নানা আয়োজনে দলের ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। এ উপলক্ষে রাজধানীতে র‌্যালির পাশাপাশি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে দলটি। এতে লন্ডন থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আলোচনায় অংশ নিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, সব রাজনৈতিক দলই সংস্কার চায় কিন্তু সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণের ফলে জনগণের মাঝে নানা প্রশ্নের তৈরি হচ্ছে। কারও কারও কথা শুনে মনেহয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করাটাই যেন অপরাধ! জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পতিত স্বৈরাচারকে ফিরে আসার সুযোগ করে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারেক রহমান।

২০২০ সালের ২ মে করোনাকালীন সময়ে এবি পার্টি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দলটির ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়া’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না, ১২ দলীয় জোটের নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহবায়ক সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল কাইয়ুম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ এলডিপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম, আম-জনতা দলের সভাপতি কর্ণেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শাহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সাউদ বিন ইউসুফ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তারেক রহমান আরও বলেন, ৫ আগস্টের পূর্বে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সবাই ছিলাম এবং একসাথে সবাই মিলে ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলন করেছি। ফ্যাসিবাদ পতনের পর নতুন অনেক রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে, আমরা তাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। স্বৈরাচার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সবাই সমর্থন করেছি। তিনি বলেন, অনেকেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিতে পারে সেটা হয়তো আপনারা বিবেচনায় নেননি।

নতুন পুরাতন সকল রাজনৈতিক দলকেই এখন জনগণের কল্যাণে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করে তারেক রহমান আরো বলেন, মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে হাসিনা এক ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করেছিলো। পতিত স্বৈরাচার আবার মাথা চাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেখার বিষয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের বিষয়ে কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে! গণহত্যার বিচার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারসহ সব বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের অধিকার রয়েছে এটি জানার। সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, দেশবিরোধী কিছু করলে আপনাদেরকেও কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে একটি ধোঁয়াশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এদিক সেদিক সময় পার করছে, আবার নতুন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ভেতরে মানবিক করিডোর নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা কোন বৃহৎ শক্তির বিরোধের মধ্যে পড়তে চাই না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে এবি পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু করি তখন যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল আমাদেরকে আন্দোলনে সার্বিক সহোযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন এবি পার্টি তাদের মধ্যে অন্যতম।

সভাপতির বক্তব্যে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, বেশিরভাগ দলই খুব ইতিবাচক চিন্তা পোষণ করেছেন। কঠিনতম সময়েও গণমাধ্যম কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও শুভানুধ্যায়ীদের এবি পার্টির পাশে থাকার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।

এর আগে সকাল ১০টায় এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন বিজয় একাত্তর চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়। যা কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল, বিজয়নগর, পল্টনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব চত্বরে এসে শেষ হয়।