খুলনা ব্যুরো ও ফুলতলা উপজেলা সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের কথানুযায়ী হয়তো আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক দাড়িপাল্লা ফিরিয়ে দিয়েছে। সুতরাং আগামী নির্বাচনে দাড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টির জন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

গতকাল রোববার সকাল ১০টায় পবিত্র হজ্ব পালন শেষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বাড়ীতে আসার পথে সিকিরহাট, ফুলতলা বাজার ও শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে স্থানীয় জামায়াত আয়োজিত পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

সকাল ১০টায় ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মাস্টার মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সিকিরহাট খেয়াঘাট চত্বরে, সকাল সাড়ে ১০টায় ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যার সভাপতিত্বে ফুলতলা বাসস্ট্র্যান্ড চত্বরে ও খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমীর ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটোর সভাপতিত্বে শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক পথ সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা অফিস সেক্রেটারি মো. আশরাফুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. ইউসুফ ফকির, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সহ সভাপতি মো. আল আমিন গোলদার, খানজাহান আলী থানা সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, ফুলতলা উপজেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, সেক্রেটারি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁন, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মো. আলাউদ্দিন, ড. মো. আজিজুল হক, মাওলানা জোবায়ের হোসেন ফাহাদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ফুলতলা উপজেলা সভাপতি আব্দুল আলিম শেখ, পেশাজীবি বিভাগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি হাফেজ আল আমিন গাজী, দামোদর ইউনিয়ন আমীর ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির আহমদ, সেক্রেটারি মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, জামায়াত নেতা আব্দুল জলিল শেখ, এএইচএম শফিউল্লাহ হাজেরী, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, আপনারা বিগত ৫৪ বছরে বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছেন। সেখানে জনগণের কাক্সিক্ষত কল্যাণ সাধিত হয়নি। বিগত সরকারগুলি হত্যা, লুটপাট, দূর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের মাধ্যমে দেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। দেশের মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, শুধু বাকি রয়েছে ইসলামী শাসন দেখার। তাইতো আমাদের আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের ডাক দিয়েছেন। একটি জনমুখী ও কল্যাণকর রাষ্ট্রের রুপরেখা ঘোষণা করেছেন। যেখানে লুটপাট-দূর্নীতির মাধ্যমে দেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হবেনা, বেকারত্বের অভিশাপ কোন যুবককে বয়ে বেড়াতে হবেনা, সকল বৈষম্য দূর হবে। মানুষ সত্যিকার একটি কল্যাণ রাষ্ট্র দেখতে পাবে।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, একটি কল্যাণকর ও জনমুখী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হলে সৎ মানুষের প্রয়োজন। জামায়াত আল্লাহর আইন চাই ও সৎ লোকের শাসন চাই। তাই আগামীর সংসদে যদি আল্লাহওয়ালা ও ইসলামপ্রিয় ১৫১ সদস্যকে নির্বাচিত করে পাঠাতে পারেন তাহলে বাংলাদেশ সত্যিকারে একটি সোনার দেশে পরিণত হবে। দেশের শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্রসহ টেকসই উন্নয়ন করা হবে। একটি ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়া হবে যেখানে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করা হবে। একজন যুবক তার লেখাপড়া শেষ করার সাথে সাথে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। অন্যথায় ঐ যুবককে কর্মসংস্থান না পাওয়া পর্যন্ত্ বেকার ভাতা দেয়া হবে। তাই আগামী নির্বাচনে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিয়ে সৎ, আল্লাহভীরু ও ইসলামপ্রিয় সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গঠনে ভুমিকা রাখুন।

তিনি আরো বলেন, ২৪’র গণঅভ্যুত্থানের পরে পথহারা বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার সুযোগ হয়েছে। দুই হাজার ছাত্র-জনতার শহীদ ও প্রায় ত্রিশ হাজার ছাত্র-জনতার পঙ্গুত্ব বরণের মাধ্যমে নতুন স্বাধীনতা লাভ করা বাংলাদেশে আর যেন কোন শক্তি ফ্যাসিবাদের জন্ম দিতে না পারে, বৈষম্য তৈরী করতে না পারে, অন্যায় অত্যাচার জুলুম নির্যাতন দখলবাজি চাঁদাবজি করতে না পারে সেদিকে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অন্যথায় আমাদের এই ছাত্র-জনতার স্বপ্ন বিলীন হয়ে যাবে।

বিগত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্র্যন্ত্ এমপি থাকাকালীন সময়ে তার উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আমি এমপি থাকাকালীন সময়ে ফুলতলা-ডুমুরিয়ার সন্ত্রাস নির্মূল ও সুষম উন্নয়ন করা দুটি ওয়াদা ছিলো। আমি তখন জনগণকে সাথে নিয়ে সন্ত্রাসী এই জনপদকে সন্ত্রাসমুক্ত করেছিলাম। ৫ বছরে এই বিশাল এলাকার সব উন্নয়ন করা যায়না। তবুও যতটুকু পেরেছি চেষ্টা করেছি উন্নয়ন করার যা গত ১৫ বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এই এলাকার সমস্যা দূরীকরণে আমি সবসময় সচেষ্ট থাকি। ইতোমধ্যে বিলডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করেছি। আগামী নির্বাচনে জামায়াত আমাকে আবারও এখানে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে যদি নির্বাচিত করেন তাহলে অতীতের মত আমার সর্বাত্নক চেষ্টা থাকবে ফুলতলা-ডুমুরিয়ার বাস্তব সম্মত উন্নয়ন করার। বিগত সময়ে আমার হুলকুম দিয়ে যেমন একটি হারাম টাকাও আমার ভিতর ঢুকেনি আগামীতেও হারাম কোন অর্থ আমার হুলকুমে ঢুকবে না ইনশাআল্লাহ। এর পূর্বে সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সিকিরহাট খেয়াঘাটে পৌছালে ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আঃ আলীম মোল্যা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।