জামায়াতে ইসলামী শুধুমাত্র ভোট বা নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল নয় বরং আমরা আর্ত-মানবতার মুক্তি ও সমাজের কাক্সিক্ষত পরিবর্তন করে দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিবর্তন করতে আপসহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর মগবাজারস্থ আল ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত থানা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্যদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে দারসুল কুরআন পেশ করে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা আব্দুস সামাদ। বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দিন, মু. আতাউর রহমান সরকার, মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, শাহ আলম তুহিন ও ইঞ্জিনিয়ার নোমান আহমেদি প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চায়। আমরা এমনভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে চাই যাতে রাষ্ট্রই সকল মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে। জামায়াত এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে মানুষে মানুষে কোন বৈষম্য বা ভেদাভেদ থাকবে না। কিন্তু অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা একাজ করেনি বরং তারা আত্মস্বার্থ, ব্যক্তিস্বার্থ, শ্রেণি স্বার্থ, গোষ্ঠী স্বার্থ, সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ রক্ষাসহ রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করেছে। তাই জামায়াতকে সবসময় স্রোতের বিপরীতে কাজ করতে হয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমরা নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আর ইসলামী আন্দোলনের ওপর জুলুম-নির্যাতন নতুন কিছু নয় বরং নবী-রাসূলগণও তা থেকে রেহাই পাননি। অবিশ্বাসীদের জুলুম-নির্যাতনের মুখেই আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ঈসা (আ.)কে দুনিয়া থেকে নিজের কাছে ওঠিয়ে নিয়েছেন। তাই যেকোন জুলুম- নির্যাতনে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে হতোদ্যম হলে চলবে না বরং সকল বাধা- প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ময়দানে আপসহীন ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের পথচলা অতীতে নির্বিঘ্ন ছিলো না; এখনো নয়। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তদানীন্তন জালিম সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিলো। কিন্তু ১৯৭৫ সালে তারা সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিলো। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের কর্মতৎপরতা কখনোই বন্ধ ছিলো না। ১৯৭৮ সালে নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাওয়ার পর তা প্রমাণ হয়েছিলো। তবে এজন্য বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। মামলা, হামলা, গণগ্রেফতার, রিমান্ড, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুপ্তহত্যা ছিলো আমাদের নিত্যসঙ্গী। এমনকি জুডিশিয়াল কিলিং-এর মাধ্যমে আমাদের শীর্ষনেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে। তবে আল্লাহ তা’য়ালার অপার মেহেরবানীতে মুহতারাম এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো জীবিত আছেন। বিপ্লব পরবর্তী অনেক সময় পার হয়ে গেছে। আগামী ২৭ তারিখ তার মামলার রায় রয়েছে। তিনি এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য সকলকে আল্লাহর তায়ালার নিকট সিজদাবনত হওয়ার আহ্বান জানান।
আমীরে জামায়াত বলেন, জামায়াতে ইসলামী প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি করে না বরং আমরা ময়দানে জানমালের কুরবানির মাধ্যমে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রচলিত সকল প্রকার অনিয়মের ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চাই। এ কাজ করতে গিয়েই আমাদের অনেক ভাই শাহাদাতকে হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছেন। স্বজন হারিয়েছেন অনেকেই। আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আমরা মজলুম হলেও জালেম হবো না। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠাকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসাবে গ্রহণ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।