জামায়াতে ইসলামী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বরাবরই কঠোর উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জামায়াতে ইসলামী আপোষহীন। জামায়াতে ইসলামী প্রতিবেশী রাষ্ট্র সহ বিশ্বের যেকোন রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী। কারো দাদাগিরি কিংবা কর্তৃত্ব জামায়াতে ইসলামী মেনে নেয়নি, নিবে না। যার কারণে জামায়াতে ইসলামী আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের শিকার হয়েছে। আধিপত্যবাদী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চক্রান্তে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, প্রতিক কেড়ে নেওয়া হয়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিচারিক হত্যা করা হয়েছে। এরপরও জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রা থামাতে না পেরে সবশেষ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর উপর আওয়ামী লীগ যত জুলুম করেছে সবগুলোর নির্দেশদাতা প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তাদের মদদে শেখ হাসিনা ১৬ বছর জুলুমের শাসন কায়েম করেছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান ভূমিকা রেখেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আধিপত্যবাদের কাছে মাথানত না করায় তারা শুধু জামায়াতে ইসলামীর উপর রাজনৈতিক জুলুমই করেনি। তারা জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসেবে অপপ্রচার চালিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা বিরোধী নয়, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। জনগণ ভালো করেই জানে, জামায়াতে ইসলামী এদেশে আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে দেয়নি, দিবে না। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের মাধ্যমে এদেশে আধিপত্যবাদের কবর রচনা হয়েছে। যার কারণে পরাজিত শক্তি নতুন করে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। যত অপপ্রচারই হোক জনগনকে সঙ্গে নিয়ে সেই অপপ্রচার রুখে দিয়ে জামায়াতে ইসলামী একটি কল্যাণ, মানবিক ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়বে।
শুক্রবার (২ মে) রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যাত্রাবাড়ী মধ্য থানা আয়োজিত ২দিন ব্যাপী লিডারশীপ ট্রেনিংয়ের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, পরাজিত শক্তির এদেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তারা চেয়েছে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, দখল দিয়ে, ধর্মীয় উপাসনালয় ভাংচুর করে সম্প্রীতির বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জামায়াতে ইসলামী সহ ইসলামী দলগুলোর উপর দায় চাপিয়ে দিতে। কিন্তু আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ৬ আগস্ট ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে সাহস দিয়েছেন। বৌদ্ধ ধর্মের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করে তাদেরও স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে থাকার প্রেরণা দিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, প্রত্যেকে এদেশের সম্মানিত ও গর্বিত নাগরিক। সেই সাথে আমীরে জামায়াত দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকতে। দলের নেতাকর্মীরা সহ সারাদেশের আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রেখে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পরাজিত শক্তি ভারতীয় আধিপত্যবাদ যখন দেখলো জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ বিশ্বের কাছে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, জামায়াতে ইসলামী মৌলবাদ নয়, শান্তির দূত। শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। ঠিক তখন জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত হয়েছে। তবে যত ষড়যন্ত্র করুক এদেশের প্রত্যেক ধর্মের, প্রতিটি মানুষ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্ক সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পেয়ে গেছে। তারা দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে বিশ্বাস করে জামায়াতে ইসলামী সম্প্রীতি বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইসলামিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
অমুসলিমদের সংগঠনের দাওয়াত দেওয়া জামায়াতে ইসলামীর নিয়মিত কর্মসূচি উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইসলামের দাওয়াত কেবল মুসলিমদের কাছে পৌঁছবে তা নয়। বরং দ্বীনের দাওয়াত সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। এটাই আল্লাহর বিধান। দ্বীনের দাওয়াত পেয়ে কে গ্রহন করবে, কে গ্রহন করবে না এটা ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয়। দ্বীন দাওয়াত দেওয়া ঈমানদারদের দায়িত্ব, ঈমান কবুল করা ব্যক্তির দায়িত্ব। এটাই ইসলামের সৌন্দর্য, এটাই ইসলামের শিক্ষা। সেই শিক্ষায় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় মন্তব্য করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এজন্য জামায়াতে ইসলামী ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে জাতীয়ভাবে একটি অনুষ্ঠান করেছে। ঐ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে দাওয়াত করা হয়েছে। এই নিয়ে অপপ্রচারকারীরা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। সেখানে যাদের দাওয়াত করা হয়েছে তারা সকলেই বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের নেতা হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ সেখানে আসেনি, আসতে পারেনি। ঐ অনুষ্ঠান নিয়ে আসলে তারাই অপপ্রচার চালিয়েছে, যারা নতুন করে এদেশে ভারতীয় আধিপাত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কারণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ স্বীকার করে গেছেন, জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামী কোন দলের নেতাকর্মী তাদের উপর কখনো জুলুম করেনি, তাদের বাড়িঘর দখল করেনি, সম্পদ লুট করেনি। বরং যারা হিন্দুদের পক্ষের লোক দাবি করেছে, তারাই হিন্দুদের শোষন করেছে, হিন্দুদের ঘরবাড়ি দখল করেছে। হিন্দুদের তারা বিগত ৫৪ বছর জিম্মি করে রেখেছে। ৫ আগস্ট হিন্দুরা সেই জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়েছে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের ঐ বক্তব্যে বিশ্ববাসী পরিস্কার হয়ে গেছে, আসলে কারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে দলমত, ধর্মবর্ন, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক অংশগ্রহন করতে পারবে। ইসলামিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তিনি দেশবাসীকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরার সদস্য ও যাত্রাবাড়ী মধ্য থানা আমীর এডভোকেট আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী (ঢাকা-৫ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী) মোহাম্মদ কামাল হোসেন এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী (ঢাকা-৬ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী) অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরার সদস্য ও যাত্রাবাড়ী মধ্য থানা সেক্রেটারী মাওলানা ইমাম হোসাইনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মো. আব্দুর রব এবং মাওলানা আব্দুল মান্নান, যাত্রাবাড়ী পূর্ব থানা আমীর শাহজাহান খান প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মহানগরী ও থানা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।