বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিআর পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচিত সংসদেই হবে। তিনি বলেন, পিআরের বিষয়টা নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবে তারা আমরা উদ্বিগ্ন হই। সেজন্য আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই বিষয়টা (পিআর) আগামী পার্লামেন্টের উপরে ছেড়ে দিতে হবে। পার্লামেন্টের প্রতিনিধি, জনগণ যদি মনে করে, পিআরে যাবে; যাবে। কিন্তু এখন তো তারা এটা সম্পর্কে কিছুই জানে না। গতকাল সোমবার দুপুরে এক মতবিনিময় সভায় বিএনপির মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা এবং আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থিতা হিসেবে মনোনয়নের বিষয়টি তুলে ধরেন। বিএনপি মহাসচিব আগামী নির্বাচনে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বাত্মক সহযোগিতা চান এবং তাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার কথা জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর পদ্ধতির সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তির যে স্বাধীনতা থাকে তার নির্বাচিত রিপ্রেজেন্টেটিভ চুজ করবার সেই স্বাধীনতাটা দলকেই চুজ করতে হয়। অর্থাৎ ওই দলকে ভোট দিতে হবে, দল রিপ্রেজেন্টেটিভ নমিনেশনের পরে তাদেরকে পার্লামেন্টে আসার জন্য। এটার সঙ্গে আমাদের দ্বিমত। আমরা জানি, যে ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন জনগণ, তারা তাদের পছন্দমত ব্যক্তিকে ভোট দেবে সেটা দলের লোকই হবে। এই বিষয়গুলোর আমি অবতারণা করলাম এইজন্য যে, এগুলো আমাদের সামনে আসছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, একটা জিনিস সবসময় মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের সমাজের রাষ্ট্রের জাতির আত্মা বা সোল। এই আত্মা ১৯৭১ সালে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক একটা বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য যুদ্ধ করেছি, আমাদের যে সোল আছে এই সোলকে আমরা নষ্ট হতে দিতে চাই না। আজকে যে কোনভাবেই হোক একটা প্রচেষ্টা আছে যে ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করার, সেই ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করার কোন অবকাশ এখানে আছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা সবাই একটা জাতি এটাকে আলাদা করার সুযোগ নেই।

আগামী নির্বাচনে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বাত্মক সহযোগিতা চান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমরা আগামী নির্বাচনে আপনাদের পুরো সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করছি। মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের যে দাবি, যেটা আপনারা আশা করেছেন দলীয় মনোনয়নের জন্য, নিঃসন্দেহে আমি আপনাদের এই পত্রটি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়ে দেব এবং সেটাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখব, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের যে প্রত্যাশা আপনাদের কাছে সবসময় থাকবে যে, আপনারা একটু সর্বমত সবসময় পেছনে পড়ে থাকবেন কথা বলবেন না। আপনাদের দাবি-দাওয়া আপনাদের যে প্রয়োজন সে কথাগুলো আপনাদের জোরের সাথে বলতে হবে। আপনারা কখনোই মনে করবেন না যে, আপনারা সংখ্যালঘু, সংখ্যা লগিষ্ঠ, আমরা ক্ষুদ্র এই কথাগুলো মনে করলে কিন্তু পিছিয়ে পড়তে হবে।

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক রকম রাজনীতি হচ্ছে, অনেক রকম কথা হচ্ছে। আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার এগুলোর ঊধের্¦ উঠে নির্বাচন করবে। যেটা হবে সুুষ্ঠু-অবাধ, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু মাঝে মাঝেই আমরা এমন কতগুলো বিষয় দেখতে পাই যে বিষয়গুলো আমাদেরকে খুব উদ্বিগ্ন করে তোলে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের জন্য কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের মধ্যে আলোচনা শেষ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতামত নিয়ে তাদের আলোচনা শেষ হয়েছে। আগামী ১৭ তারিখে আমরা সবাই আশা করছি, যেগুলোতে একমত হয়েছে সেগুলোতে সব দল স্বাক্ষর করবে এবং যেহেতু একমত হতে পারেনি সেগুলো আসন্ন নির্বাচনে সে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের ম্যানিফেস্টো হিসেবে নিয়ে আসবে জনগণের সামনে সেটাকে প্রস্তাব আকারে তারা তুলে ধরবে, সেভাবেই তারা চিন্তা করেছেন।

খ্রিস্টান ল‘ইয়াস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আলবার্ট রোজারিও‘র সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরামের অনিল লিও কস্তার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বেনেডিক্ট আলো ডি রোজারিও, পিউস কস্তা, রীতা রোজলীন কস্তা, প্রতাপ আগাস্টিন গোমেজ, শংকর প্যাট্রিক কস্তা, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, বিএনপির ধর্ম বিষয়কসহ সম্পাদক জন গোমেজ, রমেশ দত্ত, নির্বাহী কমিটির সদস্য সুশীল বড়ুয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।