আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার আলোকে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিসহ ৫-দফা দাবি আদায়ের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ১৯ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিকালে দেশের মহানগরীগুলোতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে দাবিসমূহ বাস্তবায়নের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত জনতা দাবিসমূহের পক্ষে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে স্লোগানে স্লোাগানে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল মুখরিত করে তোলে।
নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বরিশাল মহানগরে, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার রংপুর মহানগরে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান চট্টগ্রাম মহানগরে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আজাদ সিলেট মহানগরে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড. মোয়াযযম হোসাইন হেলাল রাজশাহী মহানগরীতে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ময়মনসিংহ মহানগরে এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এড. মতিউর রহমান আকন্দ খুলনা মহানগরীতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
বরিশাল মহানগরঃ
নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভোটের বিকল্প নেই। দেশের মানুষ এমন একটি নির্বাচন চায় যাতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আর সেজন্য প্রয়োজন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। কেননা প্রত্যেকটি ভোটের মূল্যায়নের একমাত্র পন্থা হলো পিআর পদ্ধতি। পিআর পদ্ধতি নিয়ে গরিমসি না করে প্রয়োজনে গণভোট দিয়ে পিআর এর জনমত যাচাই করুন।
কেন্দ্র ঘোষিত ৫-দফা দাবিতে বরিশাল মহানগর জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট ও দোসরদের এদেশে আর সুযোগ দেয়া হবেনা। এখনো প্রশাসনের মধ্যে ফাসিস্টের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। তাদের সরিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করতে হবে। জাতীয় পার্টি সহ যেসব দল ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা জরুরি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরেই নির্বাচন দিতে হবে। ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশে সভাপতি ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন বাবর, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মহানগর এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মাদ আতিকুল্লাহ। প্রোগ্রামে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও বরিশাল জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল জব্বার।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কয়েক হাজার জামায়াতের নেতাকর্মী।
রংপুর মহানগরঃ
দুপুর আড়াইটায় রংপুর মহানগরীর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে আয়োজিত সমাবেশে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ফ্যাসিবাদী শাসন বন্ধে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আর স্বৈরাচারী শক্তির ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে চায়না। জুলাই জাতীয় সনদে উল্লিখিত রূপরেখার ভিত্তিতেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচন অবশ্যই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে হতে হবে, যাতে প্রতিটি দলের প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী সংসদে সকল দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদি হয়ে উঠার সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিটি ভোটার যেন অবাধ ও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন, গণহত্যা, লুটপাটসহ সব ধরনের দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যে অপরাধে অপরাধী, জাতীয় পার্টি এবং ১৪দলও একই অপরাধে অপরাধী। তাই ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসর তাদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। এ দাবিগুলো এখন দেশের জনগণের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। অতিদ্রুত জনগণের এইসব ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
মহানগরী আমীর মাওলানা এটিএম আজম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-৩ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর জেলা আমীর ও রংপুর-৫ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী।
সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে শুরু হয়ে শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
চট্টগ্রাম মহানগরঃ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, একটি শ্রেণি আওয়ামী লীগ স্টাইলে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী স্টাইলের কোনো নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না। জুলাই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান বিচার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেটে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গণমিছিল নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে আবারও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।
জামায়াতের ৫ দফা দাবিগুলো সরকার মেনে নিলে আগামীকালই নির্বাচন হলে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, আমরা যে দাবি বাস্তবায়নে জন্য রাজপথে নেমেছি, এসব দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূস জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ফ্যাসিবাদী ও তাদের দোসরদের দৃশ্যমান বিচার করবে এবং পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, ড. ইউনূসের আশে পাশে অনেকে একটি দলের পকেটে ঢুকে গেছে। সরকারে ভেতরে থেকে অনেকে সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এটি মেনে নেবে না জনগণ। ফ্যাসিবাদের মতোই জনগণ তাদেরকে প্রতিরোধ করবে। সংস্কারের প্রত্যাশা ছিল তা হয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতেই হবে। প্রতিবন্ধকতা তৈরিকারীদের চিহ্নিত করা হবে। নির্বাচনের জন্য এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। দেশে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন। উক্ত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, গোটা জাতি উৎসব মুখর নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। তিনি আরো বলেন, কেউ কেউ আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জামায়াত নাকি নির্বাচন পিছাতে চায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই জামায়াত সবার আগেই তিনশত আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে কাজ শুরু করে দিয়েছে কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম চোখে পড়ে না। যারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, প্রয়োজনীয় সংস্কারে বাধাগ্রস্ত করছে এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের বিরোধীতা করছে নিজেদের ভরাডুবি জেনে তারাই মূলত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে চায়।
সিলেট মহানগরঃ
