বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ডানে-বামে সব দিকে তাঁকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন। নইলে কেউ রক্ষা পাবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকান্ডের পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে সিরাজগঞ্জের কৃতি শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে এই মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এই মানববন্ধনে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনসহ উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
রিজভী বলেন, এখনো কেনো ক্যাম্পাসে লাশ পড়ছে, এখনো কেনো ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরছে, এখনো কেনো রক্তের আলপনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে? এখন তো আওয়ামী দোসররা নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তাদেরকে যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন তারা সমর্থন করেছে। এখন কেনো লাশ পড়বে?
তিনি বলেন, সাম্য ছাত্রদলের এফ রহমান হলের একটি সম্পাদকীয় পদে ছিল। কী কারণ ছিলো? কী অন্যায় করেছিল সাম্য? পুলিশ গ্রেফতার করেছে তিনজন ভবঘুরে কে। আমার তো মনে হয় এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে। রাজনৈতিক কারণ না থাকলে এই ধরণের সুদর্শন, মেধাবী ছাত্রকে হত্যা করবে কে? ভবঘুরেরা কেনো হত্যা করবে?
রিজভী বলেন, কয়েকদিন আগে সে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছে। কারণ শাহবাগে জাতীয় সঙ্গীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিলো তার বিরুদ্ধে সে একটা পোস্ট দিয়েছে জাতীয় সঙ্গীতের পক্ষে। যারা জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিলো তাদের বিরুদ্ধে তার একটা বার্তা ছিল। এটাই কী কারণ?
রিজভী বলেন, আমি অবিলম্বে সাম্যকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার রাজনীতি শত্রু কারা, আমরা একটু আভাস পাচ্ছি। এই রাজনৈতিক শত্রুদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসুন। তা না হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।
রিজভী বলেন, আমি পুলিশ বিভাগকে বলব, ভালো করে খতিয়ে দেখুন। ভবঘুরে গ্রেফতার করেছেন মানুষকে কিন্তু সব বিষয় সহজভাবে নেয় না, সহজভাবে নিতো যদি এই পুলিশ বিভাগটি সবসময় আপনার সত্য এবং ন্যায় অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু সেটা তারা নেননি।
রিজভী বলেন, ভাইস চ্যান্সেলন সাহেব আপনার কাছে বিচার চাইতে গিয়েছিলো ছাত্রদল নেতারা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাম্য মারা গেছে। আপনি বিরক্ত হয়েছেন, আপনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুই-তোকারি করেছেন ছাত্র নেতাদেরকে। কেনো? আপনি শুনতে চান না। কারণ সাম্য ছাত্রদল করে। আপনার (ভিসি) রাজনৈতিক চিন্তা-দর্শন কি আমরা জানি। কিন্তু আমরা যুগ যুগ ধরে দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর যে আদর্শে বিশ্বাস করুক ওটা তার ব্যক্তিগত। কিন্তু উনি যখন একটি প্রশাসনের প্রধান হন, উনি তো শিক্ষক, উনার কাছে প্রতিটি ছাত্র, প্রতিটি ছাত্র সংগঠণ সমান মর্যাদা পাবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি রক্ষার জন্য সবার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু উনি যদি নত হয়ে যান, উনি যদি তার বিশেষ দর্শন প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান তাহলে বিশ্ববিদ্যলয়ে কখনই শান্তিপুর্ণ হবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখানে কখনোই স্বস্তি বয়ে আনবে না।
রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আমরা জানি না কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন? আপনারদেরকে আমরাও সমর্থন করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। কিন্তু এই মিছিলটি যখন আপনাদের যুমনার দিকে যায়, প্রধান উপদেষ্টার বাসার দিকে তখন তাদেরকে সাদরে বরণ করেন। এই তিন-চার দিন আগেই দেখলাম, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যারা গেলেন, তাদেরকে সাদরে বরণ করলেন। সরকারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ডানে-বামে সব দিকে তাঁকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন। নইলে কেউ রক্ষা পাবেন না।