বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা শাখার আয়োজনে দিনব্যাপী সদস্য (রুকন) শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ মে) যশোর জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে শিক্ষা শিবিরের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও যশোর জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসূল। সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর সিদ্দিকী।

সদস্য (রুকন) শিক্ষার শিবিরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য জনাব মোঃ আব্দুর রব। তিনি জামায়াতের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, দেশের ইসলামী আন্দোলনকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে প্রত্যেক সদস্যকে আদর্শিক, নৈতিক ও সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কুরআন-হাদিসের আলোকে নিজেদের জীবন গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গোড়াপত্তন হয়েছিল একটি মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। এ দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কেবল রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে নয় বরং একটি আদর্শিক আন্দোলন, সমাজ সংস্কার এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। আমাদের এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা ছিলেন আল্লাহভীরু, সমাজ সচেতন এবং দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব। তাঁদের নেতৃত্বে এই সংগঠন ধীরে ধীরে দেশের মানুষের মাঝে ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আন্দোলনে রূপ নেয়।

১৯৪১ সালে স্যার সৈয়দ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ.)-এর নেতৃত্বে উপমহাদেশে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মূল লক্ষ্য হলো সমাজের প্রতিটি স্তরে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিধান প্রতিষ্ঠা করা এবং ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি সুদৃঢ় করা।

এই দলের ইতিহাস ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস। একাত্তরের ভয়াবহ যুদ্ধ, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক শাসন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সবকিছুতেই জামায়াত তার অবস্থান ধরে রেখেছে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে। শত বাধা-বিপত্তি, জেল-জুলুম, নির্যাতন, হত্যাকান্ডের মুখেও আমাদের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের পতাকা তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জামায়াতে ইসলামীর অবদান অনস্বীকার্য। ইসলামি আন্দোলনের এই সংগঠনটি সমাজ সংস্কার, শিক্ষা বিস্তার, মানবিক সেবা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের দুর্যোগ মুহূর্তেও জামায়াত সর্বপ্রথম এগিয়ে এসেছে অসহায় মানুষের পাশে। আজকের প্রজন্মের দায়িত্ব এই গৌরবময় ইতিহাস জানা এবং সেই ধারাবাহিকতাকে ধরে রাখা। কারণ, এই ঐতিহ্য আমাদের শক্তি, আমাদের অনুপ্রেরণা।

বিশেষ অতিথি বক্তব্য কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসেন আনুগত্য ও পরামর্শের গুরুত্ব বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন বলেন আনুগত্য ও পরামর্শের গুরুত্ব এটি কোনো সাধারণ বিষয় নয়। বরং ইসলামী আন্দোলনের কাঠামোকে সুদৃঢ় ও শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখার জন্য এটি অপরিহার্য বিষয়।

তিনি বলেন ,জামায়াতে ইসলামীর কাঠামো মজবুত রাখতে নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য অপরিহার্য। তবে এই আনুগত্য অন্ধ নয়; বরং তা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, কুরআন ও সুন্নাহর সীমারেখার মধ্যে থেকে হতে হবে ।

অনুষ্ঠানে সমাজ পরিবর্তনে সামাজিক কাজের গুরুত্ব ও পদ্ধতি বিষয়ে বিশেষ আলোচনা করেন অধ্যাপক গোলাম রসূল। দারসুল হাদিস প্রদান করেন সাবেক মাগুরা জেলা আমির ও যশোর অঞ্চল টিম সদস্য ডঃ মুহাম্মদ আলমগীর বিশ্বাস।

এছাড়াও শিক্ষা শিবিরে উপস্থিত ছিলেন জেলার নায়েবে আমির হাবিবুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস, মাওলানা রেজাউল করিম, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, প্রচার সেক্রেটারি শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস, জেলা কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক আবুল হাশেম রেজা প্রমুখ। এই শিবিরে জেলার ৬০০ জন সদস্য (রুকন)অংশগ্রহণ করেন।