বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বারবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতো না। এ প্রসঙ্গে তিনি ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বাকশালের ঘটনা তুলে ধরেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানী রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২৫ মার্চের এই কালো দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এই দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। হত্যা করেছে লাখো নিরীহ মানুষকে। কিন্তু পাকিস্থান এখনো ক্ষমা চায়নি।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। এটাই এদের চরিত্র। ওরা দেখে, জনগণ যখন ক্ষেপে উঠে, তখন ওরা এভাবে কর্মীদের অরক্ষিত রেখে পালিয়ে যায়। এবার তাই করেছে, জনতার ক্ষোভে ভারতে পালিয়ে গেছে।
‘বাংলাদেশের মহিয়সী নারী বেগম খালেদা প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় ৯ মাস জেলে ছিলেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কার প্রথম শুরু হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে, পরে করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের মৌলিক সংস্কার কিন্তু বিএনপির হাতে দিয়েই। এখন ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে তো বিএনপি, ১৬ সালে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০৩০ ভীষন দিয়েছে। সংস্কার কোন নতুন বিষয় নয়। অথচ অন্তর্বতী সরকার সংস্কারের পাহাড় এনেছে। আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছি, পক্ষে - বিপক্ষে। আমরা বলেছি, নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। এটি আজ ষড়যন্ত্র সৃষ্টি হয়েছে। আজ সোশাল মিডিয়া কিছু কুতুবের আবির্ভাব হয়েছে। তারা যে বাংলাদেশকে কোথায় নিতে চায়। আমাদের জানা নেই। দেশের সেনা বাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। যেটা আমরা মেনে নেব না। কারণ সেনা বাহিনী দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের ভিত্তি তো বিএনপি করেছে। হঠাৎ করেই একটা বিপ্লব হয়নি, বিএনপির নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মধ্যে উঠে এসেছে। বিএনপি খারাপ কাজ করে এমন কথা যেন, না শুনতে হয়। এতে সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে। আগামী বাংলাদেশ আপনাদের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বাস করি, ওরা গাড়ি বহর নিয়ে যা করুক, সমস্যা নেই। আমরা জানি ওরা কি করতে পারবে। আগামী বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার ড মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যকে আমরা সফল করতে পারিনি। দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বারবার হোঁচট খেয়েছি। শুধু কি তাই, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করেছিল স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ। জিয়ার অবদানকে অস্বীকার করতে গিয়ে বারবার আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। অথচ জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন। দেশের মানুষ প্রমাণ করতেছে, ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে সরকার পরিবর্তন করতে পারে, যেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেখিয়েছে। ভোট দিতে বাধা সৃষ্টি করে তাদেরকে বিতাড়িত করে পারে।
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষিত ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে, অছিলা সামনে আনার চেষ্টা করেছে। জনগণ সন্দেহ পোষন করছে, আমরা কিন্তু বুঝি। কেউ বলছে, সংস্কার আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এগুলো বলে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্ব করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। দেশ নির্বাচনমুখী হলে যত ষড়যন্ত্র আসুক না কেন, জনগণ তা মোকাবেলা করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, স্বৈরাচার পতনের মধ্যে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ফিরে পাব, ' না'। এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে প্রশ্নের সম্মুখীন করা হচ্ছে। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা হীন চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন দেখি, বিএনপি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, বিএনপিকে আটকে দেয়া চেষ্টা করা হচ্ছে। বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা চলছে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা করেছিল তাকে জনগণ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
আলোচনা সভায় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।