জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রণীত সুপারিশমালাকে প্রতারণামূলক অভিহিত করে অবিলম্বে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রণীত সুপারিশমালার ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তারা তাদের রিকমন্ডেশন দিয়ে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে। প্রধান উপদেষ্টার সইও আছে সেখানে, তিনিও এই কমিশনের চেয়ারম্যান। এখন অবাক বিষ্ময় আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি, আমরা খুব একেবারে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে যে বিষয়গুলোর সঙ্গে আমরা একমত ছিলাম না, আমরা সেখানে নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছিলাম। সেই নোট অফ ডিসেন্টগুলো লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের)। কিন্তু অবাক বিষয় আমরা লক্ষ্য করলাম, বুধবার যখন তারা এটা প্রকাশ করলেন সেই নোট ডিসেন্টগুলো নেই, পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে, ইগনোর করা হয়েছে। এটা তো ঐকমত্য হতে পারে না। তাহলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিলো কেনো? এই ঐক্যমত্য কমিশন আমি বলব জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা প্রতারণা এবং আমি বলব যে এগুলো অবিলম্বে সংশোধন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ-ওয়াদাবদ্ধ, এখানে সত্যিকার অর্থেই যেটুকু সংস্কার দরকার সেই সংস্কারগুলো করে আপনি একটা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটা নির্বাচন দেবেন, সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পার্লামেন্ট আসবে, সেই পার্লামেন্ট এই দেশের সংকটগুলো সমাধান করবে। আজকে যদি এর থেকে যদি কোন ব্যতয় ঘটে, এর থেকে বাইরে যদি আপনি যান তার দায় দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাকেই (প্রধান উপদেষ্টা) বহন করতে হবে। সেজন্যই আমি আশা করব, তারা তাদের (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) এই উপলব্ধি আসবে এবং অতি দ্রুত এই সংস্কার কমিশন সকল দলগুলোর মধ্যে যেগুলোতে আমরা একমত হয়েছি এবং যেগুলোতে দ্বিমত করেছি সবকিছুকে নিয়ে একটা নির্বাচন আপনি অবিলম্বে দেবেন। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের একটা পার্লামেন্ট তৈরি করতে পারব, জনগণের শাসন আমরা দেশে নিয়ে আসতে পারব।

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে একটি গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৩১ দফা দিয়ে আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলো এই ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনটা করেছি সেখানে সংস্কারের কথাই রয়েছে। বিএনপির জন্ম সংস্কারের মধ্য দিয়ে। কিন্তু অত্যন্ত সচেতনভাবে একটা প্রচারণা চালানো হলো বিএনপি সংস্কার বিরোধী, এটা মিথ্যা প্রচারণা। যে দলটির সংস্কারের মধ্য দিয়ে জন্ম সে কখনো সংস্কার বিরোধী হতে পারে না। কেয়ারটেকার গভমেন্টের ব্যাপারে আপত্তি করলেও আমরাই কিন্তু ইলেকশন করে পার্লামেন্টের সারারাত জেগে সেই কেয়ারটেকার ব্যবস্থাকে পাশ করেছিলাম পার্লামেন্টে। সুতরাং বিএনপিকে কেউ সেইভাবে যদি যেভাবে বলতে চাই এটা হবে নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত, এটা সত্য নয়।।

নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর পরেই নির্বাচনের কথা বলেছিলাম। তখন আমাদেরকে অনেকে বলা হয়েছিল, আমরা ক্ষমতা চাই সেজন্য আমরা অধিক দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছি। আজকে প্রমাণিত হচ্ছে, এই নির্বাচনটা যত দেরি হচ্ছে তত বেশি সেই ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে। যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল দেখতে চায়, এখানে একটা এনার্কি তৈরি করতে চায়, এখানে একটা গণতন্ত্র যেন সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত না হয় সেই ব্যবস্থাটা দেখতে চায় ।

আলোচনা সভায় গণসংহতির জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, এহসান মাহমুদ, শাহনাজ মুন্নী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।