রেজাউল করিম রাসেল, কুমিল্লা অফিস : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে, একটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমরা পদযাত্রা শুরু করেছি। তিনি একটি ডেটলাইন দিয়েছেন। তার ওপরেই আপনি ঠিক থাকেন। এর মধ্যেই সংস্কার করে, মানবতাবিরোধী, খুনীদের বিচার দৃশ্যমান করে আপনি নিরপেক্ষ নির্বাচন দেন আমরা নির্বাচনে যেতে রাজি আছি। আমাদের নির্বাচন অবস্থান নিয়ে অনেকে ভুল বুঝার চেষ্টা করে। নো। আমাদের আমীরে জামায়াত কালকেও বলেছেন। সরকার বলেছে ২৬ শে জুন অথবা ২৫ ডিসেম্বর। আপনি যে সময় বলেন নির্বাচন করেন। কিন্তু প্রো ভায়োলেন্স, ১৪, ১৮ ও ২৪ এর মতো নির্বাচন হলে এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় লাকসাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা জামায়াতের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এসময় তিনি আরো বলেন -দীর্ঘ সতের বছর পর আমরা লাকসামে উন্মুক্ত পরিবেশে কর্মী সম্মেলন করতে পেরে মহান রবের দরবারে শুকরিয়া আদায় করে বলেন-১৬টি বছর বাংলাদেশ শেখ হাসিনা নামক একটি জগদ্দল পাথরের নিচে চাপা ছিলো। একটা কালো যুগ পার করেছি। এই সম্মেলনের কেউ নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই এবং জেল খাটেনি। সংবিধানের ৩৬-৩৯ ধারায় বলা আছে বাক স্বাধীনতার কথা। কিন্তু বিগত স্বৈরাচার সরকার মানুষের সেই অধিকার হরণ করেছিল। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি।
১৪, ১৮ ও ২৪ এর নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ১৪ সালে তারা ষড়যন্ত্র করে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছিল। কেউ নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়। যেখানে রাতেই ভোট দিয়ে দিয়েছে বিগত সরকার। এসময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ লীগ সম্মিলিতভাবে এদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। আর এসমব নির্বাচনে হাসিনাকে সঙ্গ দিয়েছে জাতীয় পার্টি। আর তাই এরশাদ নাম্বার ওয়ান দালাল।
তিনি বলেন -বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্যাতনে অসহ্য হয়ে পুরো বাংলাদেশ একটি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। সারা দেশের ওলামায়ে কেরাম ও ধর্মীয় অনুভূতিতে বিশ্বাসী লোকদের জেল, জুলুম দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতার মসনদে স্থায়ী হতে চেয়েছিলো। কিন্তু অন্যায়, জুলুম ও অত্যাচার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারা যায়না।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, হাসিনা যাকেই তার ক্ষমতার জন্য আতঙ্ক মনে করতো তাকেই রাজাকার বানিয়ে দিতো। অধিকার চাওয়া শিক্ষার্থীদেরও রাজাকার বলেছিল হাসিনা। এরপর শিক্ষার্থীরাই রাতের আঁধারে আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার বলে রাস্তায় নেমে আসে। বুকে তাজা রক্ত দিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করে। অনেকে এই স্বৈরাচার মুক্তিকে দ্বিতীয় স্বাধীনতাও বলেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, হাসিনাকে ভারত বলেছিল মুসলমান নেতারাই তার ক্ষমতার জন্য আতঙ্ক। তাই ভারতের প্রেসক্রিপশনে জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছিল। অনেককে কারাগারে নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আমাদের প্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে কোন সরকার একটা মিথ্যা কথা বলার অভিযোগও তুলতে পারেনি। আন্দোলন চলাকালীন হাসিনা শিবির জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। অথচ চার দিনের মাথায় এদেশের মানুষ তাদের নিষিদ্ধ করে দেয়। আর আল্লাহ জালিমকে পৃথিবী থেকেই দূরে ঠেলে দেয়।
তিনি আরো বলেন-কুরআান এবং সুন্নাহর আইন ছাড়া, মানব রচিত সংবিধান মানুষের কল্যাণ সাধিত করতে পারে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। এতেই জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
কর্মী সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুর রব, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর এডভোকেট মো. শাহজাহান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও জামায়াত মনোনীত কুমিল্লা -৯ আসনের প্রার্থী অধ্যাপক ড. এ কে এম সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ডা: আবদুল মমিন, মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, লাকসাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির হাফেজ জহিরুল ইসলাম, কুমিল্লা জজকোর্ট আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১এর পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন।
লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মু. জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে ও লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মু. শহিদ উল্যাহ এবং লাকসাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মু. জোবায়ের ফয়সালের যৌথ সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা -৮ বরুড়া আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল,কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি অধ্যাপক রেজাউল করিম ,জেলা জামায়াত নেতা সরওয়ার কামাল, মাওলানা মিজানুর রহমান মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াত মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হামিদুর রহমান সোহাগ, মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ নুরুন্নবী, নাঙ্গলকোট উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা জামাল উদ্দিন, লাকসামের গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাশার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা শিবিরের সভাপতি মহি উদ্দিন রনি প্রমুখ। কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা, লাকসাম উপজেলা ও লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে বক্তব্যে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. এ কে এম সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী লাকসাম- মনোহরগঞ্জবাসীর জন্য কয়েকটি দাবি পেশ করেন। তার মধ্যে লাকসামকে জেলা ঘোষণা করা, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা, লাকসামে ৫০০ শয্যার একটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল করা, লাকসাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নতুন রেলপথ স্থাপন করা, লাকসাম চৌদ্দগ্রাম সড়ক, লাকসাম মুদাফফরগঞ্জ সড়ক, লালমাই- চাঁদপুর সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা, লাকসাম বাইপাস এবং বাগমারা বাজারের অবশিষ্ট দুই লেন সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করা ও অবিলম্বে কুমিল্লার বিমানবন্দরটি চালুর ব্যবস্থা করা উল্লেখযোগ্য। প্রধান অতিথির নিকট উপস্থাপন করলে, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার তাঁর বক্তব্যে দাবিগুলো যৌক্তিক ও সময় উপযোগী বলে মন্তব্য করেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যখনি সুযোগ পাবে, তখনি দাবিগুলো পূরণ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে লালমাই উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জসিম উদ্দিন মোল্লা পরিবারের জন্য আমীরে জামায়াতের উপহার ঘর উদ্বোধন করেন তিনি।
কুমিল্লা মহানগরী জামায়াত : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগরীর আয়োজনে রুকন শিক্ষা শিবির শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুমিল্লা নগরীর ভার্চুয়াল ফান টাউনে অনুষ্ঠিত শিক্ষা শিবিরে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহনগরীর আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ সভাপতিত্ব প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মা’ছুম। মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মাহবুবুর রহমানের পরিচালনায় এতে দারসূল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য অধ্যাপক মাওলানা লিয়াকত আলী ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য আমীর মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর এড শাহজাহান, উত্তর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল মতিন, মহনগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর মোসলেহ উদ্দিন ও একেএম এমদাদুল হক মামুন, সহকারী সেক্রেটারি কামরুজ্জামান সোহেল, মোশাররফ হোসাইন ও নাছির আহম্মদ মোল্লা প্রমুখ।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াত : বিকাল ৫টার দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখেন। উপজেলা জামায়াত আমীর মাহফুজুর রহমান এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমীর মোহাম্মদ শাহজাহান এডভোকেট।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের পৌর আমীর মাওলানা মু. ইব্রাহিম, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন, সহকারী সেক্রেটারি আবদুর রহিম, পৌর নায়েবে আমীর কাজী মোঃ এয়াছিন, সেক্রেটারি মোশারফ হোসেন ওপেল, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারী, সাইয়েদ রাশীদুল হাসান জাহাঙ্গীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।