বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ডক্টর হেলাল উদ্দিন বলেছেন, জনগণের মতের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে আওয়ামী লীগের পরিণতি বরণ করতে হবে। তাই জনগণের প্রত্যাশিত রাজনীতির করতে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। এসময় তিনি আরো বলেন, যারা শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পরিবারের কাছে যায়নি, তারাই গণহত্যার বিচারের আগে নির্বাচন চায়। জামায়াতে ইসলামী প্রতিটি শহীদ পরিবারকে নগদ ২ লাখ টাকা উপহার দিয়েছে। সেসময় প্রত্যেক শহীদ পরিবারের দুঃখ-কষ্ট ও প্রত্যাশা চেনেছে। শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পরিবারের দাবি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে নির্বাচন দিতে হবে। নতুবা জুলাই যোদ্ধাদের স্বপ্ন ও চেতনা বাস্তবায়িত হবে না। গত সোমবার রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শাহবাগ পূর্ব থানার ঈদ পুনর্মিলনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

একটি ফলপ্রসূ নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং পরে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামীর বিকল্প নেই উল্লেখ করে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ইতিহাসে কোন দুর্নীতির অভিযোগ নাই। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মুজাহিদ ৩টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। তাদের দায়িত্ব পালনকালে ঐ তিন মন্ত্রণালয়ে এক পয়সাও দুর্নীতি হয়নি। তারা নিজেরাও দুর্নীতি করেননি, তাদের অধিনে কাউকে দুর্নীতি করতে দেয়নি। জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ হচ্ছে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে একটি সুখি-সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সেই রাষ্ট্র বিনির্মাণে তিনি, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশের প্রধান বক্তা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ভোগের রাজনীতির কবর রচনা করার জন্য গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। যে যত বড় দল, তাদের তত বড় ত্যাগ করা উচিত। অথচ তারা আত্মতৃপ্তির সাথে বলছে, আমরা বড় দল, আমাদের নেতাকর্মী কিছু সমস্যা করবেই। তিনি বলেন, বড় দলের ভূমিকা বড় হওয়ার দরকার ছিল। শেখ হাসিনা এখনো বলে, আবার সুযোগ পেলে জামায়াত-শিবিরকে নিঃশেষ করবো! কারণ তাদের কারণে আমাদের পতন হয়েছে। অথচ অন্য দল নিজেরাই নিজেদেরকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড দাবি করে। তা-ও আবার যেই নেতা বিদেশে নিরাপদে উন্নত জীবনযাপন করছে, সেই নেতাকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড দাবি করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শুধু শেখ হাসিনার পতন করা হয়নি বরং আধিপাত্যবাদের কবর রচনা করা হয়েছে। গোলামির জিঞ্জির থেকে জনগণের মুক্তির জন্য জুলাই আন্দোলনকে দ্বিতীয় স্বাধীনতার আন্দোলন হিসেবে ছাত্র-জনতা গ্রহন করেছে। পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি জনগণের কল্যাণের রাজনীতি নয় উল্লেখ করে ড. মাসুদ বলেন, পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি করে শেখ হাসিনা যেভাবে নেতাকর্মীদের রেখে পরিবারকে নিয়ে পালিয়েছে। আজও যারা পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি করে তারাও নেতাকর্মীদের রেখে পরিবারকে নিয়ে পালাবে। বিগত ১৭ বছর তারা নিরাপদ বিদেশে উন্নত জীবনযাপন করেছে। ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে তারা কি ভূমিকা রেখেছে জাতির জানা আছে। তাই জনগণকে আর ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা না করে, চাপাবাজির রাজনীতি পরিহার করে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের ও রাষ্ট্রের কল্যাণে রাজনীতি করার আহ্বান জানান। জামায়াতে ইসলামী শাহবাগ পূর্ব থানা আমীর আহসান হাবীবের সভাপতিত্বে রাজধানী বিএম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমেদ খান এবং মহানগরীর সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আব্দুর রব, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের, পল্টন নাগরিক ফোরামের সভাপতি ওবায়দুল্লাহ, শাহবাগ পূর্ব থানার বায়তুলমাল সম্পাদক কামরুজ্জামান, শাহবাগ পূর্ব থানার অফিস সম্পাদক মোখলেছুর রহমান, শাহবাগ পূর্ব থানার শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে রহমত উল্ল্যা ফরাজী, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, আলী হোসেন সুমন প্রমুখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।