বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘অতীতে সরকার ছিলাম ইনশাল্লাহ আবার জনগণের ভোটে সরকারে যাবো।’

বৃহস্পতিবার বিকালে কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলছি, তাড়াতাড়ি ভোটটা দেন। নির্বাচনটা দেন। ভোট তাড়াতাড়ি দিলে একটা সরকার আসবে। যার পেছনে জনগণ থাকবে। যত বড় বড় লোক দিয়েই সরকার চলুক পেছনে জনগণ থাকতে হবে। তাই আমরা বলছি, কাল-বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিন। এজন্য যতটুকু পরিবর্তন-সংস্কার করা দরকার তা করে ভোট দিন। পুলিশ বাহিনী, প্রশাসন ব্যবস্থাকে ঠিক করতে হবে। কবে ভোট হবে, কিভাবে ভোট হবে একটু জানিয়ে দেন। এরপর দেশ কিছুটা শান্ত হবে, স্থিতিশীল হবে। আমরা বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে লাকসামের মানুষ সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। আপনাদের মন্ত্রী ছিল তাজুল ইসলাম। তার অত্যাচার-নির্যাতনে এলাকার মানুষ এখানে আসতে পারতো না। বাড়ি-ঘর ভেঙে দিতো। তুলে নিয়ে যেতো। ঘরে যা থাকতো সব ভেঙে চুরে দিত। একটা ত্রাসের রাজত্ব ছিল। সেটা এখন কোথায়? কোথায় পালিয়েছে? কোথায় পালিয়েছে তাও জানেন না আপনারা। কোথায় লুকিয়ে গেছে নাকি ভারতে গেছে তাও জানে না। যারা অত্যাচার নির্যাতন অবিচার করে তাদের পরিণতি এরকমই হয়। তাদের হাসিনা ও তাজুল ইসলামের মত পালিয়ে যেতে হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, লাকসাম থেকে দু’জন গুম হয়। একজনের ডাকতাম সাইফুল ইসলাম হিরো আরেকজন হুমায়ুন পারভেজ। তাদের সন্তানরা এখানে আছে। তাদের বাবা গুম হওয়ার পর যখন বেগম জিয়ার সাথে তারা দেখা করতে গিয়েছিল। তাদের চেহারা এখনো মনে পড়লে বুক ফেটে যায়। ওরা আমাদের বিশ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে গুম করেছে। এখানে এমন কোন লোক নাই যার বিরুদ্ধে মামলা নাই সবার বিরুদ্ধে মামলা আছে। শেষ যে আন্দোলন হচ্ছে সেখানে দুই হাজারের উপর লোককে গুলি করে পাখির মত হত্যা করা হয়েছে। আমরা সম্মান জানাই ইলিয়াস আলী, পারভেজ, হিরো ভাইকে। সম্মান জানাই অসংখ্য মানুষকে যারা হত্যা ঘুম হয়েছেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে অনেক কথা বলে। যেন তারাই দেশটার জন্য সংগ্রাম করেছে। আমরা সবাই বাংলাদেশে ঘরে বসে ছিলাম। বিদেশে বসে অনেক কথা বলা যায়। দেশে আমরা যারা সংগ্রাম করলাম, রক্ত দিলাম, যাদের মায়ের কাছ থেকে ছেলেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল, সেই একটা অবস্থায় আমরা যেন কিছুই করিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন সব রাজনৈতিক দল, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। শেষ মুহূর্তে একটা কথা বলতে চাই, কেউ ৭১ কে কটাক্ষ করে কথা বলবেন না। ২৪কে কটাক্ষ করলে যেমন মানুষ করে নেবে না, ৭১কে কটাক্ষ করলেও মানুষ মেনে নেবে না। এ সময় তিনি সরকারকে ইঙ্গিত করে বলেন, দেশের মানুষের দিকে তাকান। দেশকে আর অস্থিতিশীল আর নৈরাজ্যের দিকে নিবেন না। ধন্যবাদ জানাতে চাই সেনাবাহিনীকে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়াও দেশের জনগণকে ও সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

লাকসাম স্টেডিয়াম মাঠে কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালামের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কর্ণেল অব. এম আনোরুল আজিম, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ বিষয় সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ভিপি আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর বিএনপির আহবায়ক উৎবাদুল বারী আবু প্রমুখ।