বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্র ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, প্রায় এক বছর আগে তিনি সতর্ক করেছিলেন যে আগামী নির্বাচন ঘিরে অদৃশ্য শক্তি সক্রিয় হয়ে উঠবে। আজ জনগণ নিজেরাই লক্ষ করতে শুরু করেছেন যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে সেই অশুভ শক্তির অপতৎপরতা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

অন্তর্বর্তী সরকার যখন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছে, তখন কোনো কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নানা শর্ত আরোপ করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এই শর্ত আরোপের মাধ্যমে নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি এবং পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চলছে বলে বহু মানুষ ভাবতে শুরু করেছেন।

বিএনপি সব সময় দ্রুততম সময়ে একটি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, কারণ বিএনপি বিশ্বাস করে, আগে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা ফিরে পাওয়া প্রয়োজন। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার যদি জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ পাবে; যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে কার্যকর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা বেশি জরুরি। রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কারে বিএনপি সম্পূর্ণ একমত। সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে তবে জনগণের অধিকার চর্চা ও প্রয়োগের পথে বাধা সৃষ্টি করে কোনও সংস্কার টেকসই করা যাবে না।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে রাজনীতি মানে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নয়। বরং জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। সে লক্ষ্যে বিএনপি বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কীভাবে এগুলো কাজ করবে তা পেপারওয়ার্কের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

একমাত্র বিএনপিই বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুষ্ঠানে বলেন, বিভিন্নভাবে একটি মহল দেশকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে। সংখানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে না বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে দেশের জনগণ কারও এ ধরণের হুমকিতে মাথা নত করতে রাজি নয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন, বিএনপিও রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে।

অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। দেশে-বিদেশে অবস্থান করে পতিত ফ্যাসিবাদীরা ষড়যন্ত্র করছে। দেশের থাকা একটি গোষ্ঠীও নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চক্রান্ত করছে।

এ সময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজউদ্দিন আহমেদও একই অভিযোগ তুলে বলেন, নির্বাচনকে বিঘিœত করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। এমনকি দেশের মধ্যেও ভারতীয় দালালরা সক্রিয় হয়েছে। নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে আওয়ামী লীগ দেশে নানাপ্রকার সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাবে। সব দেশবিরোধী তৎপরতা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। পাশাপাশি তিনি বর্তমানে জামায়াতের অবস্থানও ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যে সংস্কার জনগণ বোঝে না, সেই সংস্কার জনগণ গ্রহণ করবে না। নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা বোধ করছি। সরকার ও কমিশনের আন্তরিকতা যথেষ্ট নয়।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন।