বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী ওলামা একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল, মাওলানা মামুনুল হক-এর নেতৃত্বে এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ-এর তত্ত্বাবধানে, আফগানিস্তানের ইসলামি আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলাওয়ী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সফরটি কাবুলে অনুষ্ঠিত একটি সরকারি কর্মসূচির অংশ হিসাবে ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয়।
এই প্রতিনিধি দলটি, যা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন ‘প্রোসপার আফগানিস্তান’ কর্তৃক আয়োজিত ও পরিচালিত, একটি তথ্য-সংগ্রহ ও সৌজন্যমূলক সফরে এসেছে এবং ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ দুই দেশের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার সম্ভাবনা অন্বেষণ করছে। ‘প্রোসপার আফগানিস্তান’ এর এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলোচনা হয় তিনটি মূল বিষয়ে: বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা সম্প্রসারণ, এবং দুই দেশের ওলামা ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি প্রতিনিধি দলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং আফগান-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনায় তিনি উল্লেখ করেন, আফগানিস্তানে তুলা, কার্পেট, শুকনো ফলমূল এবং মার্বেলের মতো খাতে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল কাবুলে সফরে আসবে। তিনি বলেন, একবার আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক চ্যানেল চালু হলে, বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ থেকে আগ্রহ দেখে আমরা উৎসাহিত এবং পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার বিপুল সম্ভাবনা দেখছি।
কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় মন্ত্রী জানান, আফগানিস্তান এই অঞ্চলের প্রায় সব দেশের সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনও সেই উদ্যোগ নেয়নি। তিনি প্রতিনিধিদলের ওলামায়ে কেরামদের অনুরোধ করেন দেশে ফিরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য। প্রতিনিধি দল এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানায় এবং সক্রিয়ভাবে তা এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা আফগান সরকারের আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আশাবাদ জানান যে এই সফর দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত ও ফলপ্রসূ সংলাপের একটি নতুন পথ খুলে দেবে।
খতমে নবুয়ত কমিটির আমীর, মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ বলেন, এই সফর একটি নতুন সূচনার প্রতীক। আমি দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তান কীভাবে পুনর্গঠিত হচ্ছে তা নিজ চোখে দেখতে চেয়েছিলাম, এবং আলহামদুলিল্লাহ, তা সরাসরি দেখার সুযোগ পেয়েছি। বহুদিনের ইচ্ছা ছিল মাওলাওয়ী মুত্তাকি সাহেবের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করার, এবং এবার সে সৌভাগ্য হয়েছে। বাংলাদেশের ওলামা ও আমাদের আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমি তাঁকে আমাদের আসন্ন খাতমে নবুয়ত সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছি — অথবা তাঁর পক্ষে একজন প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ করেছি যদি সময়সীমা সংকট থাকে। আমি বিশ্বাস করি, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের জনগণ দুই দেশের সরকার, ওলামা, সাধারণ মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে বাস্তব উপকার ভোগ করতে পারবে।
প্রতিনিধি দলে আরো রয়েছেন, মাওলানা আব্দুল হক, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মুফতি মাহবুবুল্লাহ কাসেমী ও মুফতি মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ।