বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেছেন, আমরা ১৯৭১ অস্বীকার করি না। ৭১ না হলে বাংলাদেশ হতো না। আর চব্বিশের অভ্যুত্থান না হলে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিদায় হতো না। তাই একাত্তর আমাদের সম্মানের ও গৌরবের। ২০২৪ হলো সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তরুণদের জীবনের একটি প্রতিচ্ছবি। একাত্তরে আমরা প্রিয় মাতৃভূমি পেয়েছি। আর চব্বিশে পেয়েছি মতপ্রকাশের মুক্ত স্বাধীনতা। এজন্য জুলাইও অস্বীকার করা যাবে না।

গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, নির্বাচন ও কল্যাণ রাষ্ট্র’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐক্যজোটের উদ্যোগে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।

জাতীয় ঐক্যজোটের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা আলতাফ হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান কেএম আবু তাহের, গন আজাদী লীগের চেয়ারম্যান আতাউল্লাহ খান, ইঞ্জিনিয়ার দেলায়ার হোসেন, গনমুক্তির আব্দুল মোমেন, মানবিক পার্টির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শুভ,এনডিএম এর সাহেদুল আজম, ইসলামিক জন কল্যাণ পার্টিও আনোয়ার হোসেন, জাষ্টিস পার্টিও আবুলক কাশেম মজুমদার, মুফতী মাহবুব নুরী প্রমুখ।

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মাওলানা হালিম বলেন, এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত রয়েছেন। আমরা সবাই নির্বাচন চাই। তবে যেনতেন নয়। অর্থাৎ ২০১৪, ২০১৮ বা ২০২৪ এ হওয়া নির্বাচন আমরা চাই না। কেননা এই তিন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে ছাত্র-জনতা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি-জামায়াতসহ ছোট-বড় সব দল মিলে আমরা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে সফল করেছি। আর এ গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করবে জুলাই জাতীয় সনদ।

তিনি বলেন, জুলাই সনদের খসড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে আগে দেওয়া হয়েছিল। আমরা মতামত দিয়েছি। তবে জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি না দিলে আমরা স্বাক্ষর করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, আইনি ভিত্তি না হলে এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সালে হওয়া অঙ্গীকার রক্ষা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করা লাগতো না। সেজন্য জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যারা স্বজন হারিয়েছেন, তারা আগে হত্যাকাণ্ডের বিচার চান। তাই জুলাই শহীদদের হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান বিচার বা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া জনগণ নির্বাচন মানবে না।

মাওলানা হালিম বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন হয়ে গেল। কিন্তু তিনদিন পর ফলাফল ঘোষণা হলো। ডাকসুতে ৩৯ হাজারেরও বেশি ভোট গণনার ফলাফল দিয়ে দিতে পারলো। অথচ মাত্র আট হাজার কাস্ট হওয়া ভোটের ফলাফল দিতে এতো দেরি হলো। ফলে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু-অবাধ ও নিরপেক্ষ-শান্তিপূর্ণ হবে এ নিশ্চয়তা আমরা কীভাবে পাবো।

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা অতীতকে নিয়ে সমালোচনায় যাবো না। তবে একটা কথা বলা হয় ৮৬ সালে জামায়াত নির্বাচনে গিয়েছিল তখন কথা ছিল আওয়ামীলীগ জাতীয় পার্টি সবাই নির্বাচনে যাবে কিন্তু নির্বাচন তফিসল ঘোষণা করার পর জানা গেলো বিএনপির অধিকাংশ প্রার্থীরা ঋন খেলাপি । তারা নির্বাচন বর্জন করলেন।

তিনি বলেন, ৯১ সালে নির্বাচনে ফলাফলে বিএনপি একক ভাবে ক্ষমতা যেতে পারেনি । সে সময় জামায়াত বিনা শর্তে সমর্থন দেয়ায় সরকার গঠন করা হয়। বিনিময়ে সে সময় জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আজমকে গ্রেফতার করা হয়। আমরা বললাম এই যে ফ্যাসিবাদ এটা থেকে মুক্তি পেতে কেয়ারটেকার সরকার দরকার। কিন্তু তারা বুঝলেন না।

মাগুরার নির্বাচনে তারা যে কেলেংকারী করলেন জাতি তা ভুলে যায়নি। সে সময় সিইসি পদত্যাগ করলেন । ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার চাইতে একটা খারাপ নির্বাচন করলেন। এগুলো সবার কাছে পরিস্কার। এখন তারা সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন চায়। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা হবে একটা তামাশার নির্বাচন। এমন নিবার্চনের জন্য অভুত্থ্যান হয়নি।

তিনি বলেন, পিআরের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে। তাহলে কেন্দ্র দখলের ও কালো টাকার সুযোগ থাকবে না। তিনি প্রশ্ন রাখেন এখন চাঁদাবাজি করা করে। যারা নিজেদের দলকে সামলাতে পারে না। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অনেক কিছু করবে। জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি দিলে আমরা পরিত্রান পাবো। সংস্কার হলে জাতি সুন্দর নির্বাচন উপহার পাবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাচ গানের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, যেখানে বাংলা পড়ানোর লোক নেই সেখানে নাচ গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন। তিনি সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সব ধমীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবী জানান।

জাতীয় ঐক্যজোট ৯ দফা প্রস্তাব : জুলাই-আগস্ট যোদ্ধাদের হত্যাকারীদের বিচার ছাড়া নির্বাচন না করার দাবি জানিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যজোট ৯ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্য জোটের ৯ দফা প্রস্তাবগুলো হলো- জুলাই যোদ্ধাদের কোনো রূপ বিচার, শাস্তি ও তাদের কাজের জন্য অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা যাবে না। জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো বিরূপ মতামত গ্রহণ করা যাবে না। জুলাই যোদ্ধাদের হত্যাকারীদের বিচার ও গুম করে আটক, শাস্তি দানকারীদের বিচার ছাড়া নির্বাচন হতে পারবে না। জুলাই সনদের স্বীকৃতি দান না কারীদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ ও রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। জুলাই সনদ কোনো নাগরিক, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের বা সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে কেউ হোক অমান্য করতে পারবে না।

জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বা আদর্শ নির্ধারণ করা। যা ৯২ শতাংশ মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম, ইসলামের সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ইসলামের প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস। সব কর্মের ভিত্তি ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল এবং গণতন্ত্র। সব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী সবার চাকরি বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা, শিক্ষা ও পারিবারিক ভাতা ইত্যাদির ব্যবস্থা রাষ্ট্র গ্রহণ করবে। শাপলা হত্যাকান্ডের বিচার ও হেফাজতের দাবি মানতে হবে। পিলখানা হত্যাকান্ডের ন্যায্যবিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।