প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের কর্মী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচজন জড়িত বলে দাবি করেছেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। গতকাল রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি। ছাত্রদল পারভেজ হত্যার বিচার দাবি করে ছাত্রনেতাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোরালো দাবি জানায়।
এর আগে শনিবার বিকেলে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিবাদের জেরে ছুরিকাঘাতে নিহত হন জাহিদুল ইসলাম পারভেজ। তিনি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।
সাংবাদিক সম্মেলনে বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসে রক্ষীবাহিনীর মতো সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ করে ছাত্রদল। এতে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী রক্ষীবাহিনীর মতো সন্ত্রাস ও দখলদারি কায়েম করেছে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মীদের মবের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রলীগের স্টাইলে সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করছে। ক্যাম্পাসে বটেই, ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণের বাইরে গিয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কার্যক্রম পরিচালনায়ও বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই নতুন নামে সেই পুরাতন ফ্যাসিবাদ। এই চলমান দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসই এই হত্যার পেছনে খুনী-সন্ত্রাসীদের সাহস ও মদদ জুগিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রচ- উশৃঙ্খল মেহেরাজ ইসলাম গং বহিরাগতদের ডেকে এনে পারভেজের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালায়। এই হামলায় মেহেরাজ ইসলামের সাথে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক শোভহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম-সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজীর নেতৃত্বে এলাকার বেশকিছু উশৃঙ্খল সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। তারা ছুরি দিয়ে পারভেজের বুকের ওপর আঘাত করে হত্যা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের মীমাংসার পর যখন সন্ত্রাসীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল, তখন শহীদ পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন কোনো ধরনের সহায়তা করেনি। এহেন হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাসহ খুনী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ছাত্রদল সভাপতি।
তিনি বলেন, আমরা জেনেছি, ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই-তিনজন শিক্ষার্থীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বসে সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। এমন সময় মেহেরাজ ইসলাম এবং আরও দুইজন ছাত্রীসহ কয়েকজন ওই পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই তারা পারভেজকে উদ্দেশ্য করে ‘এদিকে তাকাচ্ছ কেন’। ‘এদিকে তাকালে চোখ তুলে দেব’ এ ধরনের টিজিং ও উসকানিমূলক মন্তব্য করতে থাকেন।
পারভেজ জবাবে বলেন, কি দোষ করেছি ভাই? এতে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুস সালাম হস্তক্ষেপ করেন এবং উভয়পক্ষকে মীমাংসা করে দেন। প্রচ- উচ্ছৃঙ্খল মেহেরাজ ইসলাম গং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করে দেয়া এই মীমাংসা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ১০-১৫টি লাশ ফেলার হুমকি দিয়ে বহিরাগতদের ডেকে আনে এবং পারভেজের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালায়।
ছাত্রদল সভাপতি জানান, পারভেজ হত্যাকা-ের ঘটনায় বনানী থানা মামলা করা হয়েছে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সহসভাপতি এইচএম আবু জাফর, ইজাজুল কবির, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, যুগ্ম সম্পাদক সারোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আবু হুরায়রা, সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল আলম বিন্দু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনের পরে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পারভেজের নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদল বিশাল মিছিল বের করে নয়া পল্টনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে।