গণতন্ত্র ফেরাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নির্বাচন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল সোমবার দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনালের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে তারা (লন্ডনের বৈঠকে দুই নেতা) ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল রিপালিক পার্টির প্রতিক্রিয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আমীর খসরু বলেন, আমি মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি তাহলে এখানে সবার মতামত নেয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং সবাই তার মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই তার নিজের মতামত দিবে। এর মধ্য আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে সকালে লন্ডন থেকে ঢাকা ফেরেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রধান উপদেষ্টার সাথে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের দুই আগে ঢাকা থেকে লন্ডন যান তিনি।
নির্বাচনের অতি প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, দেশের মানুষ গত ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র উত্তরণ চান। এটিই ছিল আন্দোলনের মূল প্রত্যাশা। বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সেই পথেই দেশ অগ্রসর হবে।
সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে। ফ্যাসিস্টদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান প্রক্রিয়া এবং এটা বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরও প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে। ফলে বিচার ওদের হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্যে প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, আমি আগেও বলেছি যত বেশি ঐক্যমতের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐক্যমতের মধ্যে এসেছি এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। ঐক্যমত থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং আমরা চেষ্টা করব যেখানেই সম্ভব ঐক্যমতের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনায় বাজেট ২০২৫- ২৬’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকে সরকারের দায়মুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনার প্রসঙ্গ ছিল না। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন হয়েছে, সেখানে সাংবিধানিক বৈধতা আছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৬ অনুসারে এটি গঠিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভাইজারি রুল অনুসারে তারা গঠিত হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংবিধান যেহেতু এখন চালু আছে, সাংবিধানিকভাবেই এই সরকার চলছে। সংবিধান যেভাবে বলছে, উপদেষ্টারা মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করবেন। মন্ত্রী হওয়ার জন্য সংবিধানের ১৬৬ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য যে যোগ্যতা থাকতে হয়, এটা উপদেষ্টাম-লীকে মাথায় রাখতে বলব। সেখানে (সংবিধানে) কিন্তু বিদেশি নাগরিকত্বের বিষয়টা অনুমোদন করা নেই।
তিনি আরও বলেন, সংবিধান অনুসারে আপনাদের এই সরকারের অনুমোদন লাগবে পরবর্তী সংসদে। এটাও আপনারা মাথায় রাখবেন। আগামী সংসদে অনুমোদন লাগলে এ সরকারের বৈধতা কীভাবে দেওয়া হবে, কোন জায়গায় দেওয়া হবে সেটা আমরা বিবেচনা করব। সুতরাং জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে অতি দ্রুত যাতে গণতন্ত্রের রূপান্তরের দিকে যেতে পারি, এমন কার্যক্রম আপনারা নেবেন। এই হিসেবে লন্ডনের আলোচনার সূত্র ধরে, যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে, এটা খুব শিগগিরই নির্বাচন কমিশনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করবেন বলে আমরা আশা করি। যাতে নির্বাচন কমিশন জনগণের কাছে বলতে পারে, তারা সরকারের কাছ থেকে নির্দেশনামূলক একটি বার্তা পেয়েছে।
সেমিনারে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।