আজ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করলে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও বৈঠকে অংশ নেন।

এদিকে চলমান রাজনৈতিক সংলাপের অংশ হিসেবে আজ বুধবার বিকাল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যাবেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির সঙ্গে মিটিং নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয় বৈঠকে বিতর্কিত কোনো কর্মকর্তা, বিশেষ করে স্বৈরাচারী আওয়মী লীগ শাসনামলে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন থেকে নিবৃত রাখার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদলে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি নেতৃবৃন্দ। প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল সরাসরি তাঁর তত্ত্বাবধানে হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের জন্য একাধিক ‘ফিট লিস্ট’ থেকে যোগ্য কর্মকর্তাদের বাছাই করে প্রত্যেককে নির্বাচনের আগে যথাযোগ্য স্থানে নিয়োগ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা। নির্বাচন একটি যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে যিনি শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবেন সেরকম যোদ্ধাকেই আমরা বেছে নেব। এটা আমার হাতে থাকবে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমরা করব। বৈঠকে পুলিশের নিয়োগ এবং বদলি প্রক্রিয়া নিয়েও কিছু পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানান বিএনপি নেতৃবৃন্দ। এর পাশাপাশি, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় একাধিক অগ্নিকা-ের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। এসব ঘটনা অন্তর্ঘাতমূলক কি না এ বিষয়ে অনুসন্ধানেরও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে মিটিং থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় অন্তবর্তী সরকারকে সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য সরকারের মধ্যে কোনো দলীয় লোক থেকে থাকলে তাদেরকে অপসারণ করতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাইউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্র উপদেষ্টাদের সরানোর দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তোলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা নির্দিষ্ট কারও কথা বলেননি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলাপ করার জন্য তারা এসেছিলেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেই নির্বাচনকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য এই মুহূর্ত থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যেতে হবে। তিনি বলেন, এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন প্রশাসন যে পুরোপুরিভাবে নিরপেক্ষ, সেই ধারণা জনগণের মধ্যে তৈরি করা।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রশাসনে এমন কর্মকর্তা আছেন যারা পুরাতন সরকারের স্বার্থ পূরণ করছেন। তাদেরকে অপসারণের জন্য তারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন। সচিবালয়ে দলীয় কর্মকর্তাদের সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দেওয়ার জন্য তারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন। জেলা প্রশাসনেও একইভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, পুলিশের নতুন নিয়োগ এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে একদম নিরপেক্ষ অবস্থায় নেওয়ার জন্য তারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন। তিনি বলেন, যেহেতু প্রধান উপদেষ্টা সবকিছুর দায়িত্বে রয়েছেন, তাই বিচার বিভাগেও নিরপেক্ষ বিচারকদের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন তাঁরা।

এর আগে সন্ধ্যা ৬টার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির প্রতিনিধিদল। বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।