‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’, ‘পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন’, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চতকরণ’, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা’, এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ করার ৫ দফা দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্কে অনুষ্ঠিত মিছিল পূর্বক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল। তারা পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় পেটুয়া বাহিনীতে পরিণত করেছে, নির্বাচন কমিশনকে মেরুদন্ডহীন করা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে দুর্নীতির আজ্ঞাবহ কমিশনে রূপ দিয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে স্তরে দলীয় এজেন্টা বাস্তবায়নে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানকে দলীয় সংবিধানে রূপ দিয়েছে। এজন্য তারা সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে নিজেদের মতো করে সংবিধান রচনা করেছে। সেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছে। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অর্জিত জুলাই বিপ্লবে জাতি এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কার কাজে সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু একটি দল রাষ্ট্র সংস্কারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। সরকার এজন্য ঐক্যমত কমিশন গঠন করেছে। ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ বাস্তবায়নে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেও ঐ দলটি আপত্তি জানিয়ে আসছে। কোনো দলের আপত্তি কিংবা চাপ থাকলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে না পারলে গণভোটে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে তিনি সরকারে প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনতিবিলম্বে ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’, ‘পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন’, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চতকরণ’, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা’, এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ করতে হবে। নতুবা জনগণ আবারো রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা আবু জার গিফারীর সভাপতিত্বে এবং পৌর আমীর হাফেজ গোলাম রাব্বানীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী জোনের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, সাবেক এমপি ও জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক লতিফুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু বকর। এছাড়াও সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আমীর হাফেজ আব্দুল আলীম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর শাখা ইসলামি ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল আজিজসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশ শেষে, নূরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে পৌর পার্ক থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহরের শান্তির মোড় এসে শেষ হয়।

অতীতে যারা সরকারে ছিল তারা ভিন্নধর্মাবলম্বীদের অধিকার লুণ্ঠন করেছে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, অতীতে যারা সরকারে ছিল তারা ভিন্নধর্মাবলম্বীদের অধিকার লুন্ঠন করেছে। ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু বানিয়ে রেখেছিল। জামায়াতে ইসলামী সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগরিষ্ট নীতিতে বিশ্বাসী নয়। জামায়াতে ইসলামী মনে করে রাষ্ট্রের কাছে প্রতিটি নাগরিক সমান। ইসলামী রাষ্ট্রের মূল শিক্ষা হচ্ছে কারো অধিকার নষ্ট না করা। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও এদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত হয়নি। এখনো তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে হলে ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দিতে হয়। মন্দির ও মুর্তি পাহারা দিতে হয়। কারণ মানুষের তৈরি মতবাদে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত করে প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার সমানভাবে নিশ্চিত করা হবে। ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের (ঢাকা-৬ আসনের) উদ্যোগে মন্দির ও পূজা কমিটির সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেছেন তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা পাহারাদারের ভূমিকা পালন করবেন। পরবর্তীতে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীসহ এদেশের আলেম-ওলামা হিন্দুদের বাড়িঘর পাহারা দিয়েছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে স্বীকার করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কোন নেতাকর্মী কিংবা এদেশের মাদ্রাসার কোন ছাত্র-শিক্ষক হিন্দুদের সম্পদ লুট করেনি, ভাঙচুর করেনি। বরং যারা নিজেদেরকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষের লোক দাবি করেছে তারাই হিন্দুদের বাড়িঘর লুট করেছে, সম্পদ দখল করেছে।

ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজ-নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীনতা লাভ করবে উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারাহর ২৫৬ নং আয়াতে বলেছেন ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ির সুযোগ নেই। সূরা নিসার ২৯ নং আয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন, একে-অপরের সম্পদ গ্রাস করিও না। এই দুটি আয়াতের দিকে তাকালেই বুঝা যায়, ইসলাম ভিন্নধর্মাবলম্বীদের অধিকারের ব্যাপারে কতটা সুনির্দিষ্ট করে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু যারা ভিন্নধর্মাবলম্বীদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে তারা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের মাঝে ভয়ভীতি সৃষ্টি করেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী জামায়াতে ইসলামী যখন দলীয় কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনার পরিবেশ পেয়েছে তখন দেশে-বিদেশে সকল ধর্মের মানুষ বুঝতে পেরেছে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের অধিকার লুণ্ঠন হবে না। বরং অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। তাই দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে মানুষ জামায়াতে ইসলামীর প্রতি আস্থা ও সমর্থন বাড়াতে থাকে। এতে করে একটি দলের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। যার কারণে ঐ দল জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে কোন অপপ্রচারে জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রা থেমে যাবে না। কারণ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি হচ্ছে ইসলামী সমাজ বির্নিমাণের মাধ্যমে এদেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি নির্ভয়ে সকল ধর্মের মানুষকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৬ সংসদীয় আসন কমিটির নির্বাচন পরিচালক কামরুল আহসান হাসানের সভাপতিত্বে রাজধানীর স্বামীবাগের ঢাকা পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা-৬ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। এছাড়াও সভায় বিভিন্ন মন্দির কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারিসহ ভিন্নধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।