বিএনপির বিজয় ঠেকানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, রাজপথের সহযোদ্ধা কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর আচরণে পলাতক স্বৈরাচার সরকারের মতো বিএনপির বিজয় ঠেকানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসময় তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, গণতন্ত্রের পথে শর্তের পর শর্ত আরোপ করা হলে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্মানে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা উলু ধ্বনি এবং ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং তারেক রহমান হাত নেড়ে এই অভিবাদনের জবাব দেন।

তারেক রহমান বলেন, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের জনগণ কংশরূপী এক ফ্যাসিস্টের দুঃশাসন, অত্যাচার ও নির্যাতন দেখেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে এবং এখন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই পথ ঝুঁকিমুক্ত নয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আমরা খেয়াল করে দেখছি, এই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কোন কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য, মন্তব্য কিংবা নিত্যনতুন শর্ত বা শর্তের প্রস্তাবনা সামগ্রিকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য ও শর্ত জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে বিএনপিকে ঠেকাতে পলাতক স্বৈরাচার যেভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল, এখন সেই একই ধরনের ‘বিএনপি ঠেকানোর’ অপরাজনীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা মনে করছেন জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে এবং এই ভয়ে বিভিন্ন কৌশল বা শর্তের আশ্রয় নিচ্ছেন, তাদের রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করা উচিত। জনগণের শক্তির ওপর আস্থা রাখুন। জনগণের রায় প্রদানের পথ রুদ্ধ করা উচিত নয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই হয়ত নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য এখনো উপযোগী নয়।

তারেক রহমান বলেন, এই পদ্ধতিতে জনগণ কাকে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করছে, তা পরিষ্কারভাবে জানার সুযোগ থাকে না। তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিসহ অন্যান্য ইস্যুতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতবিরোধ আছে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাধান হয়ে যাবে। এই ধরনের ভিন্ন মত গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি আমরা গণতন্ত্রের পথে শর্তের পর শর্ত আরোপ করতে থাকি, তাহলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে এবং পরাজিত স্বৈরাচার পুনর্বাসনের পথ সুগম হতে পারে।

তিনি বলেন, ধর্মীয় পরিচয়কে কেউ যাতে নিজেদের হীন ও দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে আপনাদের সকলকে সতর্ক থাকার বিনীত আহ্বান জানাই। অতীতে বিভিন্ন সময় দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থাপনা ও বাসাবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাগুলো দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশই কোনো ধর্মীয় কারণে হয়নি। বরং অধিকাংশ ঘটনার নেপথ্য ছিল অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অথবা অবৈধ লোভ-লাভের আশা। তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, দল মত ধর্ম দর্শন যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং ধর্ম বিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গণফোরাম সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অপর্ণা রায় দাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য রনেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুণ রায় চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তপন চন্দ্র মজুমদার, এসএন তরুণ দে, মিল্টন বৈদ্য, পূজা উদযাপন ফ্রন্টের জয়দেব জয়, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত চক্রবর্তী, ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত দেব, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ইনকনের প্রভু বিমলা প্রসাদ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল বারী ড্যানি, জন গোমেজমহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে দেশে একাত্তরকে ভুলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের কথা বার বার স্মরণ করতে চাই। ১৯৭১ সাল আমাকে একটা স্বাধীন দেশ দিয়েছিলো, ভূ-খন্ড দিয়েছিলো, সেজন্য আজকে আমার অস্তিত্ব আছে, আমি টিকে আছি। ২৪’র জুলাই-আগস্টের শহীদরা আমাদেরকে একটা গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এই দুইটা জিনিসই আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশে এক ধরনের উগ্রবাদ মাথা চালা দিয়ে উঠছে। এই উগ্রবাদকে মাথা চালা দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। অতীতে যা হয়েছে, হয়েছে। এখন বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য, বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখার জন্য, বাংলাদেশের সামনে নেওয়ার জন্য, বাংলাদেশ আরো আরো উন্নত করবার জন্য আমাদেরকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি কয়েকদিন আগে চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলাম। ব্যাংককে গিয়ে আমি আমার বন্ধুদের কাছে শুনলাম যে, ওখানে এখন ব্যাংককে সবচাইতে যেগুলো আপনার অভিজাত এলাকা সেই অভিজাতগুলোকে এলাকাগুলোতে বাড়ি ভাড়ার ধুম পড়ে গেছে। সেই বাড়িগুলো ভাড়া করছেন সমস্ত আওয়ামী লীগের বিতাড়িত নেতৃবৃন্দ। তারা একটা যে গাড়ি কিনছেন সেই গাড়িগুলো কোনটাই আপনার ২ কোটি ৩ কোটি টাকার কমে নয়। এসব টাকা কোত্থেকে থেকে গেল? এই দেশের সম্পদকে তারা প্রচার করেছেন।

গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কোনো শক্তি, কোনো ষড়যন্ত্রকারী সেই দিল্লিতে হোক আর কলকাতায় হোক বা বাংলাদেশের মাটিতে হোক কোন ষড়যন্ত্রকারীকে আমরা সহ্য করব না। জুলাই সনদের নামে নানা রকম চক্রান্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা আমাদের জাতীয় সনদ। এর ভিত্তিতে আগামী বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।