বিএনপি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক করেছেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো ডায়াস ফেরেস। প্রায় এক ঘন্টারও অধিক সময়ে এই বৈঠকের নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দেশের কূটিৈনতকদের সাথে বৈঠক করছে বিএনপি।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতের পতাকাবাহী গাড়ি প্রবেশ করে। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয় ছাড়াও দেশের আগামী দিনের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকের পর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বস্তুনিষ্ট আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আগামী দিনে নির্বাচিত সরকার আসলে ব্রাজিলের সাথে কী কী কাজ করার সম্ভাবনা আছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি ও প্রাণী সম্পদে ব্রাজিলে অনেক এগিয়ে আছে। সেখানে কীভাবে আগামীদিনে আমাদের সহযোগিতা কোন কোন ক্ষেত্রে করা যেতে পারে সে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, একটা গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা হয়েছে সেটা হচ্ছে স্পোর্টস। আপনারা জানেন, ব্রাজিল দেশটি স্পোর্টস নেশন হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের সাথে আমাদের স্পোর্টসের সহযোগিতা কোথায় কোথায় করা যেতে পারে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্রাজিলিয়ানরা খুবই আগ্রহী বাংলাদেশের সাথে ফুটবল, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন স্পোর্টস এরিয়াতে কাজ করতে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উনার বিশাল আগ্রহ আছে বাংলাদেশের স্পোর্টসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে দেশে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে ব্রাজিলের সহযোগিতা চেয়েছি। রাষ্ট্রদূত বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন।

জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে (রমযানের আগে) একটা জাতীয় ঐকমত্য আছে। এটা সবারই মতামত, এ জায়গায় কোথাও দ্বিমত আছে বলে মনে করি না। বিভিন্ন কারণে এ জায়গাটায় আমরা এসেছি এবং জাতীয় ঐকমত্য পোষণ করছি। এসময় আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা নিয়ে অস্থির না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এ ব্যাপারে সবাইকে সহনশীল হতে ও ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন আমীর খসরু। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ যেটা, সেটা তো নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিক্লেয়ার করবে। সেটা তো আর সরকার বলতে পারবে না, আমরাও বলতে পারবো না। তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে আসবে এবং আমরা সেটার জন্য অপেক্ষা করবো। নিশ্চয়ই কোনো একটা সময়ে আগামী দিনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটা দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। তো এটার জন্য আমাদেরও তো একটু ধৈর্য ধরতে হবে, তাই না? একদম অস্থিরতার মধ্যে সারাক্ষণ থাকলে তো হবে না। একটু তো ধৈর্য ধরতে হবে। একটু সহনশীল হতে হবে।

বিএনপির এ শীর্ষ নেতা আরও বলেন, আমাদের মধ্যে আস্থারও একটা ব্যাপার আছে। আমরা যদি একেবারে আস্থাহীন হয়ে যাই, একদম অস্থিরতার মধ্যে থাকলে তো সমস্যা। এটা কোনো জাতির জন্য কাম্য নয়। আমরা সঠিক পথে যাবো। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, এতটুকু আস্থা আমাদের সবাইকে রাখতে হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে কোনো বার্তা দেওয়া যায় কি না এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, নিশ্চয়ই। এটা নিয়ে সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কথা হবে। এটা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা তো রুটিন ব্যাপার, তাই নয়। সুতরাং আমরা সবাই একটু ধৈর্য ধরে সময় দেই।

তিনি বলেন, লন্ডনের বৈঠক আমার মনে হয় জাতির জন্য একটা বড় ধরনের ইতিবাচক ঘটনা। আমরা সেটাকে সেভাবেই দেখি। এটিকে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে আমাদের ভবিষ্যৎ পথচলা বিঘ্নিত করা ঠিক হবে না। আমি তো মনে করি খুবই বিবেচনাপ্রসূত আলাপ-আলোচনা, কথাবার্তা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা একটু ধৈর্য সহকারে এগোতে থাকি। সবকিছু সমাধান আগামী দিনে হবে এবং সময়মতো দেশে নির্বাচন হবে। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। জনগণের যে ভোটাধিকার, মানবাধিকার, তার মালিকানা ফিরে পাওয়া, যার জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছি আমরা, সময়মতো হয়ে যাবে। দেশ সেদিকেই যাচ্ছে, সেটা আমরা বিশ্বাস করি।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানো নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ সদস্য বলেন, আইনগতভাবে কোর্টের রায় হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও আসছে। সুতরাং সবাই অপেক্ষায় আছে। আমরা দেখি সরকার কী সিদ্ধান্ত দেয়। একটু অপেক্ষা করি, একটু ধৈর্য ধরি। নিশ্চিতভাবে সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। আমরা সবাই বিশ্বাস করি। সুতরাং আমরা একটু ধৈর্য ধরি।

আমীর খসরু বলেন, আগামী দিনে বিএনপি বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটা বড় পরিবর্তন আনতে চায়। জাতীয় স্বার্থে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং ঐকমত্যের ওপর আমরা জোর দিচ্ছি।