DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

রাজনীতি

এনসিপি’র সাংবাদিক সম্মেলন

নির্বাচনের আগে জুলাই আগস্টের খুনিদের বিচার ও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাই ---- নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যেকোনো নির্বাচনে যাওয়ার আগে জুলাই আগস্টের খুনিদের দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। একইসাথে জুলাই সনদ আমরা নির্বাচনের আগে কার্যকর দেখতে চাই, যেখানে জনগণ দেখতে পাবে কোন রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে আছে, কোন দল বিপক্ষে আছে।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition
P-1a
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটর রূপায়ন টাওয়ারে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম -সংগ্রাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যেকোনো নির্বাচনে যাওয়ার আগে জুলাই আগস্টের খুনিদের দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। একইসাথে জুলাই সনদ আমরা নির্বাচনের আগে কার্যকর দেখতে চাই, যেখানে জনগণ দেখতে পাবে কোন রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে আছে, কোন দল বিপক্ষে আছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপি আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব নিষয় ছাড়াও নানা ইস্যুতে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। সাংবাদিক সম্মেলনে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচনের জন্য নাগরিক পার্টির প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা বলেছি, সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচন দেখতে চাই। শুধু নির্বাচনই নাগরিক পার্টির এই মুহূর্তে একমাত্র দাবি নয়। তার আগে আমরা দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম দেখতে চাই। আর ঐকমত্যের যে জুলাই সনদ সই হওয়ার কথা, জনগণ দেখতে পাবে কোন রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে আছে, কোন দল বিপক্ষে আছে, এই জুলাই সনদ আমরা নির্বাচনের আগে কার্যকর দেখতে চাই। জুলাই ঘোষণাপত্রের যা দাবি উঠেছিল ছাত্রদের পক্ষ থেকে সেটার বাস্তবায়ন দেখতে চাই আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে।

বক্তব্যের শুর”তে সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি যেন জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার যেন কঠোর অবস্থান নেয়। নারী নিপীড়নকারীদের যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনা হয়।

সংবদসংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাক্ষাৎকারে কিছু মিসকোট হয়েছে বা ভুল অনুবাদ (দেশীয় গণমাধ্যমে) হয়েছে। আর্থিক বিষয়ে আমি বলেছিলাম আমাদের সমাজের সচ্ছল মানুষ ও শুভাকাক্সক্ষী যারা রয়েছেন তারা মূলত আমাদের সহযোগিতা করেন। আমরা একটা ক্রাউডফান্ডিংয়ের দিকে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের কার্যালয় ও নির্বাচনের ফান্ড গঠন করব। এটার ভুল অনুবাদ এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এটা সংশোধনের অনুরোধ থাকবে।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এ বছর নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমি ঠিক এভাবে কথা বলিনি। আমি বলেছিলাম, এখন দেশের যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ যেমন নাজুক অবস্থায় আছে, এ রকম নাজুক অবস্থায় নির্বাচন করা অনেক বেশি কঠিন হবে। তাদের সক্ষমতার পরীক্ষা হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। সেখান থেকে আমি বলেছি, অবশ্যই নির্বাচনের আগে পুলিশিং ব্যবস্থা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্যই উন্নত করতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে, সামাজিক শক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে।

নারীদের প্রতি নিপীড়নের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বর্তমানের নাগরিক পার্টির নারী সদস্যদের স্পেসিফিকভাবে চিহ্নিত করে সাইবার জগতে তাদের বির”দ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার, বুলিং চলছে। এক ধরনের হেনস্তার মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হচ্ছে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার, তাদের কর্মী তারা অনেক বেশি যুক্ত হচ্ছেন এর সঙ্গে। নারীদের টার্গেট করা হচ্ছে, যেন নারীরা দেশ গঠনের কাজে যুক্ত হতে না পারে। তাদের একটা মেন্টাল ট্রমার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এটার জন্য সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এনসিপির কার্যক্রম বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, আমরা এখন রাজনৈতিক নিবন্ধনের শর্তাবলি নিয়ে মনযোগী হচ্ছি। তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। রোজার পর পুরোদমে শুরু করবো। আমরা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করছি। জোট গঠনের বা নির্বাচনের প্রার্থীর বিষয়ে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করতে আরও সময় লাগবে।

