আমরাই সংস্কারের জন্য ৩১ দফা দিয়েছি। আমরাসহ সকল রাজনৈতিক দল সংস্কার করতেই সনদে সই করেছে। আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার, আমরা অবশ্যই যে সংস্কারগুলো আমরা একমত হয়েছি সেই সংস্কারগুলো অবশ্যই আমরা একমত হব আছি এবং সামনে ভবিষ্যতে সেগুলোই আমরা ইমপ্লিমেন্ট করব যদি আমরা ক্ষমতায় আসি এবং আমরা যেগুলো পারিনি সেগুলো আমাদের ম্যানিফেস্টোতে নিয়ে এসে আমরা করব।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, ঐকমত্যের চূড়ান্ত নথিতে বিএনপির মতভেদ বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ গোপন করে আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার দায় সম্পূর্ণভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বর্তায়। তিনি বলেন, যখন আমরা নির্বাচনে যাবো, তখন সেই ঐকমত্যের বিষয়গুলো আমাদের ম্যানিফেস্টোতে থাকবে। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা পার্লামেন্টে তা পাস করে দেশের পরিবর্তন ঘটাবো। আর যদি ভোট না দেয়, তাহলে সেটি বাদ পড়বে।

জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না ‘দেশ এক বিরাট সংকটে উল্লেখ করে তা নিরসনে বিএনপিকেই ভূমিকা নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমি বলি, আজ সমস্ত দায়িত্ব বিএনপির ওপরে। আমি বিএনপি করি না, বিএনপির সব প্রস্তাব মানিও না, বিএনপি সবচাইতে ভালো দল আমি তাও বলি না, এর চাইতেও ভালো হতে পারে। কিন্তু বর্তমান সময়ের জন্য এখন রিলে রেসের কাঠি বিএনপির হাতে। তাদের সেই ভূমিকা পালন করতে পারতে হবে।

মান্না বলেন, জামায়াত তো আবার আন্দোলন আন্দোলনে খেলে। কর্মসূচির নামে সভা করে বড় প্রোগ্রাম দেয় না। তারা জানে যে, এই প্রোগ্রাম মানুষ খাবে না। পিআর লোক বুঝে? বুঝে না। আর সেগুলো নিয়ে কথা বলে বুঝে? বুঝে না। কিন্তু বিএনপি যেটা বলছে, সেই জায়গায় যদি দাঁড়ান তাহলে কী পরিস্থিতি হবে? তিনি বলেন, আমি আবারও মনে করি, এই যে সংস্কার সংস্কার খেলা যে ড. মুহাম্মদ ইউনুস করলেন এটার শেষ পরিণতি তিনি দিতে পারবেন না। জামায়াতের বন্ধুদের বলি, ৫৪ বছর পরে আপনারা শামুকের খোলস ভেঙে বাইরে বেরুতে পেরেছেন। আরেকবার ওই খোলসের মধ্যে ঢুকতে হবে। বিএনপির অত বড় লোকসান হবে না, আমাদের অতবড় লোকসান হবে না; কিন্তু লোকসান আপনাদের বেশি হবে।