বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক মহল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বানচাল ও ব্যহত করার জন্য নিত্য নতুন দাবি তুলে চলেছে। এমন এমন দাবি তুলছেন যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষেরা পরিচিতই না। সংখ্যানুপাতিক পিআর, সংখ্যানুপাতিক ভোট এটা বুঝতে সময় লাগে, এটা বুঝানো কঠিন খুবই কঠিন। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের যৌথ উদ্যোগে রাজনীতিক কাজী জাফর আহমদের ১০ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্রিকায দেখলাম একজন ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত একাধিক ব্যাংক লুটের জন্যে খ্যাত। তিনি আ্ড়াই হাজার কোটি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন হাসিনাকে। উনি এস আলম, দিল্লিতে বসে তিনি ইতিমধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছেন এবং পরিকল্পনা করেছেন যে, কিভাবে ওই টাকাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে নির্বাচন বন্ধ করবে এবং হাসিনাকে আবার দেশে ফিরিয়ে আনবে। এ জন্যই আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করছি, অনেক বেশি সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে। অনেক বেশি আমাদেরকে এখন লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা যদি মনে করে থাকি যে আমরা জিতে গেছি, সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে, তাহলে বিরাট ভুল হবে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আজকে কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক মহল নানা দাবি নিয়ে হুমকি দিচ্ছে, কথা বলছেন, অত্যন্ত জোরেশোরে হুমকি দিচ্ছেন। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে যে, কেন করছেন এটা? বসে নেই কেউ। যারা আপনার ফায়দা নিতে চায় এরা বিভিন্নভাবে কাজ করেছে। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হবে যারা দেশকে ভালোবাসি, যারা আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যারা লড়াই করতে দ্বিধাবোধ করি না, যারা রক্ত দিতে দ্বিধাবোধ করি না, তাদেরকে আজকে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই নূন্যতম বিষয়গুলোর উপরে একমত হয়ে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
চারিদিকে হতাশার ছায়া মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইদানিং মাঝে মাঝে আমার কাছে একটা হতাশার ছায়া ঘোরাঘুরি করে। যেদিকে তাকাই দেখি বেশিরভাগ মানুষই আপনার নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্নীতি, দুর্নীতি, দুর্নীতিৃ আপনি কোন অফিস আদালতে যেতে পারবেন না। আমি এর আগেও কথা বলেছি, আমাকে একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট বলেছেন যে আগে এক লাখ টাকা দিতে হতো, এখন হয় পাঁচ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই পরিবর্তন যে পরিবর্তন নিয়ে আসার কথা ছিল মন মানসিকতার মধ্যে সেই পরিবর্তনটা কিন্তু আনতে পারেনি এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিক নেতাটেতারাও এর মধ্যে জড়িত হয়ে পড়ছেন। যেটা আরো বেশি ক্ষতি করছে বাংলাদেশের জন্য। আজকে বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য আমাদের সকলের এগিয়ে আসা দরকার। এ দেশটা তো আমাদের।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ১৯৭১ সালে আমরা যারা যুদ্ধ করেছিলাম এখানে সবাই আছি। আমাদের অনেকে গুলি খেয়েছে, অনেকের ভাই মারা গেছে, মা মারা গেছে, বাড়িঘর পুড়ে গেছে, গ্রামের উপর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই একাত্তরের কথা আমরা ভুলি নাই, ভা ভুলানো সম্ভব নয়। অনেক প্রচেষ্টা চলছে এটাকে ভুলে দেওয়ার জন্য।
সরকারেও একটি মহল ঘাপটি মেরে আছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের ভেতরে একটা মহল তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করছে যে, এই যারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তারা যেন আসতে না পারে। আজকে যখন দেখি নিউইয়র্কে আমাদের বাংলাদেশের কর্মকর্তাকে, একজন উপদেষ্টা অথবা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদেরকে আওয়ামী লীগের লোকেরা হেনস্তা করছে, হামলা করছে। তখন কোথায় যাব আমরা?
দেশের অর্থনীতির দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে। আমার স্ত্রী সকালে ব্যাংকে ফোন করেছেন কিছু টাকা তোলার জন্যে। ব্যাংক বলেছে যে, সরি ম্যাডাম আমরা ৫ হাজার টাকার বেশি দিতে পারবো না। তাহলে কোথায় আমরা? এই এক বছরের মধ্যে যদি আমরা পরিবর্তন আনতে না পারি তাহলে কিভাবে কি হবে?
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি এখনো বলি সময় আছে..কাউন্ট ইউর সেন্সেস। অতি দ্রুত এই সনদ, এই সংস্কার, এগুলো জটিলতা বৃদ্ধি না করে শেষ করে ফেলেন এবং অতি দ্রুত নির্বাচনের যে ব্যবস্থা ঘোষণা দিয়েছেন সেটার চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিন। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করে ফেলুন এবং একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্বকে নিশ্চিত করুন। এছাড়া কোন বিকল্প নেই।
ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ শফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় জাতীয় পার্টির(কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নজমুল হক নান্নু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।