উত্তম চরিত্র, মানব সেবা ও ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে। আল্লাহর কাছে জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে যোগ্যতা অর্জনের বিকল্প নেই। এজন্য ব্যাপক পড়াশুনো করতে হবে। পথহারা মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে দাওয়াতী কাজ বৃদ্ধি করতে হবে। সমাজ এবং রাষ্ট্রের সর্বপর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। দায়িত্বশীলদেরকে অবশ্যই প্রতিটি কর্মী, সহযোগী ও সমর্থকদের ব্যাপারে প্রাকটিকাল ও থিউরি ক্যাল অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
শুক্রবার (১৬ মে) গাজীপুর মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত দায়িত্বশীল প্রশিক্ষন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ইসলমী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডাঃ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েমের জন্য গাজীপুর মহানগর জামায়াতের দায়িত্বশীলদের অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে। এলাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লায়, অলিতে-গলিতে আপনাদের বিচরন নিশ্চিত করতে হবে। সব সময় অসহায় দুস্থ আর্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দলমতের উর্ধ্বে উঠে মানব সেবা করতে হবে।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে, দেশের নিরীহ ছাত্র জনতার আন্দোলনে ৫ আগষ্ট আমরা দ্বিতীয় বার স্বাধীনতা পেয়েছি। সুতরাং এই ফসল আমাদেরকে যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে।
গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য অধ্যাপক মুহা: জামাল উদদীনের সভাপতিত্বে ও গাজীপুর মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি আবু সাইদ মুহাম্মদ ফারুকের সঞ্চালনায় উক্ত দায়িত্বশীল প্রশিক্ষন কর্মশালায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাসুম।
তিনি প্রধান বক্তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৪৭ সালে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম বৃটিশদের অপশাসন থেকে। ১৯৫২ সালে আমরা মাতৃভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন করেছিলাম। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে স্বাধীনতা পেয়েছি। তখন শুধু একটি পতাকা, একটি মানচিত্র ও একটুকরো জমি পেয়েছিলাম। কিন্তু প্রকৃত স্বাধীনতা, প্রকৃত সুখ শান্তি আমরা পাইনি। তাই আবারও আমাদের নিরীহ নিরপরাধ ছাত্র জনতার আন্দোলনের ফলে ৫ আগষ্ট আমরা দ্বিতীয় বার আবারও স্বাধীনতা পেয়েছি। সুতরাং এই ফসল আমাদেরকে স্ব-যতনে ধরে রাখতে হবে। দেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষ গুলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা কর্মী সমর্থকদের দিকে চেয়ে আছেন। সুতরাং এই কাজ গুলো আপনাদেরই করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশে আজও নিত্য পণ্যের মূল্যের উর্ধ্বগতি। নিম্ন আয়ের মানুষ এখনো দিশেহারা। দেশের সাধারন মানুষ গুলো এখনো নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছে। গণতন্ত্র হরনের জন্য এখনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। ভূলুণ্ঠিত ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্য বদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। ভোটাররা যাতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তার জন্য স্বচেষ্ট থাকতে হবে। ক্ষমতাকে পাকাপোক্তা করতে নব্য জুলুমবাজরা নতুন করে নতুন নতুন ছক আকছেন। তাই দেশবিরোধী সকল চক্রান্ত রুখে দিতে সব ভেদাভেদ ভুলে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা উত্তর অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিটি নেতা কর্মী সমর্থক দানশীল, পরোপকারী, দেশ প্রেমিক। তাঁরা সব সময় অসহায় দুস্থ আর্ত মানবতার সেবায় নিয়োজিত। জামায়াত কর্মী মানেই সমাজ কর্মী। জামায়াতের প্রত্যেক নেতা কর্মী সহযোগীকে অবশ্যই একজন সমাজ কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। মানুষের বিপদ আপদে পাশে থাকতে হবে। প্রতিটি নির্বাচনের জন্য জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
বিশেষ আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও ময়মনসিংহ অঞ্চল পরিচালক ডঃ অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ছামিউল হক ফারুকী। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, দোয়া কবুলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে, হালাল উপার্জন ও হালাল খাবার। কারণ, হালাল উপার্জন ও হালাল খাবার ছাড়া কোনো দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।
সভাপতির বক্তব্যে গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য অধ্যাপক মুহা: জামাল উদ্দীন বলেন, অবৈধ ও জুলুমবাজ সরকারের পতনের পরও তাকওয়াবান সরকার না থাকায় দেশ ও জাতি দুর্নীতি ও হয়রানি থেকে এখনো মুক্তি পায়নি। জাতিকে মুক্তি দিতে হলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা কর্মীদের অগ্রনী ভূমিকা রাখবে হবে। তাই সরকার পতনের পর নব্য জুলুমবাজরা যাতে নতুন করে জনগণের উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেই জন্য আন্দোলনে সবাইকে ঐক্য বদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সকাল ৭টায় উক্ত দায়িত্বশীল প্রশিক্ষন কর্মশালাটি শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত চলে। উক্ত দায়িত্বশীল প্রশিক্ষন কর্মশালা আরও বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর, গাজীপুর-৫ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মোঃ খায়রুল হাসান।
উক্ত প্রশিক্ষন কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ডঃ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও গাজীপুর মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মোঃ আফজাল হোসাইন, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ আজহারুল ইসলাম, বায়তুল মাল সেক্রেটারি মাওলানা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, অফিস সেক্রেটারি আবু সিনা নুরুল ইসলাম মামুন, এ এইচ এম ইরফানুল হক, মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ নেয়ামত উল্লাহ শাকের, মাওলানা মোঃ আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
উক্ত দায়িত্বশীল প্রশিক্ষন কর্মশালায় মহানগরীর সকল শুরা ও কর্ম পরিষদ সদস্য বৃন্দ, থানা আমীর গন, থানা শুরা ও কর্ম পরিষদ সদস্য বৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি ও সেক্রেটারি এবং টীম সদস্যগন অংশ গ্রহন করেছেন। দায়িত্বশীল সমাবেশে গাজীপুর-১ আসনের জামায়াত মনোনীত সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। যাকে গাজীপুর-১ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তিনি হলেন সাবেক সচিব মোঃ শাহ্ আলম বকশী। উল্লেখ্য এর আগে গাজীপুরের অন্যান্য ৪ টি আসনের জামায়াত মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল।