ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিযে যায় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বরাবর চিঠি দিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা। চিঠিতে জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং বাংলাদেশের বিষয়ে দিল্লির আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে নরেন্দ্র মোদি বরাবর ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় এ চিঠি দেওয়া হয়। এতে স্বাক্ষর করেছেন জাগপা সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান।
এর আগে জাগপা সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান সকাল ১১টায় চিঠিতে স্বাক্ষর করার পর আসাদ গেট কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল ভারতীয় দূতাবাসের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য আসাদুর রহমান খান, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর জাগপা আহ্বায়ক শ্যামল চন্দ্র সরকার, যুব জাগপা সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু।
তবে ভারতীয় দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তা সামনে না এলেও ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তালাত মাহমুদ শাহান শাহের মাধ্যমে চিঠি গ্রহণ করেন।
চিঠিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করে বলা হয়, ‘ভারতের জনগণকে ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা। আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যাত্রা শুরু করে, যখন ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সম্পদ লুট করে। শুরু থেকেই ভারত বাংলাদেশকে একটি করদ রাজ্য হিসেবে দেখতে চেয়েছিল, যা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন ধরে ভারত দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছে। অবৈধভাবে ভারত বাংলাদেশের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে। উপরন্তু ভারত তার নিজেদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট রুট ও করিডর ব্যবহার করেছে। এসব কিছুর ওপরে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী অননুমোদিতভাবে বাংলাদেশের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করেছে— এটি একটি অনৈতিক কাজ, যা আপনার দেশের জন্য লজ্জাজনক।’
মোদির উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার সরকার বারবার আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে জাতীয় নির্বাচনে কারসাজিও আছে, ফলশ্রুতিতে যা ভারতের স্বার্থকেই রক্ষা করেছে। অবৈধ প্রভাব এবং গোপন কার্যক্রমের মাধ্যমে ভারত আমাদের রাজনৈতিক, শিল্প, সাংস্কৃতিক এবং গণমাধ্যম খাতকে ব্যবহার করেছে। একই সঙ্গে সীমান্তে চলমান অবৈধ পুশইন এবং বছরের পর বছর পাখির মতো বাংলাদেশিদের হত্যা অগ্রহণযোগ্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ভারতের আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ভারত শেখ হাসিনাকে সুরক্ষা ও আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এটি আরও তীব্র হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা, যার বর্তমানে কোনো বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত।বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ভারতের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, যিনি একজন স্বৈরশাসক ও গণহত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জনগণ দেশের মাটিতে তার (শেখ হাসিনা) বিচারের অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, ভারত সরকার দ্রুত শেখ হাসিনা এবং তার দোসরদের ফিরিয়ে দিক, যারা আপনার (মোদি) দেশের সরকারি সুরক্ষা এবং ভারতীয় করদাতাদের খরচে অবৈধভাবে বসবাস করছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘প্রতিবেশীদের মধ্যে সুসম্পর্কের নিদর্শন হিসেবে ভারতের উচিত আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’