বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যারা গর্তে লুকিয়ে ছিলো তারা এখন আমাদেরকে সংস্কারের তালিম দিচ্ছে। তিনি বলেন, এখন সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, এখানে যারা বসে আছেন সকলে সংস্কারের লোক। আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, তার আগে ২৭ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, এর আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়েছেন। এখন যারা সংস্কারের কথা বলছেন এদের কারো চেহারা আমরা দেখি নাই। আর এদের অনেকেই রাস্তায় ছিলো না, এখন বড় বড় কথা বলছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে অধ্যাপক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ কি হবে এটা আমরা মাথায় রেখে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, হাসিনা পরবর্তী কি ধরনের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ব এটাকে মাথায় রেখে আমরা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা শেখ হাসিনা যাওয়ার পরে নতুন করে সংস্কারের কথা বলছি না। আমরা সবাই মিলে আগেই সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছি, ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন করে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবো সেটাও আমরা আগেই ঘোষণা দিয়েছি।

বাংলাদেশে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে অতীতে কোনো দিন কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে যায়নি বলেও দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, দিনের শেষে সংস্কার হতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে কোনো সংস্কার করা যাবে না। বাংলাদেশের মালিকানা অন্য কাউকে দেই নাই যারা বাংলাদেশে আগামী দিনে সংস্কার করবে।

দেশে বিনিয়োগ কমছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, এই সরকারের আচার-আচারণে মনে হচ্ছে এই দেশ বিনিয়োগের স্বর্গ রাজ্য হয়ে যাচ্ছে। গত দশ মাসে বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে কমছে। আর আমাদেরকে বিনিয়োগের সার্কাস দেখানো হচ্ছে.. আমি কারো নাম বলতে চাই না। মানুষ তো বোকা না।

মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, মানবিক করিডোর নিয়ে কার সাথে আলোচনা হয়েছে? এই সরকার কি নির্বাচিত সরকার নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেবে? নির্বাচিত সরকার হলেও তাদেরকে সকলের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। এ করিডোর সম্পর্কে কোনো রাজনৈতিক দল জানে না, সিভিল সোসাইটি জানে না, এটা কী? এর পেছনে কী আছে। আমার প্রশ্ন বাংলাদেশকে কি আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত করতে চাই?। কার স্বার্থে এই দেশকে ওদিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে? এই প্রশ্নগুলো সামনে আসছে। কারা এর পেছনে কাজ করছে ওই লোকগুলো কারা?”

ভাসানী জনশক্তির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুলের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জেএসপির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণস্বাস্থ্য সংস্থার অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মেজর হাফিজ : এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে মানবিক করিডোর নিয়ে জনগণ ও রাজনৈতিক দল অন্ধকারে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। একই সঙ্গে করিডোরের কারণে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, কোনো আগ্রাসনে জড়িত না হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই দুর্বল সরকারের পেছনে জনগণ নেই। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন চাইলেও সরকার এখনো নির্বাচনের পথে যায়নি।

বৈঠকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দিল্লির কাছে এমনভাবে আত্মনিবেদন করেছিলেন, সে আত্মনিবেদন থেকে তিনি ফিরে আসতে চাননি। তিনি সেটা করলেন এবং তার ইফেক্ট শুরু হয়েছে। এর যে বর্জ্য নদীতে পড়ছে, দিনকে দিন নদীগুলোর পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে আমরা ভয়ঙ্করের এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কথা বলেন। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, একটা স্টাইল হয়েছে যে, ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বললে সে বোধহয় পশ্চাৎপদ, সে বোধহয় আধুনিক নয়, সে প্রগতিশীল থাকবে না- এরকম প্রবণতা খুব পরিকল্পিতভাবে মাইন্ডসেট চালানো হয়েছে। আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে অনেকের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু এ দেশে ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে এই শব্দগুলো ব্যবহার করেছে বামপন্থিরা। কিন্তু এখন সেভাবে তারা সোচ্চার নেই। তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধ চালুর বিষয় শেখ মুজিবকে জানানো হয়েছিল যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। তখন শেখ মুজিব অনুমতি দিলেন। সর্বনাশ সেদিনই হয়ে গেছে। এরপর আর তারা (ভারত) মনেই করেনি বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলা দরকার।