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কি জুলাই বিপ্লবের আকাক্সক্ষা ছিল? অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের কঠোর হস্তে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি বিশেষ দল নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে যেনতেন উপায়ে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও ঐকমত্য কমিশনের সকল সিদ্ধান্ত সেই বিশেষ দলের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সকল সংকট আলোচনার টেবিলে সমাধানে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সেভাবে না চাইলে রাজপথে সমাধানেও আমরা রাজি। জনমত যাচাই করতে চান তাতেও রাজী, গণভোট দিন। তবুও এই দেশে কাক্সিক্ষত সংস্কার ছাড়া সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় দিয়ে কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেয়া যাবেনা।
তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তামাশায় পরিণত করেছিল। আইন ও মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে দেশপ্রেমিক জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। যার ফলে স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত হয়। সিলেটের শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র সেন ছিলেন হিন্দু এবং সিলেটের শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব ছিলেন একজন সাংবাদিক। কিন্তু তাদেরকেও জীবন দিতে হয়েছে। কারণ এটি ছিল ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান। ঐতিহাসিক এই গণঅভ্যুত্থানের আইনি ভিত্তি দেওয়া ছাত্রজনতার অধিকার।
ময়মনসিংহ মহানগরঃ
ময়মনসিংহ নগরীর রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে মিছিল পূর্ব সমাবেশে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সার এর সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, ময়মনসিংহ মহানগরীর আমীর ও ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ এদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা, ভালোবাসা ও প্রত্যাশার। আরেকটি স্বৈরাচারী সরকার যেন আবার চেপে বসতে না পারে সেজন্য জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে হবে। সন্ত্রাস, দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য জামায়াতের এ আন্দোলন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তিনি আগামী নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ আসনে সদর উপজেলার সর্বস্তরের জনগণকে ন্যায়ের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিতে নগরবাসীকে আহবান জানান।
সমাবেশ শেষ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউনহল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এসময় পাঁচ দফা দাবির স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাজপথ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া, ময়মনসিংহ অঞ্চল টিম সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল করিম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ও ত্রিশাল সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী আসাদুজ্জামান সোহেল, সহ-সেক্রেটারি আনোয়ার হাসান সুজন, মাহবুবুল হাসান শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নেত্রকোনা-৪ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী আল হেলাল তালুকদার, শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য ডাঃ আব্দুল আজিজ, হায়দার করিম, খন্দকার আবু হানিফ, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বারী প্রমুখ ।
চট্টগ্রাম মহানগরঃ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগীয় সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। এরপর ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা অনুযায়ী অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। পিআরের (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পক্ষে দেশের ৭০ ভাগ জনগণ সমর্থন জানিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে ৩১ দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআরের পক্ষে রয়েছে। একটি দলের কেউ কেউ বলছেন, পিআর খায় না মাথায় দেয়। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এটা বলতে পারে না। তাই পিআর বাস্তবায়নের জন্য গণভোট দিন। রায় পিআরের পক্ষে আছে নাকি বিপক্ষে আছে যাচাই করুন। জনগণ যদি পিআর মানে তাহলে আপনাদেরও মানতে হবে। আর জনগণের রায় যদি পিআরের বিপক্ষে যায় তাহলে আমরা মেনে নেবো। কিন্তু দেশের বড় দলটি গণভোটকে ভয় পাচ্ছে। পিআরের মধ্য দিয়ে সকলের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পেশীশক্তি ও কালো টাকামুক্ত কোয়ালিটিপূর্ণ পার্লামেন্ট হোক, সরকার গঠন হোক, কেউ ফ্যাসিবাদী হয়ে না উঠুক; যারা চায় না, তারাই জনগণের বিপক্ষে গিয়ে পিআর ঠেকাতে চায়। তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে রাজপথে থাকার উদাত্ত আহ্বান জানান।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলোস্থ সোনালী ব্যাংক চত্বরে খুলনা মহানগরী ও জেলা জামায়াত আয়োজিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আমীর, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন।
সরকারের উদ্দেশ্যে জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি বলেন, আর্টিকেল ৭-এর ভিত্তিতেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার আলোকে নির্বাচন দিতে হবে। এখন যদি দুই/তিন মাস আলোচনার পর একটি দল বলে যে এটা পরে হবে, তাহলে কেন এত পরিশ্রম করালেন? সেজন্যই বলছি আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ। আমাদের রাজনীতি জনগণের আকাক্সক্ষা তুলে ধরার জন্য। আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তির জন্য আশাবাদী। আমরা নিরাশ নই। তিনি বলেন, আপনারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মেইনটেইন করতে পারছেন না। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কীভাবে? তাই আমাদের দাবি-আপনারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিন। সাংবিধানিক অর্ডার জারি করুন। গণভোট দিন। ফ্যাসিবাদের কার্যক্রম স্থগিত করুন। এবং আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ‘নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার করবেন।’ আমাদেরও দাবি নির্বাচনের আগেই তা দৃশ্যমান করতে হবে।
মতিউর রহমান আকন্দ আরও বলেন, আপনি সবাইকে ডাকুন, কনস্টিটিউশনাল অর্ডারের মাধ্যমে অথবা একটা রেফারেন্ডামের মাধ্যমে এখনো সময় আছে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে নির্বাচন করুন। তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ বলছেন যে; এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। আমরা দেখছি অনেক সাংবিধানিক মেজর ইস্যুতে যে ভিন্নমতগুলো রয়েছে, আমরা বলেছি ঐকমত্য কমিশনও বলেছে দু’বারের অধিক কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না। জুডিশিয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী চাইলেও হবে না। এই সংস্কার যদি এখন না হয়, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য যদি ঠিক করা না হয়, আর তা যদি নির্বাচনের আগে না হয়, বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে এই নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচন হলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। বাংলার মানুষ আর ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে দেবে না।
বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর ডাকবাংলোস্থ সোনালী ব্যাংক চত্বর থেকে শুরু হয়ে ফেরীঘাট মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড় ও সঙ্গীতার সামনে দিয়ে শিববাড়ি (শহীদ মীর মুগ্ধ) মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার জনতা অংশ নেয়।