বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে। ডিসেম্বর না জুন না মার্চ, একেক সময় একেকটা কথা বলা হচ্ছে। শেখ হাসিনার কিছু কথা-বার্তার সাথে এটার মিল পাওয়া যায়। কেনো এটা হবে? তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের রক্তের উপর গঠিত, অকাতরে জীবনদানকারী শিশু-কিশোর-তরুণ-নারী-রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক, চালকদের রক্তের ওপর গঠিত সরকার। তাহলে এতো ধোঁয়াশা কিসের জন্য? গতকাল শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

আদালতের রায়ের মাধ্যমেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ‘জনতার মেয়র’ জনগণের কাতারে ফিরে এসেছে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যখন নির্বাচনের দিন নির্বাচনী কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না ভোটারদেরকে, ধানের শীষের নির্বাচনী এজেন্টদের ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হচ্ছে এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে বার বার আক্রমণ করা হচ্ছে এবং আমি নিজেও সেই আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম, রক্তাক্ত করা হয়েছিলো আমাকে। কী সন্ত্রাসী নির্বাচন হয়েছে আপনারা দেখেছেন। সেই অবৈধ নির্বাচন, ভোট ডাকাতির নির্বাচনের বিরুদ্ধেই ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক ন্যায়ের আদালতে সেই সময় মামলা করেছিলেন। সেই মামলার ফলাফল এতোদিন পরে পেয়েছেন। এই রায় অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত, এটা সুবিচার পেয়েছেন। ইনশাআল্লাহ এই সুবিচারের মধ্য দিয়েই জনগণের মেয়র জনগণের কাতারে ফিরে এসেছেন।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন। ইশরাক হোসেন অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য।

অনুষ্ঠানে ইশরাক হোসেন বলেন, এই আইনি লড়াইটা সম্পন্ন করার জন্য শুরু থেকেই আমরা লেগেছিলাম। একটি মহল এ বিষয়টি ফোকাস করছে না। তারা দেখাচ্ছে যে, আমরা বিএনপি মেয়র পদে যাচ্ছি। আল্লাহ‘র প্রতি শুকরিয়া আদায় করে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর আইনি লড়াই করার পর আদালতের এই রায় পেয়েছি। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। এখন দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবেন এবং সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্তটি নেয়া হবে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ আমরা নেবো।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী রিক্সা, ভ্যান, অটো চালক দলের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ শুভেচ্ছা প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে রিক্সা, ভ্যান, অটো চালকদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার ও আহত সদস্যদের হাতে ঈদ শুভেচ্ছা তুলে দেন রিজভী।

রিজভী বলেন, এখনো ১২২টা গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা কেনো বেতন পায়নি; এটা একটা বড় প্রশ্ন। প্রায় অর্ধশতাধিক গার্মেন্টসে তারা বোনাস পায়নি কেন? সরকার হচ্ছে, মালিক পক্ষ এবং শ্রমিক পক্ষের মধ্যে একটি লিয়াজোঁ অফিসারের ভূমিকার পালন করেন। এই জিনিসগুলোর দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে।

রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ১৬ বছর বিএনপির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে যে আপোসহীন ধারা যে ধারায় গুম, খুন, ক্রসফায়ারের মধ্যদিয়ে যে অরাজকতা তৈরি করেছিলো শেখ হাসিনা সেই ফ্যাসিস্টকে পরাজিত করে গঠিত সরকার। সেই সরকার জনগণের কাছে স্পষ্ট নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে মাসের কথা বলে তারা একটা নির্বাচনের প্রক্রিয়া তৈরি করবেন। আমরা কখনো শুনছি ডিসেম্বর, কখনো শুনছি মার্চ, কখনো আবার জুন এই ধরনের একটা পেন্ডুলামের মতো বক্তব্য ঝুলছে সরকারের...এই দুলায়মান অবস্থা থেকে জাতিকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে স্পষ্ট করা দরকার। তিনি বলেন, অনেকে আবার বলেন, আরে আন্দোলন কি করা হয়েছে শুধু নির্বাচনের জন্য? আরে ভাই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন শেখ হাসিনা সুষ্ঠু করেনি বলেই তো আন্দোলন হয়েছে, শেখ হাসিনা অমল-ধবল গদি রক্ষার জন্য দেশকে একটা রক্তঝরা কারবালায় পরিণত করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন সেজন্য তার পতনে এক ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, অনেক রক্তদানের পর এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ ও জাতীয়তাবাদী রিক্সা, ভ্যান অটো চালক দলের প্রধান আরিফুর রহমান তুষার বক্তব্য রাখেন।