বিগত পনের বছর ধরে যারা কুরআনের কথা বলতে দেয়নি তারা পালাতে বাধ্য হয়েছে। শুধু পালাতেই বাধ্য হয়নি বরং এদেশে তারা তাদের রাজনীতি করারও অধিকার হারিয়েছে। সুতরাং, যারাই কোরানের বিরোধিতা করবে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
রোববার (১১ মে) সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবির আয়োজিত ‘কুরআনিক অলিম্পিয়াড’- এর চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।
খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনার দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, তা’লীমুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এএফএম নাজমুস সউদ এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর কুতুবউদ্দিন।
মহানগরী সেক্রেটারি রাকিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জাহিদুর রহমান নাঈম, মহানগরী ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক ইসরাফিল হোসেন, অর্থ সম্পাদক আসিফ বিল্লাহ, সাহিত্য সম্পাদক বেলাল হোসেন, প্রকাশনা সম্পাদক আদনান মল্লিক যুবরাজ, এইচআরডি সম্পাদক সেলিম হোসেন, আইন সম্পাদক আব্দুর রশিদ, মাদরাসা সম্পাদক মুজাহিদুল হক, দাওয়াহ সম্পাদক গোলাম মুয়াজ্জু, ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক ইমরান হোসেন, প্লানিং সম্পাদক নাঈম হোসেন, সোস্যাল মিডিয়া সম্পাদক খায়রুল বাশারসহ প্রমুখ নেতৃবৃব্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া এক হাজার অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের পরিবার ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
‘কুরআনিক অলিম্পিয়াড-২০২৫’ এ ১২ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ মার্ক হিসাবে এক হাজার জনকে পুরুস্কৃত করা হয়। এতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের আবিদ ইবনে আশরাফ, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন খুলনা সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের মোহাম্মদ নাবিল খান, তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইয়েদাতুন্নেছা, চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন বিএন স্কুল এন্ড কলেজ খুলনার ফাতিহা আয়াত, পঞ্চম স্থান খুলনা পাবলিক কলেজের মো. ওয়াছিবুর রহমান, ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছেন সেন্ট জোসেফস্ উচ্চ বিদ্যালয় খুলনার কাজী নাবিল আহমেদ, সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এ. টি. এম. মুশফিকুর রহমান, অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন খুলনা জিলা স্কুলের আজমাইন হোসেন, নবম স্থান অধিকার করেছেন শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সুমাইয়া আক্তার রুমি ও দশম স্থান অদিকার করেছেন খুলনার সরকারি বিএল কলেজের মালিহা তাসনিম। প্রধম স্থান অধিকারি সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের আবিদ ইবনে আশরাফকে লাবটপ, তাফসির গ্রন্থ ও ক্রেস্ট এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারি খুলনা সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের মোহাম্মদ নাবিল খানের হাতে মোবাইল ফোন, হাদিস গ্রন্থ, ইসলামিক বই ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। এ ছাড়া এক হাজার শিক্ষার্থীর হাতে সান্তনা পুরুস্কার হিসাবে পবিত্র কুরআনুল কারীম তুলে দেয়া হয়।
অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশ পেয়েছি কিন্তু এখনও ইসলামী সমাজ পাইনি। তাই ইসলামী তথা কুরআনের সমাজ গড়তে জান ও মাল বাজি রেখে আল কুরআনের রাজ কায়েমে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে’। তিনি কুরআনকে শুদ্ধভাবে পড়া, বুঝে পড়া, বাস্তব জীবনে কুরআনের শিক্ষা কাজে লাগানো, আল কুরআনের সমাজ কায়েম এবং কুরআনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল কুরআনের হক আদায়ের আহবান জানান।
১৯৮৫ সালের ১১ মে আল কুরআনের জন্য শীষ মোহাম্মদসহ যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মরণ করে তিনি বলেন, সেদিন থেকে প্রতি বছর ছাত্র শিবির ১১ মে কুরআন দিবস পালন করে আসলেও বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে যথাযথভাবে দিবসটি পালন করতে দেওয়া হয়নি। আজ ১৫ বছর পর কুরআন দিবস পালন করতে পেরে তিনি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সবসময়ই এমন আয়োজনের মাধ্যমে ছাত্রসমাজকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। পবিত্র কুরআন হচ্ছে আল্লাহর সর্বশেষ ও চূড়ান্ত হিদায়াত, যা সমগ্র মানবজাতির জন্য পথনির্দেশনা। এটি কেবল ধর্মীয় অনুশাসন নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এই মহাগ্রন্থের আলোকে গড়ে উঠা একটি প্রজন্মই পারে এই সমাজ, দেশ ও জাতিকে আলোর পথে পরিচালিত করতে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ১২ এপ্রিল ভারতের দুইজন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী নাগরিক পদ্মপল চোপরা ও শীতল সিং কুরআনের সকল আরবি কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন করে। বিচারপতি মিসেস পদ্মা খাস্তগীর মামলা গ্রহণ করেন। তিনি এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দিলে গোটা ভারতে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশেও। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওই বছর ১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশের গুলিতে আটজন নিহত হন। দিনটিকে স্মরণে রাখার জন্য সেই থেকে এই দিবসটি কুরআন দিবস পালিত হয়ে আসছে।