পাবনার ঈশ্বরদীতে জামায়াতের নির্বাচনী প্রচারণা মিছিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের বাহিনী কর্তৃক সশস্ত্র আক্রমণের শিকার হয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম সহ অসংখ্য নেতাকর্মী এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন ক্লিনিকে আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় দৈনিক দেশ বুলেটিন এর ঈশ্বরদী প্রতিনিধি সাইদ হাসান ও রেহাই পায়নি। হাবিব বাহিনী মক্কেল মৃধার নেতৃত্বে বর্বরোচিত হামলায় ৬০ থেকে ৭০ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে পাবনা জেলা জামায়াতের উদ্যোগে জেলা শহরের সদরে গত বৃহস্পতিবার এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জেলার সকল উপজেলাতেও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে বিএনপির আহ্বানেও ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করা হয়।
বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব বাহিনী কর্তৃক জামায়াতের নির্বাচনী প্রচারণা মিছিলে হামলার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন পাবনা জেলা জামায়াতের আমীর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও জামায়াত মনোনীত পাবনা-৪ আসনের এমপি পদপ্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল। রাতে শহরের ভেলুপাড়াস্থ তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পরাজয় নিশ্চিত জেনেই বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা চালিয়েছে। তিনি ঈশ্বরদি থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ করায় ওসির অপসারণ দাবি করেছেন।
বর্তমান অবস্থা : বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পাবনার ঈশ্বরদীর চরগড়গড়ি এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শান্ত থাকলেও এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে নারাজ সাধারণ জনতা। তাদের চোখে মুখে এখন ভিত্তি লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে আতঙ্কিত ঈশ্বরদী শহরের লোকেরাও।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই আলোচনায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়াগড়ি এলাকা। রাজনৈতিক উত্তাপ ছিল বছর জুড়েই। আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বাড়িঘরে লুটপাট, জমি দখল ও ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই উত্তাপের মধ্যেই এবার জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন তারা।
রেহাই পায়নি সাংবাদিক : কথা হচ্ছিল আলহাজ্ব মোড়ে দৈনিক দেশ বুলেটিনের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি সাঈদ হাসানের সাথে, গত ২৭ নভেম্বর, জামায়াতের মিছিলে আক্রমণের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থকেরা আলহাজ্ব মোড়ে চর গড়গড়ি এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান করছিল, জামায়াতের মিছিল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা অতর্কিত সামনে পিছন থেকে সশস্ত্র আক্রমণ চালায় ফলে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দিগবিদিক ছুটতে থাকে। আমার দায়িত্ব পালন অব্যাহত থাকলে হাবিবের লোকেরা এসে আক্রমণ করে, আমার পরিচয় দিলে মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ধারণকৃত ভিডিও ফটোগ্রাফি একপর্যায়ে মুছে ফেলতে বাধ্য করে, পরে আমার মোটরসাইকেল কেড়ে নেয়। আমার বাইকটি সম্ভবত আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে, যার নম্বর পাবনা -ল -১৩-৩৫৪৮ । আমি স্থানীয় মহিলাদের সহায়তায় একটি বাড়িতে আশ্রয় নেই এ সময় আমাকে আশ্রয় দেয়ার কারণে হাবিব বাহিনীর লোকেরা কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে। এ অবস্থায় আমি ট্রিপল নাইনে জানালে কয়েক গাড়ি পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ৫০ থেকে ৬০ জন আহত হয়েছে, আমীর আহত হয়েছি।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার পাবনা-৪ আসনের জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের প্রচারণায় দফায় দফায় হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। তালেব মন্ডলের গাড়িসহ শতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় জামায়াত নেতার বাড়িও। ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরিস্থিতি শান্ত হলে এখনও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
তবে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন- জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরাই বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে এবং গুলী করেছে।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রনব কুমার সরকার জানান, পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কে এই মক্কেল মৃধা :
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সাহপুর ইউনিয়ন সভাপতি মক্কেল মৃধা, চর গড়গড়ি গ্রামের মৃত মানিক মৃধার ছেলে পেশায় কসাই। ৫ই আগস্ট এর পরে সন্ত্রাসী বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিতি তার। গত ২৭ নভেম্বর জামায়াতের নির্বাচনী মিছিলে মক্কেলের নেতৃত্বে হামলা পরিচালনা করা হয়।
এদিকে পিস্তল হাতে গুলী করা যুবককে নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোয়াশা। বিএনপির কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে ওই যুবককে জামায়াতের কর্মী দাবি করছেন। এবিষয়ে মুখ খুলছেন না পুলিশও।
ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের আমীর ডক্টর নুরুজ্জামান প্রামানিক বিএনপির দাবি অস্বীকার করে জানান, ওই যুবক আমাদের কোন কর্মী সমর্থক নন, সংগঠনের সঙ্গে তার নুন্যতম কোন সম্পর্ক নেই।
হাবিব বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড :
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব তার বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার কথাবার্তা সামাজিক মূল্যবোধকে উপেক্ষা করে চলছে। গত ১৫ মে আটঘড়িয়া উপজেলা সদর দেবোত্তরে জামায়াতের উপজেলা অফিসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সে সময় অফিসে থাকা বহু কুরআন হাদিস পুড়ে যায় এবং জনমনে বিভ্রান্তিমূলক খবর ছড়িয়ে দেয়, আটঘরিয়া উপজেলায় কোন জামায়াতের ইমাম মুয়াজ্জিন আজান ও নামায পড়াতে পারবে না। পরবর্তীতে জামায়াত নেতা কর্মীর জিভ কেটে ফেলার হুমকি দেয়।
গত ২৬ শে নভেম্বর সাহপুর ইউনিয়নের জামায়াতের যুব বিভাগের নেতা হাফেজ ইকবাল হোসাইনকে মারধর করে।
১১ নভেম্বর ক্লিক মোড়ের স্কুল পাড়ায় জামায়াত কর্মী চাঁদ আলীকে হাবিব বাহিনীর মজুমদার বাবু, করিম মজুমদার ও ইসরাইল ব্যাপক মারধর করে।
১৩ নভেম্বর সলিমপুর ইউনিয়নের মানিক নগরে মহলদার পাড়ায় শামীম মহালদার নিজেই জামায়াতের নির্বাচনী প্রচারণায় মহিলা কর্মীদের চর থাপ্পর মেরে লাঞ্চিত করে। ঘটনার প্রতিবাদে মহিলা জামায়াত সংবাদ সম্মেলন করে শামীম মহালদারকে আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
হাবিব বাহিনীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঈশ্বরদী আটঘরিয়ার জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এসব কর্মকাণ্ডের সঠিক সূরাহা না করতে পারলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে স্থানীয় ভোটারেরা।