নাহিদ বলেন, আমরা নির্বাচনের সময়ের চেয়ে প্রেক্ষাপটকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে দাবি জানাচ্ছি। জুলাই সনদ আর জুলাই ঘোষণাপত্র আলাদা জিনিস। ঘোষণাপত্রের দাবি আরও আগে উঠেছিল ছাত্রদের পক্ষ থেকে। আর জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করছিলেন যে, সংস্কারের ঐক্যমত্যের ওপর একটা চার্টার তৈরি হবে যেখানে বাংলাদেশের রূপরেখা ও সংস্কারের কী কী এখন করব, কী কী ভবিষ্যতে করব, রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের কাছে কমিটমেন্ট দিতে হবে। সেটাকে আমরা বলছি জুলাই সনদ। গণঅভ্যুত্থানে মানুষ পরিবর্তনের ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা থেকে এসেছিল। এই দুইটা পূরণ করতে হবে। সেটা আমি বলেছি যে, আমরা যেন ভুলে না যাই বিচার ও সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেন আমরা নির্বাচনের দিকে যাই।

নাগরিক পার্টির আর্থিক বিষয় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, আর্থিক জায়গা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এ বিষয়টা পরিবর্তন আসুক আমরা চাই। আমাদের জায়গা থেকে এটা দাবি করছি। এককভাবে এই সংস্কৃতি আমরা পরিবর্তন করতে পারব না। আমাদের কারা সহযোগিতা করছে, এটা যদি আমরা প্রকাশ করি, তারা যে ক্ষতির শিকার হবেন না, সেটার নিশ্চয়তা আমাদের দিতে হবে। এই কালচার তো বাংলাদেশে তৈরি করা যায়নি। আমরা চাই এই কালচার তৈরি হোক এবং সব রাজনৈতিক দল তা গ্রহণ কর”ক।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি নারীর ওপর সহিংসতা ঘটছে দেশের বিভিন্ন স্থানে, ধর্ষণের মতো ঘটনা, ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক পার্টি উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছে। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে নারী নিপীড়নকারীদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনা হয়।

৩০০ আসনে দলটির প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাহিদ ইসলাম বলেন, দল আত্মপ্রকাশের পর আমরা এখন নিবন্ধনের শর্তাবলির প্রতি গুরুত্বারোপ করছি, সংগঠনিক বিস্তারে মনোযোগ দিয়েছি। রোজার পর এগুলো পুরোদমে চলবে। এরপর আমরা ভাববো।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, আগামী ১০ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারাদেশের শহীদ পরিবার ও আহত পরিবারের সাথে ইফতারের আয়োজন করবে এনসিপি। এছাড়া ১১ মার্চ দেশের বিশিষ্টজন, ব্যবসায়ীসহ অন্যান্যদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হবে।

তৃণমূলে সাংগঠনিক বিস্তারে এর কাজ চলছে জানিয়ে নাহিদ জানান, আমরা রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সব মানুষের কাছে যাবো আর্থিক সহায়তার জন্য, কারণ এটা জনমানুষের দল। আগামী ১০ মার্চ আন্দোলনে আহত ও নিহতদের স্বজনদের নিয়ে এনসিপির ইফতার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বলে জানান তিনি।

এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘এই পুলিশ প্রশাসনের একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিনের নেই। তাদের সক্ষমতা পরীক্ষা করা হয় নাই দীর্ঘদিন ধরে। সেই জায়গা থেকে আমি বলেছি আমাদের নির্বাচনের আগে অবশ্যই এই পুলিশিং ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা যে পরিস্থিতি আছে, সেটা উন্নত করতে হবে। সেটার জন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো ও সামাজিক শক্তিগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (এনএসইউ) এনসিপি নেতা সারজিস আলমের সঙ্গে ঘটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় জড়িত না থাকলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাত্রদলের ওপর দোষ চাপানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল নেতারা। ছাত্রদলের এই বক্তব্যের জবাবে সারজিস বলেন, বসুন্ধরার ঘটনায় পুরো ছাত্রদলকে দায় দেই নাই। তবে তাদের নেতা শাকিল সন্ত্রাসীদের নিয়ে যে কাজ করেছে, এতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলবো।

আমার বক্তব্যের সঙ্গে নির্বাচন পেছানোর কথা নেই। তবে নির্বাচন পেছানোর ভয় কেন পায় রাজনৈতিক দলগুলো? কেন দ্রুত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়, প্রশ্ন রাখেন সারজিস।