বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশটা আমাদের, এর ভবিষ্যৎ আমাদেরই নির্মাণ করতে হবে। আমেরিকা থেকে ট্রাম্প (ডোনাল্ড ট্রাম্প) বা চীন থেকে শি (শি জিনপিং) এসে এটা তৈরি করে দেবে না। অথবা ভারত থেকে মোদিও (নরেন্দ্র মোদি) ধাক্কা দিয়ে আমাদের কিছু করতে পারবে না। এই বিষয়গুলো আমাদের অন্তরের মধ্যে গেঁথে নিতে হবে। আমরা সবাই যদি এটুকু বুঝতে পারি, তাহলে দেশকে সবাই মিলে এগিয়ে নিতে পারবো। গতকাল শনিবার নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলামের দৃষ্টিতে ‘ক্ষমতায়ন : বাংলাদেশ, নেতৃত্ব-ঐক্য এবং প্রবৃদ্ধির পথে কূটনীতি-শাসনব্যবস্থা রূপান্তর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নানা মহলের চিন্তা চেতনা, টেলিভিশনের টকশো, বিদ্বান মানুষের কথা ও রাজনৈতিক বক্তব্যসহ সবকিছু শুনে সবাই কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, এত যে রক্তপাত, মানুষের বুক খালি হলো, শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কী হবে? আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভালো হবে, খুব ভালো হবে। কারণ আমরা দেশের মানুষ চিরকাল ভালোর জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছি এবং জয়ী হয়েছি। বিশেষ করে আমাদের তরুণ ছেলেরা, আজ বাংলাদেশের যা কিছু ভালো অর্জন, সবই তাদের জন্য। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করেছে তরুণরা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করি, তার আগে আমাদের নেতা অনেকে ছিলেন। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের একেক জনের একেক চিন্তা ছিল। কারও চিন্তা ছিল সমাজতন্ত্র করবো, কেউ সমাজকে পাল্টে দেবো, কেউ ধর্মীয় ব্যবস্থাকে এখানে প্রতিষ্ঠিত করবো... সব মিলিয়ে ছিল। তারপর যখন যুদ্ধ (মুক্তিযুদ্ধ) শুরু হয়েছিল, তখন সবাই এক হয়েছে লড়াই করার জন্য। আজ ২০২৪ সালেও একই ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এসেছি সবাই। কিন্তু যেদিন ছাত্রদের উপর গুলী করা হয়েছে, তখন সবাই এক হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আসুন আজ ঠিক একইভাবে সবাই এক হয়ে যাই। সমস্যা আছে, সমাধান হবে। ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাই তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন, বিশ্বাসও আছে তিনি সফল হবেন। আসুন সবাই মিলে তাকে সাহায্য করে নিজেরা নিজেদের সাহায্য করি। তবে, একটা কথা জোর দিয়ে বলতে চাই, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্রকে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। এটা চর্চা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সবাই এখন ভিন্ন দিকে নজর দিচ্ছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ট্যারিফ দিয়েছে তা দেশের জন্য একটু বিপদে পড়ার মতোই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বাড়তি শুল্ক দ্রুত সমাধান করতে না পারলে সমস্যা আরও বাড়বে। দেশের কৃষিখাতে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, কৃষকদের প্রতি গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে। মাঠেঘাটে যারা কাজ করছেন, তাদের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের কথা কেউ বলেন না। আমাদের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ, বৈষম্য তো তাদের কাছে, পুরো বৈষম্য তো সেখানে। তাদের কথা বলা দরকার, তারা হেসে খেলে তাদের কাজ করছেন এবং বাংলাদেশকে টেনে তুলে ধরছেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক সমস্যা আমাদের আছে, বরাবরই আছে। দেড় ’শ বছর যখন এখানে ব্রিটিশরা শাসন করেছে (তখনো ছিল)। পলিটিক্যাল তর্ক করা আমাদের মজ্জাগত। আমরা চায়ের দোকানে বসে পলিটিক্যাল আলাপ করি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করি, সমস্যা আছে, সমস্যার সমাধান হবে।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম সবুজের মেয়ে সাবরিনা ইসলাম রহমান। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে এক ভিডিও বার্তা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন।