বাহাত্তরের সংবিধানে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, এই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের ফসল। এটিকে আওয়ামী লীগের সংবিধান মনে করি না।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'স্বাধীনতা যুদ্ধের পর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি আমাদের লোভ ছিল না। যে কারণে ভারতের আনুকূল্যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসতে পেরেছে। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচনা করা হয়েছে, সেটা মুক্তিযুদ্ধের ফসল। সেখানে সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। ঘটনাচক্রে আওয়ামী লীগ সেখানে ছিল। কিন্তু এটিকে আমি আওয়ামী লীগের সংবিধান মনে করি না।
যে সংবিধান এখনো বিদ্যমান, প্রতিটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে এটিকে সংশোধন করেছে বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে যেকোনো দল যেকোনো সময় সংবিধান সংশোধন করতে পারে। বর্তমান সরকার একটি জুলাই সনদ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে। আমাদের কাছেও পাঠিয়েছে। সেখানে আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য নিয়ে যেই সনদটি গৃহীত হবে, সেটি নাকি সংবিধানের ওপরে স্থান পাবে। এমনটা কখনো হতে পারে না।
'সারা পৃথিবীতে সংবিধান প্রণয়ন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, বাংলাদেশেও এটি হয়ে এসেছে। আগামীতেও এমনটি হবে। কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তির মাধ্যমে সংবিধানের সংশোধন হতে পারে না।'
এ সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলে ধরে হাফিজ উদ্দিন বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ঠিক করবেন, বাংলাদেশের সংবিধান কেমন হবে। যারা সদ্য সাবালক, জীবনে মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, গল্পও শোনেনি কখনো, আজকের বাংলাদেশ দেখলে মনে হয় না এখানে একটি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এ কারণে তারা বলে সংবিধান ছুড়ে ফেলতে হবে এবং জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দিতে হবে। এটি সম্পূর্ণ অবান্তর একটি কথা। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজও সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, 'রাজনৈতিক অঙ্গনে একদল তরুণ, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তাদের মুখে একটি স্লোগান শোনা যায়-১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধান ছুড়ে ফেলতে হবে। এটা তো আওয়ামী লীগের সংবিধান না, তারা জানেও না যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাই চায়নি। ২৫ মার্চ সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউনের আগে টেপ রেকর্ডার নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে গিয়ে তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আপনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিন। বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করুন। তিনি বললেন, না, আমি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারি না। তিনি অখণ্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী।'
'তিনি (শেখ মুজিব) বলেছেন, আমি যদি আজ স্বাধীনতার ঘোষণা দিই, তাহলে আমাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। আমার বিচার করা হবে। ২৫ মার্চেও তিনি চিন্তিত ছিলেন যে পাকিস্তান ভাঙার জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হতে পারে। অথচ, তার দলবল বলে আসছে, ৭ মার্চ নাকি তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন,' যোগ করেন হাফিজ উদ্দিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, 'আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা চায়নি। চাওয়াও সম্ভব না। তারা করে ভোটের রাজনীতি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনপ্রিয় দল হিসেবে তারা ভোটে জিতেছিল। এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য চেষ্টা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চও তিনি বলেছেন যে অবিলম্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডাকা হোক। পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে হস্তান্তর করা হোক। অথচ, একদল দলকানা লোক বলে ৭ মার্চ নাকি স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা চায়নি, গোটা জাতি যুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনতার যুদ্ধ। এ কারণে আওয়ামী লীগের কথা মাথায় না রেখে গোটা জাতি ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতার পর যে সংবিধান রচনা করা হয়েছে, তখন ঘটনাক্রমে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। পৃথিবীর কোনো দেশে মুক্তিযোদ্ধারা এমন উদারতা দেখায় না, যেটা বাংলাদেশে দেখিয়েছে।