বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হলে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন ছাড়া বিকল্প নেই। একই দিনে জাতীয় ভোট ও গণভোট আয়োজন জনগণকে বিভ্রান্ত করারই সামিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট না দিলে জাতিকে গভীর সংকটে ফেলে দেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের সংশোধন এনে এখনো এই ভুল সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।” একই দিনে দু’টি ভোট আয়োজনের সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘জনবিরোধী’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় খুলনা-৩ আসনের দৌলতপুর থানাধীন শহীদ মিনার চত্বরে দৌলতপুর থানা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
দৌলতপুর থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মু. মুশাররফ আনসারীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। মহানগরী ব্যবসায়ী থানার সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান স্বপনের পরিচালনায় বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, খুলনা মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজী, খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি গাউসুল আযম হাদী, অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, খুলনা জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ইউসুফ ফকির, মহানগরী সেক্রেটারি রাকিব হাসান, মহানগরী যুববিভাগের সভাপতি মুকাররম বিল্লাহ আনসারী, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মুকাররম বিল্লাহ আনসারী, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, মাওলানা শাহারুল ইসলাম, মাওলানা শেখ মো. অলিউল্লাহ, খুলনা সদর থানা আমীর এস এম হাফিজুর রহমান, খালিশপুর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতপুর থানা সেক্রেটারি মাওলানা মহিউদ্দিন, কাউন্সিলর প্রার্থী হুমায়ুন কবীর, ডা. সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, বিএল কলেজের সাবেক ভিপি এডভোকেট শেখ জাকিরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী, মতিয়ার রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, একই দিনে গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন দেওয়ায় জনগণকে সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে, ঘোষণা সংশোধন করে জাতীয় নির্বাচন এর আগে গণভোট দিন, জনগণের মতামতই হবে সরকারের ভিত্তি। তিনি বলেন, আগামী ২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আইনি কোন ভিত্তি নেই। সংবিধানে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নির্বাচন হওয়ার কথা আছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে ২০২৪ সালে। সংবিধানের অনেক ধারা এবং অনেক অনুচ্ছেদে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা কিভাবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন তাও সংবিধানের নেই। বাংলাদেশের সংবিধানের অন্তবর্তীকালীন সরকারের কোন বিধান নেই। সুপ্রিম কোর্টের একটি রেফারেন্স এর ভিত্তিতে এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এই রেফারেন্সে কখনো ক্ষমতা গ্রহণের ভিত্তি হতে পারে না। সেই কারণে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার যেমন সংবিধানে নেই, নির্বাচনের মেয়াদ সংবিধানে নেই। প্রধান উপদেষ্টা সংবিধানে নেই। সুতরাং জুলাই সনদ একমাত্র সংবিধানের অংশ হতে পারে আর এর মাধ্যমেই সকল বিষয়কে আইনি ভিত্তি দেওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, “যারা জুলাই সনদ মানতে চায় না, তাদের জন্য ২৬ -এর জাতীয় নির্বাচন নয়। জনগণকে ধোঁকার মধ্যে রাখা যাবে না। গণভোটের আগে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া মানেই জুলাই সনদের বৈধতা এড়িয়ে যাওয়া।”
তিনি অভিযোগ করেন, একটি বড় রাজনৈতিক দল নাকি সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সাথে “গোপন বৈঠক” করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “নির্বাচনের দাবি ও আন্দোলন-দুটোই একসাথে চলবে। গণভোট ছাড়া নির্বাচন হলে গণতন্ত্রের জন্য তা বড় হুমকি হবে।”
সেক্রেটারি জেনারেল আরও জানান, আগামী ১৬ নভেম্বর দেশের ৮টি ইসলামী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসবেন এবং সেখানে পরবর্তী করণীয় ও সম্ভাব্য আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণ হবে। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “যে সিদ্ধান্তই আসুক, সবাইকে সেই সিদ্ধান্তের আলোকে আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে।”
প্রধান বক্তা অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও জনগণের ভালোবাসা এবং ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজ মুক্ত ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক একটি আদর্শ রাষ্ট্র গঠন করব ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে সমাজের নেতৃত্বের পরিবর্তন অপরিহার্য। তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ যদি আমরা ঘুষ, দূর্নীতি, চাঁদাবাজ মুক্ত না করতে পারি, তাহলে এই দেশ ব্যর্থ হবে। খুলনা-৩ আসনের এই এমপি প্রার্থী বলেন, আমরা এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখি যেখানে সত্য ন্যায় ও নৈতিকতার ভিত্তিতে সমাজ পরিচালিত হবে। একটি কল্যাণভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলাই আমাদের অঙ্গীকার। আমি আপনাদের ভাই আমার জীবন আমি আপনাদের কল্যাণে উৎসর্গ করতে চাই। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি উন্নয়ন ন্যায়বিচার ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমি আপনাদের পাশে থাকব। ইনশাআল্লাহ যদি আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেন তাহলে প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে অগ্রসর হব।