বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে "গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা"-এর ওপর ইসরায়েলী হামলার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা যাত্রায় সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে ছাত্রশিবিরের প্রোট্যাস্ট এন্ড সলিডারিটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর সায়েন্সল্যাব থেকে প্রোট্যাস্ট এন্ড সলিডারিটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি হেলাল উদ্দিন ও মহানগর পশ্চিম শাখার সভাপতি হাফেজ আবু তাহেরের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিবগাতুল্লাহ বলেন, ফিলিস্তিনে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা চলছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মৌলিক অধিকারÑখাবার, চিকিৎসাসহ সব মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যখন ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও মানবিক সংগঠনগুলো সাহায্য নিয়ে যেতে চায়, তখন সেগুলো পৌঁছাতে দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো যেখানে তাদের সহযোগিতা করার কথা, সেখানে বরং বিরোধিতা করছে। আমরা এমন রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতি ধিক্কার জানাই।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব মুসলমানই নয়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ ফিলিস্তিনের মজলুমদের পাশে আছে। আমরাও বাংলাদেশ থেকে তাদের পক্ষে আছি এবং পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি। আজ হোক বা কাল হোকÑফিলিস্তিন স্বাধীন হবেই, ইনশাআল্লাহ।
বিক্ষোভ-পরবর্তী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, শিল্প ও সংস্কৃতি সম্পাদক হাফেজ আবু মুসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ, ঢাকা মহানগর পূর্ব সভাপতি আসিফ আব্দুল্লাহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম এবং জাকসুর জিএস মাজহারুল ইসলাম।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক মু’তাসিম বিল্লাহ শাহেদী, সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুল মোহাইমেনসহ ঢাকাস্থ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান: আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা-তে ই'স'রা'ই'লে'র ব'র্ব'র হামলা ও অবৈধভাবে আটকের তীব্র নিন্দা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ নিন্দা জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গা'জা'য় চলমান অবরোধ ভাঙতে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে ৫০টিরও বেশি জাহাজের একটি বহর গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে তিউনিসিয়া, ইতালি ও গ্রিস থেকে আরও নৌযান এতে যোগ দেয়। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা ও মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলাসহ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে ৪৪টিরও বেশি দেশের কয়েক হাজার সচেতন নাগরিক এতে অংশ নেয়। নৌবহরটি গাজার উপকূলের নিকটবর্তী হলে ই'স'রা'য়ে'লি বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। ইতোমধ্যেই ৯টির অধিক জাহাজকে আটক করে নিয়ে যায় তারা। মানবিক সহায়তাবাহী এই বহরে ই'স'রা'য়ে'লে'র আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইন, সামুদ্রিক সুরক্ষা বিধান ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, অবরুদ্ধ গা'জা ইতোমধ্যেই ভ'য়া'ব'হ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। দুই বছরেরও কম সময়ে দখলদার ই'স'রা'য়ে'ল ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষকে শহীদ করেছে, যার অধিকাংশ শিশু ও নারী, এবং ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতালসহ প্রায় সব অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ফ্লোটিলার মতো উদ্যোগ মানবতার জন্য আশার প্রদীপ। বিশ্ব সম্প্রদায়ের এমন মানবিক উদ্যোগে ই'স'রা'য়ে'লে'র এই আ'গ্রা'স'ন কেবল গা'জা'র জনগণকে সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা নয়, বরং বৈশ্বিক মানবতাকেও চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। সারা বিশ্বের মানুষ মানবিক সহায়তামূলক এই যাত্রাকে স্বাগত জানালেও ই'স'রা'য়ে'ল ‘ফ্লোটিলার যাত্রা কোনো মানবিক অভিযান নয়, বরং উস্কানিমূলক’ ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছে।
নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘ, ওআইসি এবং বিশ্বশক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হলো ই'স'রা'য়ে'ল'কে তার এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনা এবং বহরের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিশেষত মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিও এই ঘটনার তাৎক্ষণিকভাবে আনুষ্ঠানিক নিন্দা প্রকাশ ও কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেন এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য দোয়া কামনা করেন। বিশেষ করে নৌযানের বহরে যোগ দেওয়া বৃটিশ-বাংলাদেশী সাহায্যকর্মী রুহি এবং বাংলাদেশী আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ সকল মানবাধিকারকর্মীর নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।