অভিযোগ আর প্রতিশ্রুতিতে চলছে ডাকসুর নির্বাচনী প্রচারণা। বন্ধের দিনেও চলে প্রচার প্রচারণা। একের পর এক অভিযোগ করে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। একইসাথে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। শিবির সমর্থিত প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন একপক্ষীয় আচরণ করছে। কমিশনে থাকা শিক্ষকেরা একটি নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনের পক্ষে কাজ করছে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে প্রচারণা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম।

আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে থাকা শিক্ষকদের রাজনৈতিক আদর্শ থাকতে পারে; কিন্তু আমরা তাঁদেরকে শুধুই শিক্ষক হিসেবে দেখতে চাই। ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের আকাক্সক্ষা, জুলাই বিপ্লবের আকাক্সক্ষা। সারা দেশের মানুষ ডাকসু নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। সুতরাং এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে।

আবু সাদিক আরও বলেন, কমিশনে থাকা শিক্ষকদের রাজনৈতিক আদর্শ থাকা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এই আদর্শ লালন করতে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনকে সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে ছাত্র এবং শিক্ষকদের মধ্যে একটা বিরোধী অবস্থান তৈরি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এ সময় ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করব। নির্বাচিত হলে একজন শিক্ষার্থীকে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে আর আবাসন-সংকটে পড়তে হবে না। খাদ্যের নিরাপত্তা থাকবে। একশ’ বছরের সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা যাবে না। এসব সংকট সমাধানে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার কথা জানিয়ে আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো জ্ঞান উৎপাদন করা, জ্ঞান বিতরণ করা, জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি করে দেওয়া। সেই কাজটা আমরা করতে পারিনি। আমরা নির্বাচিত হলে এই জায়গায় কাজ করব।

ছাত্রদলের প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটা গোষ্ঠী অনলাইনে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আপনারা কোনো অপপ্রচারে কান দেবেন না। যে ঘটনাই ঘটুক না কেন, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে তারপর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমরা কোনো অপরাধ করলে আপনাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু কোনো মিথ্যা ঘটনা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না।

গতকাল শুক্রবার জুমার নামায শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ কথাগুলো বলেন।

আবিদুল বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের প্যানেলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদপ্রার্থীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, আমাদের প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটা গোষ্ঠী অনলাইনে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘অনলাইনে অপপ্রচার চালাতে থাকলে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। আমরা কোনো অভিযোগ দিতে চাই না। অভিযোগের দিকে যেতে চাই না। সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পথে সম্মিলিতভাবে হাঁটতে চাই। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে যেভাবে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে, সেটি ফিরিয়ে আনতে চাই। আশা করি, সেটির সূচনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই হবে। ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই যেন সবার প্রতি সহযোগিতামূলক আচরণ করে, সেই প্রত্যাশা করছি।

ডাকসু নির্বাচনের এই ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন, ইনস্টিটিউটÑযেখানেই যাচ্ছি, সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। ক্যাম্পাসে নির্বাচনের সুন্দর আমেজ বইছে। কিছু কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, যেগুলো নিয়ে আমরা প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। ডাকসু নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবিদুল বলেন, ‘আমি আবারও অনুরোধ করব, যেসব ফেসবুক পেজ বা অনলাইনে বিভিন্ন প্রার্থীর সম্পর্কে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এসব পেজ থেকে নানা ভুল তথ্য, অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন-বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী আরিফুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী মেহেদী হাসান প্রমুখ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেছেন, ক্যাম্পাসের ডাকসু নির্বাচনে ডিজিটাল মোবাইল জার্নালিজম পুরো নির্বাচনের পরিবেশকে নষ্ট করছে। বৃহস্পতিবার রাতে তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ অভিযোগ করেন তিনি।

পোস্টে তিনি লেখেন, প্রার্থীদের সাথে ভোটারদের কথা বলার সহজ স্বাভাবিক প্রসেসকে কঠিন করে দিচ্ছে। প্রার্থীদের পেছনে প্রতিটা পদক্ষেপ ভিডিও করতে থাকা কতটা সমীচীন দেখায় সেটা আমার প্রশ্ন! বারবার নিষেধ করার পরও সাংবাদিকদের এ ধরনের নীতি বহির্ভূত কার্যক্রম থামানো যাচ্ছে না। উমামা ফাতেমা অভিযোগ করেন বলেন, ব্যক্তির কনসেন্টের বাইরে গিয়ে ভিডিও করা, ক্রপ করে ভিডিও ভিন্ন এঙ্গেলে প্রদর্শন করার কাজ থামানো যায় না। সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা প্রার্থী ও ভোটারের প্রাইভেসি মেনে চলুন। ভোটার ও প্রার্থীর সম্মতির বাইরে অযাচিতভাবে ভিডিও করে ভোটের পরিবেশটা নষ্ট করবেন না।