জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি-কে হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে সম্মিলিত নারী প্রয়াসের উদ্যোগে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভানেত্রী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সেক্রেটারি ড. ফেরদৌস আরা খানম, সহকারী সেক্রেটারি মাহসিনা মমতাজ মারিয়া, সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সদস্য সাংবাদিক লাবিন রহমান, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিশাত শারমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন, জুলাই যোদ্ধা জান্নাতুন নাঈম প্রমি, সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সদস্য রায়হানা নাসিম প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, শহীদ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড জাতির বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ আজও বিচার প্রক্রিয়ায় গড়িমসি ও দায়ীদের রক্ষার অপচেষ্টা চলছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বক্তরা আরও বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে নারী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়বে। মানববন্ধন থেকে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়, শহীদ ওসমান হাদির হত্যার বিচার নিয়ে কোনো টালবাহানা চলবে না। ফাঁসি ছাড়া জনগণ মেনে নেবে না।
সভাপতির বক্তব্যে ড. শামীমা তাসনিম বলেন, জুলাই বিপ্লবে এতো-এতো আত্মদানের পরও আমরা আমাদের বাংলাদেশকে মুক্ত করতে পারিনি। ৫৪ বছর ধরে আমরা আজও স্বাধীনতাটাই খুঁজছি। বিপ্লব পরবর্তী জুলাই যোদ্ধা হাদিকে হত্যার ঘটনাকে সিইসি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আপনার সন্তানের মাথায় পিছন থেকে গুলি করলে সেই গুলি সামনে দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পর আপনার সন্তানের নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পারবেন এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? - মোটেও না। তাই সিইসিকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে তিনি আহ্বান জানান।
হাদির সঙ্গে মির্জা আব্বাসের কথোপকথন তুলে ধরে তিনি বলেন, হাদি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে কত সুন্দর এবং বিনয়ের সঙ্গে জবাব দিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানান দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আবরারকে ছাত্র লীগের সন্ত্রাসীরা হত্যার পরপর শাকিব নামের আরেক ছাত্রকে ছাত্র দলের নেতাকর্মীরা হত্যা করেছে। যার সিসি টিভি ফুটেজ রয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় আজকে হাদিকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি এভাবে আরও তরুণ বিপ্লবীরা হত্যার শিকার হতে পারে। আর একটা প্রানের ওপর গুলি চললে নারী সমাজ বসে থাকবে না।
তিনি প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা গত এক সাপ্তাহ আপনার সরকারের সক্ষমতা দেখতে চেয়েছি কিন্তু আশানুরূপ কিছু জাতি দেখেনি। যখন আপনার আইন উপদেষ্টা ফেসবুকে পোস্ট করে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেন তখন জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে বা কারা? এই প্রশ্নের জবাব প্রধান উপদেষ্টাকেই দিতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি নির্বাচনের প্রার্থীদের একটি করে বন্ধুক দিতে যাচ্ছেন। তাহলে ১৬ কোটি মানুষ সবাই কী তিনি একটি করে বন্ধুক দেবেন?- বন্ধুক দিয়ে কী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়? হাদির হত্যাকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করার প্রতিক্রিয়ায় ছাত্র সমাজ বলেছিল কেউ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করাতে পারলে তাকে ১ কোটি টাকা পুরস্কার দিবে। ছাত্র সমাজের এই ঘোষণা প্রমান করে টাকা দিয়ে এদেশের জনগণকে কেনা যাবে না। জনগণ ন্যায় বিচার চায়, রাষ্ট্রের সক্ষমতা দেখতে চায়। হাদির খুনি ফয়সাল করিম মাসুদ অস্ত্রসহ আটকের পর কিভাবে দুই দু’বার জামিন নিয়েছে?- কারা তাকে সহযোগিতা করেছে সেই সকল আইনজীবী ও বিচারকদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার দাবি জানিয়ে ড. শামীমা তাসনিম বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেওয়া আইনজীবী ও বিচারকদের বিচারের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু করতে হবে।