বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের মাঝে মত ভিন্নতা থাকতেই পারে। কিন্ত বাংলাদেশ, দেশের মানুষ ও গণতন্ত্র প্রশ্নে কোনো বিভেদ নাই। তাই যে কোনো মূল্যে গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য ধরে রাখতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর স্কাই সিটি হোটেলে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে এক ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে র্ভাচ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমাদেরকে যেকোন মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। মতভিন্নতা থাকবে, আমরা বসবো, আলোচনা করব। এমন কিছু বলবো না কিংবা এমন কিছু করা থেকে আমরা বিরত থাকার চেষ্টা করব, যাতে কোনভাবেই স্বৈরাচার আবার এদেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসতে না পারে। এই হোক আমাদের প্রত্যাশা ও শপথ।

ইফতার মাহফিলে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ভিন্ন মত আছে। সবার আদর্শ এক নয়। কিছু কিছু ভিন্নতা আমাদের আছে। কিন্তু একটি জায়গায় আমরা সকলে এক। সেটা হচ্ছে- বাংলাদেশ, দেশের মানুষ এবং গণতন্ত্র। এখানে কিন্তু কোন বিভেদ নেই।

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর আমরা রাজনৈতিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বহু সহকর্মীকে হারিয়েছি। জুলাই-আগস্টে জনতার যে অভ্যুত্থান হয়েছে, সেই অভ্যুত্থানে আমাদের বহু আপনজন, সহকর্মী ও পরিচিতদের হারিয়েছি। আসুন, যে ঐক্য নিয়ে স্বৈরাচারকে বিদায় করেছিলাম, সেই ঐক্যেকে ধরে রাখি। আাগামীদিনে ঐক্যেকে বজায় রেখে, ঐক্যকে ধরে রেখে এদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গণতন্ত্রকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করব, এদেশের মানুষের প্রত্যাশিত সংস্কার প্রক্রিয়া আমরা সকলে মিলে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব। এটি হোক আমাদের শপথ এবং প্রত্যাশা।

তিনি বলেন, আমরা সেই স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা উল্লেখ করেছিলাম, এই ক্ষেত্রে পরিবর্তন হওয়া উচিত। দুঃখজনকভাবে আমরা দেখছি, একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। গণতন্ত্র বলতে একজন সাধারণ মানুষের কাছে কি বোঝা যায়? এক কথায়, নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্ভয়ে ভোট দেয়ার যে পদ্ধতি, এটিকেই গণতন্ত্র বলি আমরা। এই ব্যবস্থাকে, সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি করে দেয়া হচ্ছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কেউ কেউ বলছেন- সংস্কার শেষ হবে তারপরে নির্বাচন হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, যেটা শেষ হয়ে যায়, সেটা তো সংস্কার হতে পারে না। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। যদি কোন একটা বিষয় শেষ হয়ে যায়, সেটি সংস্কার নয়। কাজেই সংস্কার শেষ হয় না, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া।

রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট এদেশের গণতান্ত্রকামী মানুষের অভ্যুত্থানে কারণে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং রাজনীতির চিত্রের পরিবর্তন হয়েছে। সাধারণ মানুষ দেখতে চায়, তার প্রিয় মাতৃভূমি পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর এখন থেকে আড়াই বছর আগে দেশের মানুষের ঘাড়ে পলাতক স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ যখন চেপে বসেছিল, সেই সময় কিন্তু এই ঘরে যারা উপস্থিত আছি তাদের নেতৃবৃন্দ একত্রিত হয়ে আমরা সংস্কার প্রস্তাব, আমাদের ৩১ দফা প্রস্তাব দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছিলাম। এই ৩১ দফা হচ্ছে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য।

১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সভাপতিত্বে এবং জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালানায় ইফতার মাহফিলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক, মাহবুব উদ্দিন খোকন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বিএনপির জয়নুল আবেদিন ফারুক, মাহাদি আমিন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকীব, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, রাশেদ প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ফারুক রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।